1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিধিনিষেধ মেনে চলছি সুদিনের আশায়

৬ অক্টোবর ২০২০

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করেছিলেন৷ কিন্তু অনেকেই সেটাকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি, ফলে যা হবার তা-ই হয়েছে, আবার বাড়ছে সংক্রমণের হার৷

https://p.dw.com/p/3jVlm
করোনাকালীন ডয়চে ভেলের কার্যালয় যেভাবে চলছেছবি: DW/P. Böll

এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে কর্মীদের আরো কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জরুরি আবেদন জানিয়েছে ডয়চে ভেলে কর্তৃপক্ষ৷

সাবধানের মার নেই- কথাটা যে কতটা সত্যি তা যেন করোনা ভাইরাস আমাদের ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছে৷ করোনা শুরু হওয়ার পরে বেশ কিছুদিন লক্ষ্য করেছি, সবার চোখেমুখে কেমন এক আতঙ্কের ছাপ৷ আবার লকডাউন তুলে নেওয়ার সাথে সাথে সবকিছু যেন স্বাভাবিক হয়ে গেছে এমন ভাব দেখা গেছে অনেকের মধ্যেই৷

ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের মতো এখন জার্মানিতেও আবার বাড়ছে সংক্রমণ৷ গত সপ্তাহে সারা দেশে নতুন সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ হাজার ৫০০ হয়েছে৷ এমনকি জার্মানির রাজধানী বার্লিনসহ কয়েকটি স্থানে সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সে জায়গাগুলোকে এখন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ চারপাশের করোনা পরিস্থিতিই দিনদিন খারাপ

হচ্ছে৷ এই পরিস্থিতে জার্মানির আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট টিমের প্রধান আমাদের সকল কর্মীকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আবেদন জানিয়ে একটি জরুরি ই-মেইল পাঠিয়েছেন৷

ই-মেইলের মূল বক্তব্য অনেকটা এরকম:

১. আমরা ডয়চে ভেলের কর্মী এবং তাদের পরিবারের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন৷ এবং ডয়চে ভেলের অনুষ্ঠান পরিচালনার কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা দায়বদ্ধ৷

২. যেসব কর্মীর অনুষ্ঠান প্রচারের কাজে অফিসে উপস্থিত থাকা জরুরি নয়, তারা বাড়ি থেকেই কাজ করবেন৷ এবং করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অংশ হিসেবেই এটাকে দেখুন৷

৩. ডেস্কে বসে কাজ করার সময় ছাড়া সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকুন৷ স্টুডিও, নিউজ রুম, ক্যান্টিন, চা-কিচেন, টয়লেট, ক্যান্টিন সর্বত্র৷ এমনকি অফিস বিল্ডিংয়ের ভেতরে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সময়ও নাক-মুখ ঢেকে রাখুন৷

এই ই-মেইলের সাথে করোনার বিধিনিষেধ সম্বলিত বাড়তি তথ্যের জন্য বেশকিছু লিঙ্কও দেওয়া হয়েছে৷ করোনা ভাইরাসের প্রথম লক্ষণগুলো কী বা আক্রান্ত হলে কী করা উচিত সে ব্যাপারে সহায়তার জন্য রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের লিংক রয়েছে৷

ডয়চে ভেলের অফিসিয়াল ট্যুরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বা দেশ সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে এবং এ ব্যাপারে ডয়চে ভেলের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট টিমের সাথে পরামর্শের অনুরোধ জানানো হয়েছে৷

ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে কোনো সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে গেলে কর্মীদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত সেসব বিষয়ে তথ্যের লিংক দেওয়া হয়েছে৷

নিয়ম-কানুন না মানলে কখনো কোনো পরিকল্পনা কার্যকর হয় না, তাই সকল কর্মীকে করোনা স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে ইমেল শেষ করেছেন ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট টিমের প্রধান৷

এবং শীতকালে কর্মীরা কিভাবে করোনা মহামারি মোকাবেলা করবেন আগামীতে তা-ও জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কার কথা বিশেষজ্ঞরা অনেক আগেই বলেছিলেন৷ তাছাড়া জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বারবার বলেছেন৷ জার্মানির কোনো কোনো রাজ্যে মাস্ক পরা তুলে নেওয়া নিয়ে নানা বিতর্ক হলেও ম্যার্কেলের কড়া নিষেধে শেষ পর্যন্ত মাস্ক পরা বাধ্যতামূলকই থেকেছে৷ কিন্তু সরকার বা কর্তৃপক্ষ কোনো নিয়ম বেঁধে দিলেই তো আর সব শেষ নয়৷ আমার মনে হয়, করোনার স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে মানুষ আরো একটু সচেতন হলে হয়তো এখন আবার জার্মানিতে এতটা বাড়াবাড়ি হতো না৷

তখন মার্চের মাঝামাঝি অফিসে কাজ করছিলাম, হঠাৎ করেই জানানো হলো বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করতে হবে৷ মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল৷ যা-ই হোক, হোম অফিস শুরু হলো৷ একেবারে নতুন পরিস্থিতি৷ কেমন যেন এক ছাড়া ছাড়া ভাব, তবে কাজ চলছিলো৷ তখন আমি স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারান্টিনে৷ কোথাও যাই না, বাড়িতে কেউ আসে না , প্রয়োজনীয় খাবার বাসায় থাকায় দোকানেও যাইনি অনেকদিন৷ সেই সময় আমাদের মেয়ে ফল, দুধ বা জরুরি টুকটাক কেনাকাটা করে আমাদের বাসার সামনে রেখে ফোন করে জানিয়ে দেওয়ার পরে আমি সেসব ঘরে তুলেছি৷ এ কথা শুনে তখন কিন্তু অনেকেই হাসাহাসি করেছে৷ বেশি জার্মান হয়ে গেছি- এমন কথাও শুনতে হয়েছে আমাকে ৷ নিজের সদাই নিজেই দেখে শুনে কিনতে ভালোবাসি, তাই আস্তে আস্তে বাজারে যাওয়া শুরু করেছি, তবে আগের চেয়ে অনেক কম যাই৷ কারণ, মুখে মাস্ক, হাতে দস্তানা বেশিক্ষণ পরে থাকতে অস্বস্তি বোধ করি৷ তাই লিস্ট দেখে ঝটপট জিনিসগুলো কিনে বাসায় ফিরে আসি৷

Nurunnahar Sattar, DW-Mitarbeiterin Bengali Programm
নুরুননাহার সাত্তার, ডয়চে ভেলেছবি: DW/A. Islam

শুনলে হয়তো অনেকেই অবাক হবেন যে, গত সাত মাসে আমি কেবল একদিন বেড়াতে গেছি৷ সহকর্মীদের সাথে দেখা হবে এই ভালোলাগা থেকে সেখানে যাওয়া৷ এখনও পর্যন্ত আমি বাসায় কাউকে ডাকিনি শুধুমাত্র করোনা বিধিনিষেধ মেনে চলার কারণে৷ কোনো কোনো দাওয়াতে না যাওয়ার কারণে তারা মনঃক্ষুন্ন হয়েছেন, কিন্তু অনেক কষ্ট করেই নিজেকে দূরে রেখেছি৷ করোনাকালে বলতে গেলে আমাদের কোনো স্যোশাল লাইফ নেই, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে এর কোনো বিকল্পও যে নেই!

যদিও বাসায় থাকতে থাকতে একেবারে হাঁপিয়ে উঠেছি , অল্পতেই মেজাজ খারাপ হচ্ছে, কিন্তু কিছু তো করার নেই৷ করোনাকে জয় করতে হলে নিজের সাময়িক আনন্দ বা ভালো লাগাকে ত্যাগ করতেই হবে৷ করোনা ভাইরাস যে ভয়ঙ্কর ! কারো কাছে গেলে, কিংবা মাস্ক না পরলে যে কোনো জায়গায় যখন-তখন কাউকে আক্রমণ করতে পারে৷ এ সময়ে পার্লারগুলোতে করোনা ছড়ানোর ভয় অনেক বেশি৷ তাই বর্তমান পরিস্থিতি চিন্তা করে নিজে চুল কাটাতে পর্যন্ত যাইনি৷শেষমেষ নিজের চুল নিজেই গতকাল কেটে ফেললাম৷ আয়নায় দেখে তো মনে হলো প্রথমবার হিসেবে খুব খারাপ হয়নি!

আমি কতদিন অফিসে যাইনি, মাঝে মাঝে সত্যিই সহকর্মীদের সাথে কাজ করার ইচ্ছে জাগে৷তাছাড়া অফিসে কাজের পাশাপাশি সহকর্মীদের সাথে হৈচৈ করে দুপুরে ক্যান্টিনে খেতে যাওয়া, সময় পেলেই চা, কফি খাওয়া তো রয়েছেই৷ মিস করছি সবকিছু ! আগে সপ্তাহে অন্তত দুদিন বাইরে খেতে যেতাম আর গত কয়েক মাসে মাত্র দুদিন গেছি, সেটাও আবার বিশেষ উপলক্ষে৷ এসব ত্যাগ স্বীকার সকলের স্বার্থে৷ পরিস্থিতি অনেক সময় মানুষকে অনেক কিছুই করতে বাধ্য করে -আমরা এখন সেরকমই একটা সময় কাটাচ্ছি৷ নিজে সচেতন থাকুন , অন্যদের সচেতন থাকতে সহায়তা করুন ! সুদিন অবশ্যই আসবে -সেই আশায়৷