1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যভারত

বিদেশে পাচার করা টাকার অঙ্ক শুনলে মাথা ঘুরে যায়

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড়
২৬ জানুয়ারি ২০২৪

মাঝেমধ্য়ে শোনা যায়, কালো টাকা উদ্ধার হয়েছে। বিদেশে পাচার করা টাকা দেশে ফিরছে। কিন্তু সে তো সিন্ধুর বিন্দুমাত্র।

https://p.dw.com/p/4bgSw
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দেয়াললিখন
পশ্চিমবঙ্গে কিছুদিন আগে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে তল্লাশি চালাতেই পাওয়া যাচ্ছিল লাখ লাখ টাকাছবি: Payel Samanta/DW

টাকা বড় বিষম বস্তু, যার কাছে থাকে না, তার আক্ষেপের শেষ নেই৷ যাদের কাছে অঢেল থাকে, তাদের আবার ভাবতে হয়, অত টাকা রাখি কোথায়? খুব বেশি টাকা থাকলে, তার মধ্য়ে হামেশাই অসততার মিশেল থাকে। কর ফাঁকি দেয়া টাকা, ঘুসের টাকা, কালো টাকা। এমনিতে টাকার গায়ে সাদা, কালো, লাল কোনো রং থাকে না। কিন্তু সবকিছু তো এরকম সাদা চোখে দেখা যায় না। কীভাবে সেই টাকা আসছে তার উপর নির্ভর করে তার রংটা কেমন।

পশ্চিমবঙ্গে শিল্পস্থাপনে মরিয়া হয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, তিনি টাকার কোনো রং দেখবেন না। আবার সেই পশ্চিমবঙ্গে কিছুদিন আগে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে তল্লাশি চালাতেই পাওয়া যাচ্ছিল লাখ লাখ টাকা। আবার ঝাড়খণ্ডে কংগ্রেসের এক বিধায়কের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৩৫৩ কোটি টাকা। পাঁচদিন ধরে ১০টা মেশিন সমানে টাকা গুণেছে। এই টাকার তো রং দেখতেই হয়।

আবার যে টাকা বিদেশে পাচার করে দেয়া হয়, তার রংও তো দেখতে হয়। দেশে কর ফাঁকি দিতে অথবা  টাকার উৎস গোপন রাখতে হবে বলেই তো বিদেশের নিরাপদ আশ্রয়ে পঠিয়ে দেয়া হচ্ছে সেই টাকা। সে তো একশ, দুইশ বা হাজার হাজার অথবা লাখ লাখ টাকা নয়। স্ক্রোলের একটি রিপোর্ট বলছে, কালো টাকা নিয়ে একটি বই লিখেছেন আর. বৈদ্যনাথন। সেখানে তিনি বলেছেন, সুইস ব্যাংকসহ বিদেশের নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা ভারতীয় অর্থের পরিমাণ একশ লাখ কোটি থেকে ১৮০ লাখ কোটি পর্যন্ত হতে পারে।

ভারতের ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেট ছিল ৪৫ লাখ কোটি টাকার। তাহলে প্রায় তিন অর্থ বছরের ভারতীয় বাজেটের সমান অর্থ বিদেশে পাচার করে দেয়া হয়েছে। বইতে বলা হয়েছে, কালো টাকার পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, তার একটা ভগ্লাংশও বিদেশ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

ওই বইতে একটি উদাহরণ দেয়া হয়েছে। প্রয়াত আইনজীবী ও সাংসদ রাম জেঠমালানির করা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের কাছে ভারত সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, হাসান আলি খান, তার স্ত্রী ও অন্যদের কাছ থেকে ৭১ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকার কর দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। বছরে এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার আয় হলে এই করের দাবি করা যায়। সেবছর ভারতের সব মানুষের মোট আয় ছিল ৬০ লাখ কোটি টাকা।

এর পরের কাহিনি আরো সাংঘাতিক। ২০০৭ সালে সুইস কর্তৃপক্ষ একটি নিউজ ম্যাগাজিনকে জানিয়েছিল, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ হাসান আলি খানের মামলায় আইনি সহযোগিতা চেয়ে যে নথি দিয়েছিল, তা বৈধ নয়। সুইস কর্তৃপক্ষ আরো তথ্য চেয়েছিল, কন্তু তা ভারত দেয়নি।

ওই বইতেই বলা হয়েছে, উইকিলিক্স খ্য়াত আসাঞ্জ ভারতের একটি টিভি চ্য়ানেলকে বলেছিলেন, সুইস ব্যাংকে সবচেয়ে বেশি টাকা রেখেছে ভারতীয়রা।

