বিপর্যয়ের সময়ে প্রাণ বাঁচাতে পারদর্শী রোবট
১৭ মে ২০২১৩৬টি জয়েন্ট থাকায় ‘স্নেক বট' বেশ নমনীয়৷ ফলে কঠিন বা দুর্গম জায়গায় চলাফেরা করতে অসুবিধা হয় না৷ এমনকি পাইপের মধ্য দিয়ে অথবা সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে চলার ক্ষমতাও তার আছে৷ বিপর্যয়ের সময়ে এমন সর্পিল রোবট মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক দল সেটি তৈরি করেছে৷
রোবট ডেভেলপার হিসেবে ফুমিটোশি মাটসুনো বলেন, ‘‘প্রথমত এই রোবট এমন সব জায়গায় কাজে লাগানো হয়, যেখানে ঝুঁকির আশঙ্কায় মানুষ প্রবেশ করতে পারে না, অথবা যেখানে মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ এই রোবটগুলি অক্সিজেন বা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ মাপতে পারে৷ তারপর সাহায্যকারী দল পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়৷ এমন রোবট কাজে লাগানোর আরেকটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি হলো যে সব জায়গা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ রোবট সেখানে ঢুকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে৷ অর্থাৎ এই সব রোবট মানুষের জন্য অসম্ভব বা বিপজ্জনক জায়গায় গিয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে৷''
উদ্ধারকার্যের সময় এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ জাপানে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মারাত্মক ঝুঁকি থাকে৷ প্রায় প্রতিদিনই ভূমিকম্প হয়৷ তার উপর টাইফুন, সুনামি ও অগ্নুৎপাতও ঘটে৷ ১৯৯৫ সালে কোবে শহরে ভূমিকম্পের পর থেকে বিজ্ঞানীরা বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ মাটসুনো বলেন, ‘‘আমি মূলত মহাকাশ অভিযানের জন্য রোবট তৈরি করতাম৷ তারপর গ্রেট হানশিন আওয়াচি ভূমিকম্পে আমার এক ছাত্রের মৃত্যুর পর আমি বিপর্যয়ের সময়ে ব্যবহারের উপযোগী রোবট নিয়ে গবেষণায় মন দিলাম৷''
এক কন্ট্রোলারের মাধ্যমে স্নেক রোবট চালনা করা হয়৷ সেটির মধ্যে একটি ক্যামেরা ও অনেক সেন্সরও রয়েছে৷ গবেষকদের নানা সম্ভাব্য পরিস্থিতির কথা ভাবতে হয়৷
জরুরি অবস্থায় জীবিত মানুষের খোঁজে রোবটটিকে পাইপের ভিতর অথবা বাইরের অংশ বেয়ে উপরে উঠতে হতে পারে৷ সেই ক্ষমতা তাই অত্যন্ত জরুরি৷ ফুমিটোশি মাটসুনো বলেন, ‘‘প্রথমদিকে আমি মানুষের উদ্ধারকার্যে রোবট তৈরির কথা ভেবেছিলাম৷ তারপর মত বদলালাম৷ বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বিপর্যয় ঘটলে মানুষের অবস্থান নির্ণয় করা বড় চ্যালেঞ্জ৷ উদ্ধারকর্মীরা আন্দাজে এখানে-সেখানে মাটি খুঁড়ে মানুষের খোঁজ করেন৷ কিন্তু সেই মূল্যবান সময় নষ্ট হলে মানুষের প্রাণ যেতে পারে৷''
এই রোবটটিকেও শুধু উদ্ধারকার্যে সহায়তার জন্য তৈরি করা হয়েছে৷ চার পায়ের সাহায্যে সেটি মানুষের জন্য দুর্গম জায়গায়ও পৌঁছে যায়৷ বহুমূখী হাতের সাহায্যে এই রোবট দরজা খুলতে ও কোনো বস্তু তুলে আনতে পারে৷
এমন সব রোবট এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে৷ তবে অদূর ভবিষ্যতে সেগুলি বিপর্যয়ের সময়ে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারবে৷
ডোরোটে গ্র্যুনার/এসবি