বিদ্রোহ পরবর্তী টিউনিশিয়া কেমন আছে?
আরব বসন্তের শুরু টিউনিশিয়া থেকে৷ বেকারত্বের উচ্চহার, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, দুর্নীতি ইত্যাদির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল দেশের মানুষ৷ সফলও হয়েছিল৷ কিন্তু এখন কেমন আছে দেশটি?
আন্দোলন
পোস্টারের ছবিতে যাঁকে দেখছেন সেই মোহামেদ বুয়াজিজির আত্মহত্যার পর সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল৷ বুয়াজিজি ফুটপাতে ব্যবসা করতেন৷ ২০১০ সালের ১৭ ডিসম্বের সকালে সরকারি এক কর্মচারী তাঁর বিক্রিপণ্য বাজেয়াপ্ত করায় এবং এই বিষয়ে বুয়াজিজি কোথাও অভিযোগ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর আত্মহত্যা করেছিলেন৷ এরপর আন্দোলন শুরু হলে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিনে এল আবিদিন বেন আলি৷ তিনি ২৩ বছর ক্ষমতায় ছিলেন৷
বাকস্বাধীনতা
প্রেসিডেন্ট বেন আলির বিরুদ্ধে আন্দোলনের একটি অন্যতম কারণ ছিল বাকস্বাধীনতার অভাব৷ তবে বিদ্রোহ সফল হওয়ায় এখন মন খুলে কথা বলা যাচ্ছে বলে টিউিশিয়ার অনেক নাগরিক মনে করছেন৷ ছবিতে রাজধানী টিউনিশের একটি রেস্তোরাঁ দেখা যাচ্ছে৷ সেখানে বসে ক্রেতারা আলোচনা ও বিতর্কে অংশ নিতে পারছেন৷
রাজনৈতিক হত্যা
ধর্মনিরপেক্ষতার সমর্থক দুই রাজনীতিবিদ মোহামেদ ব্রাহমি ও শোকরি বেলাইদকে ২০১৩ সালে হত্যা করা হয়৷ ঘটনাটি সেইসময় পুরো দেশকে শোকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল৷ এখন সুবিচারের দাবিতে টিউনিশে বিক্ষোভের ঘটনা নিয়মিত হয়ে উঠেছে৷
আইএস-এর প্রভাব
দেশটির সীমান্তে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এর বিরুদ্ধে টিউনিশিয়াকে লড়তে হয়েছে৷ এছাড়া ঐ জঙ্গি গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করাদের একটি বড় অংশ টিউনিশিয়া থেকে গিয়েছে৷ ২০১৫ সালে দেশটিতে দুটো বড় সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল৷ এর একটি হয়েছিল জাতীয় জাদুঘরে (ছবি)৷ এতে প্রাণ যাওয়া ২৪ জনের মধ্যে ২০ জনই ছিলেন পর্যটক৷ আরেক হামলা হয়েছিল সুস নামের এক পর্যটন এলাকায়৷ এই দুই হামলার পর দেশটির পর্যটন শিল্প ক্ষতির মুখে পড়েছে৷
ফুটবলের জনপ্রিয়তা
টিউনিশিয়ায় ফুটবল খুব জনপ্রিয়৷ সেটি নিয়ে নীতি নির্ধারকরাও এত ব্যস্ত থাকেন যে, বিদ্রোহ পরবর্তী রাজনীতি নিয়ে খুব একটা আলোচনা হচ্ছে না বলে অভিযোগ টিউনিশিয়ার কিছু তরুণের৷ ছবিতে দেয়ালে দুটি ফুটবল ক্লাবের সমর্থকদের কাণ্ডকীর্তি দেখা যাচ্ছে৷
নারী অধিকার
নারীর প্রতি সহিংসতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে গত ফেব্রুয়ারি থেকে একটি আইন কার্যকর হয়েছে৷ ছবিতে যাঁকে দেখছেন তাঁর নাম ওয়াফা ফ্রাউয়িস৷ ১৫ বছর বয়স থেকে তিনি নারী অধিকার নিয়ে কাজ করছেন৷ বিদ্রোহ পরবর্তী দেশের সংবিধান রচনায়ও তিনি অবদান রেখেছেন৷
উন্নত জীবনের প্রত্যাশা
আফ্রিকার অনেক দেশের মতো টিউনিশিয়া থেকেও অনেকে উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপ পাড়ি দিতে ইচ্ছুক৷ ২০১৭ সালে প্রায় ৬,০০০ টিউনিশীয় সাগর পাড়ি দিয়ে ইটালি পৌঁছেছিলেন৷ ২০১১ সালের বিদ্রোহের পর এই সংখ্যাটি সর্বোচ্চ৷
মৃত্যু
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে টিউনিশিয়ার শত শত নাগরিকের প্রাণহানি হচ্ছে৷ ফলে দেশটির উপকূলের অনেক স্থানে চিহ্নবিহীন কবরস্থানের দেখা পাওয়া যাচ্ছে৷