বিদেশ থেকে ‘রেমিটেন্স'এর ফলে দারিদ্র্য হ্রাস পেলো নেপালে
১৪ নভেম্বর ২০১১নভেম্বর মাসের কুয়াশাছন্ন একটি সকাল৷ রাজধানী কাঠমান্ডুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে ফুটপাথের ওপর বসেই পাসপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে শোভা চৌধুরী৷ গায়ে হাল্কা একটা শাল জড়ানো৷ তাই নাকটা ঠান্ডায় টকটকে লাল হয়ে উঠেছে৷ কিন্তু তারপরও, ২০ বছর বয়সী শোভার চোখটা স্বপ্নময়...ভবিষ্যতের স্বপ্নে ভরা৷
পাসপোর্ট'টা হাতে আসলেই কুয়েত-এ একটা চাকরির জন্য দরখাস্ত করবে সে৷ মজার বিষয়, বিশ্ব মানচিত্রে কুয়েত যে আসলে কোথায় – সেটা দেখাতেই পারবে না শোভা৷ জানেই না সে৷ কিন্তু এটা জানে যে, একবার সেখানে যেতে পারলে নিজ পরিবারের পুরো দায়িত্বটা সে ঠিক নিতে পারবে৷ শোভার কথায়, ‘‘আমার গ্রামের অনেক মেয়েই এখন কুয়েতে চাকরি করে বাড়িতে টাকা পাঠাচ্ছে৷ সংসার চালাচ্ছে৷ আশা করছি, আমিও সেটা করতে পারবো৷''
শোভার মতো নেপালের অসংখ্য তরুণ-তরুণী একটি সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য প্রতিদিনই ভীড় করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে৷ তাদের অধিকাংশই খুব গরিব ঘরের ছেলে-মেয়ে৷ যাদের লক্ষ্য একটাই৷ যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদেশে যাওয়া এবং সেখান থেকে বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজনের জন্য টাকা পাঠানো – একটা উন্নততর জীবনের সন্ধান দেওয়া৷
বাস্তবে ঘটছেও ঠিক তাই৷ সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, নেপালের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ বিদেশ থেকে টাকা পেয়ে থাকে৷ এই যেমন, ২৫ বছর বয়স্ক রাজেন্দ্র নাগারকোটি৷ মাত্র দু'বছর আগেও কাঠমান্ডুর একটা স্কুলে শিক্ষকের চাকরি করতেন তিনি৷ যা আয় হতো, তাতে সংসার চলতো না৷ এখন সৌদি আরবে সাধারণ ‘ওয়েটার'-এর চাকরি করেন রাজেন্দ্র৷ কিন্তু তারপরও, বছরে প্রায় এক লক্ষ টাকা বাড়িতে মায়ের কাছে পাঠান তিনি৷ পাশাপাশি সঞ্চয়ও করেন৷
সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০১০ সালে প্রায় ২৫৯ বিলিয়ন রুপি দেশের মাটিতে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে নেপালিরা৷ অথচ মাত্র ১৫ বছর আগেও, সেখানে বৈদেশিক রেমিটেন্স-এর পরিমাণ ছিল মাত্র ১৩ বিলিয়ন নেপালি রুপি৷
স্বাভাবিকভাবেই, এই অতিরিক্ত অর্থ অনেক পরিবারকেই স্বচ্ছলতার মুখ দেখাতে সক্ষম হয়েছে৷ জানালেন ‘ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিশন'-এর ভাইস-চেয়ারম্যান জগদীশ চন্দ্র৷ জানা গেল, এই মুহূর্তে নেপালের মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করছে৷ যা কিনা ২০০৪ সালের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ কম৷ তার মানে, রেমিটেন্স বৃদ্ধির সঙ্গে দেশে দরিদ্র জনসাধারণের সংখ্যাও হ্রাস পাচ্ছে নেপালে৷
তবে এই সব অর্থ যদি সত্যিকারভাবে কোনো কাজে লাগানো না যায়, তাহলে তা অর্থনীতিতে কোনো বড় ধরণের প্রভাব ফেলতে পারবে না৷ তাই রেমিটেন্স-এর অর্থ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার করা প্রয়োজন৷ প্রয়োজন প্রবাসীদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়াও৷ বললেন জগদীশ চন্দ্র৷
প্রসঙ্গত, রেমিটেন্স-কে অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে বাংলাদেশেও৷ ২০১০ সালে নিম্ন আয়ের ৪০টি দেশে মোট বৈদেশিক মুদ্রা আসে দু'হাজার ৪০০ কোটি ডলার৷ এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশেই এসে পৌঁছায় এক হাজার ১০০ কোটি ডলার৷ বাংলাদেশের পরই রয়েছে নেপাল৷ তারপর তাজিকিস্তান ও কেনিয়া৷
প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক