বিপ্লবের মহানায়ক ও ‘বাংলাদেশের বন্ধু’ ফিদেল কাস্ত্রো
কিউবা বিপ্লবের অবিসংবাদিত নেতা ফিদোল কাস্ত্রো আর নেই৷ ৯০ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন ‘বাংলাদেশে বন্ধু’ কাস্ত্রো৷ ছবিঘরে তাঁরই কিছু কথা ও ছবি...
এই তো সেদিন...
গত ১৩ আগস্টই তাঁর জন্মদিন উদযাপন করেছিল কিউবা৷ তাই হাভানার রাস্তার ধারের দোকানটির এই জানালাতেও ছিল তাঁর জন্য শুভকামনা, সেখানে লেখা, ‘ফিদেলের ৯০ এবং আরো অনেক দিন...৷’’ কিন্তু অনেকদিন নয়, মাত্র দেড় মাসের মধ্যেই চিরবিদায় নিলেন কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল আলেসান্দ্রো কাস্ত্রো রুজ৷ কিউবার সময় অনুযায়ী শুক্রবার রাতে রাজধানী হাভানায় প্রয়াণ হয়েছে তাঁর৷
কিউবার অন্য নাম ‘কাস্ত্রোর দেশ’
১৯৫৯ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত কিউবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কাস্ত্রো৷ তারপর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন প্রেসিডেন্ট৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন নেই, সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশে৷ কিন্তু পুঁজিবাদী বিশ্বের শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের পাশেই তাঁর নেতৃত্বে কিউবা এখনো অটল৷ ২০০৮ সালে রাষ্ট্র শাসনের ভার ভাই রাউল কাস্ত্রোকে দিয়ে অবসর জীবনই যাপন করছিলেন কাস্ত্রো৷
যুক্তরাষ্ট্রের ‘বন্ধু’ ছিলেন না
তাঁর নেতৃত্বে পথ চলতে শুরু করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে কখনো বন্ধুরাষ্ট্রের ভূমিকায় পায়নি কিউবা৷ ১৯৬১ সালে সম্পর্ক ছিন্ন করে কিউবার ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র৷ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে বৈরিতা৷ ওবামা দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে সম্পর্কোন্নয়নে উদ্যোগ নেন৷ তারই ফলশ্রুতিতে গত মার্চে কিউবা সফর করেন ওবামা৷ওপরের ছবিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট রৌহানির সঙ্গে কাস্ত্রো৷
যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্ক নিয়ে তাঁর অমর বাণী
ওবামার কিউবা সফরের আগে থেকেই আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্ক নিয়ে প্রায় চল্লিশ বছর আগে কাস্ত্রোর করা এক মন্তব্য নিয়ে চলছিল ব্যাপক আলোচনা৷ কাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট এলে এবং লাতিন আমেরিকার কেউ পোপ হলে যুক্তরাষ্ট্র ঠিকই কিউবার সঙ্গে আলোচনার জন্য এগিয়ে আসবে৷’’
ক্রীড়াপ্রেমী এবং মারাদোনার বন্ধু
খেলাধুলায় বেশি ঝোঁক থাকার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় কখনো বেশি মনযোগী হতে পারেননি ফিদেল কাস্ত্রো৷ পরে সাম্যবাদ কায়েমের স্বপ্ন তো আইন বিষয় নিয়ে লেখাপড়াও শেষ করতে দেয়নি৷ ফুটবল ভালোবাসতেন৷ সেই সুবাদে দিয়েগো মারাদোনার সঙ্গে গড়ে ওঠে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক৷ একবার মারাদোনা ভয়ঙ্কর অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য তাঁকে কিউবায় ডেকে নেন কাস্ত্রো৷ সুস্থ হয়েই দেশে ফিলেছিলেন মারাদোনা৷
বাংলাদেশের বন্ধু
একাত্তরে মুক্তিকামী বাঙালিদের পাশে ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো৷ তার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দেয়৷ কাস্ত্রোর মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শোক বার্তায় বলেছেন, ‘‘ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যু বিশ্ব রাজনীতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি৷ শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার সংগ্রামের কথা বিশ্ববাসী আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে৷’’
কাস্ত্রোর হিমালয় ‘বঙ্গবন্ধু’
১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর৷ বঙ্গবন্ধুকে আলিঙ্গন করে কাস্ত্রো সেদিন বলেছিলেন, ‘‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি৷ব্যক্তিত্ব এবং সাহসিকতায় এই মানুষটি হিমালয়ের মতো৷ আজ যেন আমার কাছ থেকে হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা হলো৷’’