বিপজ্জনক বাড়িতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস
কলকাতাজুড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য বিপজ্জনক বাড়ি। যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। কী করছে পুরসভা?
পদে পদে বিপদ
প্রতি পদে বিপদ আর প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন মানুষ। কোথাও রাস্তার উপরে ঝুলছে পুরনো, বিপজ্জনক বাড়ির ভাঙা বারান্দা, কোথাও পুরনো বাড়ির গায়ে লাগানো লোহার শিক বেরিয়ে আছে। যে কোনও মুহূর্তে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে। আবার বহু জায়গায় বাড়ির বিভিন্ন অংশ ভেঙেও পড়েছে। বাড়ির যেটুকু অংশ এখনও দাঁড়িয়ে, তা থেকে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে বিদ্যুতের তার।
দুইহাজারের বেশি বিপজ্জনক বাড়ি
তিনশ বছরের শহর কলকাতায় পুরনো বাড়ির সংখ্যা অনেক। পুরসভার হিসাবে তা প্রায় দু’হাজার। সেগুলির মধ্যে বেশ কিছু 'বিপজ্জনক' এবং 'অতিবিপজ্জনক' বাড়ি রয়েছে। বর্ষাকাল চলছে, যেকোনও সময়ে ভেঙে পড়তে পারে বাড়িগুলি।
চিন্তিত পুরসভা
প্রবল বৃষ্টিতে শুধুমাত্র জমা জলের সমস্যাই নয়, কলকাতা পুরসভার উদ্বেগের একটি বড় কারণ উত্তর কলকাতায় ছড়িয়ে থাকা এই জরাজীর্ণ এবং বিপজ্জনক বাড়িগুলি। এই বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ ধরা পড়েছে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কণ্ঠে।
২১ নম্বর ওয়ার্ড
কলকাতা পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ঘুরলেই চোখে পড়বে এমন নানা বিপদের ছবি। এলাকার পুরপ্রতিনিধি মীরা হাজরা জানালেন, শুধুমাত্র তার ওয়ার্ডেই রয়েছে অন্তত ১০৮টি পুরনো, বিপজ্জনক বাড়ি।
মৃত্যু ফাঁদ
গতবছর বর্ষায় ভেঙে যায় এই বাড়িটির একাংশ। মারা যান এক দম্পতি। এখন আর কেউ এই বাড়িতে বসবাস করেন না। প্রাণভয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন বাড়ি থেকে।
অস্থায়ী আস্তানা
স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় বাড়ির একটি ফাঁকা অংশে বেড়া দিয়ে অস্থায়ী আস্তানা করে দেওয়া হয়েছিল। এখনও তারা সেখানেই আছেন।
পুরসভার নোটিস
পুরসভার বক্তব্য, প্রবল বৃষ্টিতে যে কোনও সময় পুরনো এবং বিপজ্জনক বাড়িগুলি ভেঙে পড়তে পারে। সব জায়গায় নোটিস দেওয়া সত্বেও কেউ বাড়ি খালি করতে চাইছেন না। বাড়ি ছাড়ার সঙ্গেসঙ্গেই ইভ্যাকুয়েশন সার্টিফিকেট কলকাতা পুরসভা দিয়ে দেবে। তাতেও তারা বিপজ্জনক বাড়ি ছাড়তে নারাজ বলে জানানো হচ্ছে পুরসভার পক্ষ থেকে।
সম্পত্তির প্রশ্ন
বিপদ মাথায় নিয়েই বছরের পর বছর ধরে জীর্ণ, বিপজ্জনক বাড়িতে বসবাস করে যাচ্ছেন বহু মানুষ। তাদের আশঙ্কা, “আজ যদি আমরা বাড়ি খালি করে দিই, তাহলে পরে আর তার অধিকার পাবো না।’’
মালিক নেই
বহু ক্ষেত্রেই পুরনো তথা জরাজীর্ণ বাড়িগুলির মালিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সে প্রসঙ্গে মেয়রের বক্তব্য, ‘‘অনেক জায়গায় মালিক রয়েছেন। আবার এমন অনেক পুরনো বাড়ির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে বাড়ির মালিকের সংখ্যা একাধিক। তবে যে সব বাড়ি ভেঙে পড়ছে, সেই সব বাড়ি আমরা ভেঙে দেব। প্রয়োজনে সেই জমিতেই আমরা ঘর বানিয়ে দেব, যাতে সেখানে তারা থাকতে পারেন।’’
শরিকি সমস্যা
একই বাড়ির অনেকগুলি শরিক থাকার কারণেও বাড়িগুলি ভগ্ন অবস্থায় দিনের পর দিন থেকে যাচ্ছে। একাধিক শরিক এবং একই বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে থাকা প্রচুর ভাড়াটে। নির্মাণসংস্থা এতগুলি মানুষকে পুনর্বাসন দিয়ে লাভের অঙ্ক ঘরে তুলতে পারবে না বলে পিছিয়ে যাচ্ছে, এমন যুক্তিও শোনা গেল কয়েকটি বাড়ির শরিকদের থেকে।
তৎপরতা কই?
কয়েকমাস আগেই কলকাতা পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডে বিপজ্জনক বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে। এর পরেই ওই ওয়ার্ডে ১০৮টি বিপজ্জনক বাড়ি চিহ্নিত হয়। তবে সেগুলি নিয়ে এখনও কোনও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে খবর নেই। যদিও গার্ডেনরিচ ও দমদমের ঘটনার পরে যেখানে পুর প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে, সেখানে কেন আগেই বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে তৎপর হল না পুরসভা, সেই প্রশ্ন উঠেছে।