২০১৪ সালে অ্যাসেসিয়েটেড চেম্বার্স অ্যান্ড কমার্স (অ্যাসোচেম) কালো টাকা নিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করে। সেখানে বলা হয়েছে, দুই ট্রিলিয়ন ডলারের কালো টাকা বিদেশে পাচার করে দেয়া হয়েছে। এক ট্রিলিয়ন মানে একের পর ১২টা শূন্য। ডলার হলে তাকে আরো ৯০ টাকা দিয়ে গুণ করতে হবে। ফলে সংখ্য়াটা মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।

মাঝখানে কালো টাকা নিয়ে খুব হইচই হচ্ছিল, সংসদে বারবার দবি উঠছিল, বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরাতে হবে, বিদেশের অ্য়াকাউন্টে না জানিয়ে যে অর্থ রাখা হয়েছে, তার হিসাব সরকারকে দিতে হবে। তখন সরকার জানায়, সুইস ব্য়াংকের নিয়ম ও বিচারাধীন বিষয় বলে ওই সব তথ্য জানানো যাবে না। অনেক বিতর্ক, প্রশ্ন, চাপের পর কয়েকটি নাম প্রকাশ করা হয়েছিল। তা সাগরের এক বিন্দু জলও নয়।

কোথা থেকে আসে এই টাকা?

আমাদের মতো আদার ব্যাপারীরাও একটা কথা বোঝে। এই যে কিছু হলেই কাটমানির কথা আসে, কাটমানি ছাড়া যে সরকারি কোনো কাজ হয় না, সেই টাকাটা তো কোথাও রাখতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের কথাই ভাবুন। এই যে নিয়োগ কেলেঙ্কারি, প্রতিটি নিয়োগের ক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকা, এই যে সারদা কেলেঙ্কারি, হাজার হাজার কোটি টাকার নয়ছয়, এই যে তোলাবাজি, সেই টাকাটা তো কোথাও না কোথাও যাবে। গরু পাচার করেই তো কোটি কোটি টাকার কামাই হয়েছে। এই লাখ বা কোটি টাকা দিয়ে কী হবে? বাড়ি, জমি, আবাসন, হোটেল, রোস্তোরাঁয় বিনিয়োগ করা হবে।

এর থেকেও বড় অঙ্ক হলে বড় প্রকল্পে লাগানো হবে। তার থেকেও বড় অঙ্ক হলে বিদেশে পাচার করতে হবে। লাখ লাখ বা হাজার হাজার কোটি টাকার মামলা হলে তা কি দেশে রাখাটা নিরাপদ? তার থেকে ভালো সুইস বা অন্য কোনো দেশের নিরাপদ ব্যাংকে রাখা ভালো।

এই পরিমাণ অর্থ যদি দেশে থাকতো এবং দেশের অর্থনীতির মধ্য়ে থাকতো, তাহলে ভারত ও ভারতবাসীর কতটা সুবিধা হতো তা বলার জন্য অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার হয় না। সরকার ন্য়ায্য করের টাকা পাচ্ছে না। জিনিসের দাম বাড়ছে। দুর্নীতির রমরমা হচ্ছে। যে টাকাটা দেশের মধ্য়ে থাকলে ভারত অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে যেতো, সেটা পড়ে থাকছে বিদেশের ব্যাংকে।

এই কালো টাকা উদ্ধারের জন্য ২০১৬ সালে নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বাজার থেকে পাঁচশ ও এক হাজার টাকার নোট প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছিল। পাঁচশ ও দুই হাজার টাকার নোট চালু হলো। সবাইকে পুরোনো নোট ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা করতে হলো। দেশের সব মানুষ তখন ব্যাংকের সামনে লাইন দিয়েই সময় কাটিয়েছেন। শেষে দেখা গেল, কালো টাকা উদ্ধারের কাজটা বিশেষ কিছু এগোয়নি।

আজ নোটবন্দির আট বছর পরও বিদেশ থেকে কাল টাকা উদ্ধারের কাজ খুব বেশি এগিয়েছে কি? মনে হয় না। তা হলে?

বিশ্বাস করুন এই প্রশ্নের জবাব আমার অন্তত জানা নেই। বিশেষজ্ঞরা অনেক তত্ত্বকথা শোনাতে পারেন, অনেক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করতে পারেন, রাজনীতিবিদরা অনেক স্বপ্ন দেখাতে পারেন। কিন্তু বেশ কয়েক দশক ধরে তো এই অবস্থাই দেখছি, কালো টাকা, বিদেশে টাকা পাচারের ছবিতে তো কোনো বদল হচ্ছে না।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য