সাংবাদিকদের নজরদারির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার!
২০ মে ২০১৭সূত্র জানায়, ওই আদেশটি সমন্বিতভাবে না হওয়ায় প্রত্যাহার করা হয়৷
চলতি বছরের প্রথমদিকে কিছু বাংলাদেশি সাংবাদিকের পাকিস্তান সফরের ঘটনানিয়েই মূলত বিষয়টির সূত্রপাত৷ পাকিস্তান সরকারের আমন্ত্রণে সেখানে নিয়ে সাংবাদিকদের কেউ কেউ ‘দেশবিরোধী' কাজে লিপ্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ৷ আর এই অভিযোগ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালায় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা ও বিদেশগামী সাংবাদিকদের ওপর নজরদারির সুপারিশ করা হয়৷
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘‘গত ৩০শে মার্চ কমিটির ১২তম বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন কমিটির সদস্য মাহজাবিন খালেদ৷ তিনি বলেছেন গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশন কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি সাংবাদিককে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানায়৷ এসব সাংবাদিক বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ করে অপপ্রচার চালাচ্ছে৷ গণমাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী কথাবার্তাসহ গণহত্যা বিষয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছে৷''
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালায় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, ‘‘সাংবাদিকদের বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে কড়াকড়ি করা যায় না৷ তবে কোনো সাংবাদিক বিদেশে গিয়ে দেশবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হয় কিনা, সে বিষয়ে খোঁজখবর রাখা বা নজরদারি করা বাঞ্ছনীয়৷''
এরপর গত বুধবার কমিটির ওই সুপারিশের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (বহিঃপ্রচার) স্বাক্ষরিত একটি আদেশ বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাস ও মিশনে পাঠান হয়৷ আদেশে বলা হয়, ‘‘যদি কোনো সাংবাদিক বিদেশে দেশবিরোধী কাজে লিপ্ত হন, তবে তাকে চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয়কে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে৷''
আদেশে আরো বলা হয়েছিল, ‘‘সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে কোনো সাংবাদিক বিদেশে গিয়ে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে কিনা, সে সম্পর্কে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপরিশ করা হয়৷ সংসদীয় কমিটি বিদেশে ভ্রমণরত সাংবাদিকদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷''
আদেশের খবর জানার পর সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল৷ বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এই আদেশ কোনোভাবেই সম্মানজনক নয়৷ এই আদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে না৷ সাংবাদিকরা দেশের ভাবমূর্তিবিরোধী কোনো কাজ করেন না৷ কেউ যদি করে থাকেন তারা সাংবাদিক নন৷ তারা সাংবাদিকের ছদ্মবেশধারী রাজনৈতিক দলের কর্মী৷ ঢালাওভাবে সাংবাদিকদের দায়ী করে এধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়৷ কেউ কিছু করে থাকলে তাদের তথ্য প্রকাশ করা হোক৷ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক৷ সাংবাদিকদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার এই প্রবণতা নিন্দনীয়৷''
আর একুশে টেলিভিশনের হেড অব নিউজ রাশেদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের জন্য হয়তো একটা সতর্কবার্তা হতে পার৷ তবে এটা আলাদাভাবে সাংবাদিকদের জন্য কেন? এটাতো সবার জন্যই হতে পারে৷''
বুধবার ওই আদেশ জারির পর বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন,‘‘আমি সার্কুলার দেখিনি, দেখব এটা৷''
এই আলোচনার মধ্যে তিনদিনের মাথায় শুক্রবার আদেশটি প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে৷ এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে কারো বক্তব্য জানা যায়নি৷ তবে দৈনিক ইত্তেফাকের ডিপ্লোম্যাটিক এডিটর মাঈনুল আলম ডয়চে ভেলেকে প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের জন্য এই আদেশটি ছিল বৈষম্যমূলক৷ সংসদীয় কমিটির সুপারিশে সম্প্রতি কিছু সাংবাদিকের পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ সফরের প্রেক্ষাপটে এই আদেশ দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে না জানিয়ে এই আদেশ পাঠানো হয়েছিল বিদেশে বাংলাদেশের প্রায় ৫০টি দূতাবাস ও মিশনে৷ তিনি এই আদেশের বিষয়টি জানতেন না বলে আমাদের জানান৷ তিনি সাংবাদিকরা কোথাও বিদেশ সফরে বাধার মুখে পড়লে তাকে জানাতে বলেছেন৷''
তিনি জানান, ‘‘আদেশেটি প্রত্যাহারে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে আদেশটি যথাযথভাবে সমন্বয় করা হয়নি৷''
এদিকে একাধিক সূত্র জানায়, কেবল সাংবাদিকদের জন্য এই আদেশ জারি করায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রশ্নের মুখে পড়ে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য এটা ছিল বিব্রতকর৷ তাই আদেশটি প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ তবে যে কেউ দেশের বাইরে গিয়ে দেশবিরোধী কোনো কাজ করছেন কিনা তা নজরদারির মধ্যেই থাকবে৷ বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যের ব্যাপারে খেয়াল রাখবে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনগুলো৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