তেলাপোকার সাথে পাল্লা দেয়া কঠিন
২৭ মে ২০১৩মিষ্টি-ময়দার সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি করে সেগুলো চৌকাঠের আশেপাশে রেখে দিলে পরদিন সকালে মৃত এবং মৃতপ্রায় তেলাপোকাদের যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের মতো পড়ে থাকতে দেখা যায়৷ এ তো আমরা অনেকেই ছেলেবেলায় দেখেছি৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় একটি অ্যাপার্টমেন্টের টেস্ট কিচেনে সেই ধরনের কোনো বিষের পরীক্ষা চালানো হচ্ছিল৷ হঠাৎ দেখা যায়, বিষে আর কাজ হচ্ছে না৷ তেলাপোকারা বহাল-তবিয়তে বংশবৃদ্ধি করে চলেছে৷ ব্যাপারটা কী হল? খুঁজে-পেতে, ভেবে-চিন্তে দেখা গেল, তেলাপোকারা সাবধান হয়ে গেছে৷ তারা বুঝতে পেরেছে, মেপল সিরাপ যতোই মিষ্টি হোক না কেন, তা খেলে প্রাণপাখি খাঁচাছাড়া হবার সম্ভাবনা৷ কাজেই তাদের মিষ্টির উপর বিরাগ জন্মে গেছে৷ ডায়াবেটিসের রোগীদের এতোটা আত্মসংযম থাকলে দুনিয়া থেকে ডায়াবেটিস রোগটাই উঠে যেতো!
ডিএনএ'র স্কুল
শুধু যে এক-আধটা বুদ্ধিমান তেলাপোকা মিষ্টি ছেড়েছে, এমন নয়৷ বছর পাঁচেকের মধ্যে এই তেলাপোকারা মিষ্টির যম থেকে এমনভাবে দলে দলে মিষ্টিবিদ্বেষী হয়ে পড়েছে যে, আদত বিষটার আর কোনো কার্যকারিতা নেই বললেই চলে৷ ওদিকে তোলাপোকাদের ছেলেমেয়েরা তো আর কিছু ইস্কুলে গিয়ে, পড়াশুনো করে এ সব জিনিষ শেখে না৷ তাদের স্কুল হল প্রথমে বড়দের কাছ থেকে দেখে; দ্বিতীয়ত যা শিখেছে, সেটা ডিএনএ'র মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে খালাস, যাতে সন্তান-সন্ততি এমএ-বিএ পাশ করেই জন্ম নেয়! একেই বলে বিবর্তন৷
নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটির এনটোমোলজিস্ট বা কীট বিশেষজ্ঞ জুলস সিলভারম্যান তেলাপোকাদের এই সর্বাধুনিক বিবর্তনের রহস্য ভেদ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তেলাপোকারা নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার ওস্তাদ৷ আমাদের সঙ্গে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় তারা ভালোই লড়ছে৷'' অস্ত্র প্রতিযোগিতার কথাই যখন উঠল, কতোবারই তো শোনা যায়, তেলাপোকারা নাকি পারমাণবিক যুদ্ধেও লুপ্ত হবে না, তাদের বাঁচার ক্ষমতা এমন৷
কী মজা! আরে থুঃ!
‘সায়েন্স' জার্নালে সিলভারম্যান ও তাঁর সহকর্মীরা তেলাপোকাদের এই জেনেটিক মিউটেশন দেখিয়েছেন৷ সাধারণ তেলাপোকাদের মধ্যে মেপল সিরাপের গ্লুকোজ এক ধরনের নিউরনকে সক্রিয় করে, যা মগজকে বলে, ‘‘কী মজা! মিষ্টি!'' বিবর্তনবাদী তেলাপোকাগুলোর ক্ষেত্রে যে নিউরনগুলি সক্রিয় হয়, তারা কিন্তু মগজকে বলে: ‘‘আরে থুঃ! ও একেবারে অখাদ্য!'' এই বিশেষ স্নায়ুটি শুধু ফ্লোরিডার তেলাপোকাদের মধ্যেই নয়, সুদূর পুয়ের্তো রিকো'র তেলাপোকাদের মধ্যেও পাওয়া গিয়েছে৷
কীট বিজ্ঞান যদি অত সোজা হতো, তা'হলে তো পৃথিবী কবেই তেলাপোকা মুক্ত হয়ে যেতো৷ কিন্তু নানা ফ্যাকড়া থেকে যাচ্ছে৷ তেলাপোকাদের ১৯টি দল অনুসন্ধান করে মাত্র একটি দলের মধ্যে এই মিষ্টিতে অরুচি দেখা গিয়েছে৷ সেটা বংশগত বৈশিষ্ট্যে পরিণত হতে তেলাপোকাদের ক' প্রজন্ম সময় লাগে, তাও জানা নেই৷ গ্লুকোজ-ত্যাগী তেলাপোকারা স্বচ্ছন্দে অন্য বিষ খেয়ে ফেলে৷ তেলাপোকাদের মধ্যে সাধারণভাবে কীটনাশক প্রতিরোধের শক্তি গড়ে উঠছে, ইত্যাদি, ইত্যাদি৷
ও হ্যাঁ, একটা শেষ খবর না দিলেই নয়৷ এই বিবর্তনবাদী তেলাপোকারা কিন্তু বড় অ্যামেরিকান তেলাপোকা নয়৷ এরা হল ছোট ‘জার্মান' তেলাপোকা, যারা সহজেই বাজারের থলেতে করে বাড়ি বা রান্নাঘরে গিয়ে হাজির হতে পারে৷ যেমন আমার বা আপনার!
এসি / এসবি (এপি)