1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিদেশ থেকে ‘রেমিটেন্স'এর ফলে দারিদ্র্য হ্রাস পেলো নেপালে

১৪ নভেম্বর ২০১১

নেপালে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে৷ তার কারণ ১৯৯৫ সালের তুলনায়, নেপালে এখন প্রায় ৩৩ শতাংশ বেশি মানুষ বিদেশে কর্মরত৷ তাই রেমিটেন্স-এর টাকা নেপালের জন্য বয়ে নিয়ে এসেছে শুভ সংকেত৷

https://p.dw.com/p/13ANQ
ব্রিটেন সহ একাধিক দেশের সেনাবাহিনীতে সক্রিয় নেপালের গোর্খা সৈন্যছবি: picture-alliance/dpa

নভেম্বর মাসের কুয়াশাছন্ন একটি সকাল৷ রাজধানী কাঠমান্ডুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে ফুটপাথের ওপর বসেই পাসপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে শোভা চৌধুরী৷ গায়ে হাল্কা একটা শাল জড়ানো৷ তাই নাকটা ঠান্ডায় টকটকে লাল হয়ে উঠেছে৷ কিন্তু তারপরও, ২০ বছর বয়সী শোভার চোখটা স্বপ্নময়...ভবিষ্যতের স্বপ্নে ভরা৷

পাসপোর্ট'টা হাতে আসলেই কুয়েত-এ একটা চাকরির জন্য দরখাস্ত করবে সে৷ মজার বিষয়, বিশ্ব মানচিত্রে কুয়েত যে আসলে কোথায় – সেটা দেখাতেই পারবে না শোভা৷ জানেই না সে৷ কিন্তু এটা জানে যে, একবার সেখানে যেতে পারলে নিজ পরিবারের পুরো দায়িত্বটা সে ঠিক নিতে পারবে৷ শোভার কথায়, ‘‘আমার গ্রামের অনেক মেয়েই এখন কুয়েতে চাকরি করে বাড়িতে টাকা পাঠাচ্ছে৷ সংসার চালাচ্ছে৷ আশা করছি, আমিও সেটা করতে পারবো৷''

Sheni Chaudary Nepal
নেপালের গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্য এক বড় সমস্যাছবি: 2010 Reese Erlich

শোভার মতো নেপালের অসংখ্য তরুণ-তরুণী একটি সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য প্রতিদিনই ভীড় করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে৷ তাদের অধিকাংশই খুব গরিব ঘরের ছেলে-মেয়ে৷ যাদের লক্ষ্য একটাই৷ যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদেশে যাওয়া এবং সেখান থেকে বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজনের জন্য টাকা পাঠানো – একটা উন্নততর জীবনের সন্ধান দেওয়া৷

বাস্তবে ঘটছেও ঠিক তাই৷ সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, নেপালের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ বিদেশ থেকে টাকা পেয়ে থাকে৷ এই যেমন, ২৫ বছর বয়স্ক রাজেন্দ্র নাগারকোটি৷ মাত্র দু'বছর আগেও কাঠমান্ডুর একটা স্কুলে শিক্ষকের চাকরি করতেন তিনি৷ যা আয় হতো, তাতে সংসার চলতো না৷ এখন সৌদি আরবে সাধারণ ‘ওয়েটার'-এর চাকরি করেন রাজেন্দ্র৷ কিন্তু তারপরও, বছরে প্রায় এক লক্ষ টাকা বাড়িতে মায়ের কাছে পাঠান তিনি৷ পাশাপাশি সঞ্চয়ও করেন৷

সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০১০ সালে প্রায় ২৫৯ বিলিয়ন রুপি দেশের মাটিতে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে নেপালিরা৷ অথচ মাত্র ১৫ বছর আগেও, সেখানে বৈদেশিক রেমিটেন্স-এর পরিমাণ ছিল মাত্র ১৩ বিলিয়ন নেপালি রুপি৷

Maoistische Rebellen in Nepal
সরকারি উদাসীনতার কারণে মাওবাদীরা গ্রামাঞ্চলে বেশ সমর্থন পেয়েছিলছবি: AP

স্বাভাবিকভাবেই, এই অতিরিক্ত অর্থ অনেক পরিবারকেই স্বচ্ছলতার মুখ দেখাতে সক্ষম হয়েছে৷ জানালেন ‘ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিশন'-এর ভাইস-চেয়ারম্যান জগদীশ চন্দ্র৷ জানা গেল, এই মুহূর্তে নেপালের মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করছে৷ যা কিনা ২০০৪ সালের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ কম৷ তার মানে, রেমিটেন্স বৃদ্ধির সঙ্গে দেশে দরিদ্র জনসাধারণের সংখ্যাও হ্রাস পাচ্ছে নেপালে৷

তবে এই সব অর্থ যদি সত্যিকারভাবে কোনো কাজে লাগানো না যায়, তাহলে তা অর্থনীতিতে কোনো বড় ধরণের প্রভাব ফেলতে পারবে না৷ তাই রেমিটেন্স-এর অর্থ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার করা প্রয়োজন৷ প্রয়োজন প্রবাসীদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়াও৷ বললেন জগদীশ চন্দ্র৷

প্রসঙ্গত, রেমিটেন্স-কে অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে বাংলাদেশেও৷ ২০১০ সালে নিম্ন আয়ের ৪০টি দেশে মোট বৈদেশিক মুদ্রা আসে দু'হাজার ৪০০ কোটি ডলার৷ এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশেই এসে পৌঁছায় এক হাজার ১০০ কোটি ডলার৷ বাংলাদেশের পরই রয়েছে নেপাল৷ তারপর তাজিকিস্তান ও কেনিয়া৷

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য