বিমানেই উড়ছে ভাসমান মানমন্দির
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬দেখলে সাধারণ বিমান মনে হলেও এটি আসলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভাসমান মানমন্দির৷ নাম ‘সোফিয়া'৷ সেখান থেকে বিজ্ঞানীরা রাতের আকাশে উত্তাপের বিকিরণ পর্যবেক্ষণ করতে পারেন৷ বিমানে একটি বিশাল ইনফ্রারেড টেলিস্কোপও রয়েছে৷ সেটা কাজে লাগিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দূরের গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ পর্যবেক্ষণ করতে পারেন৷ বায়ুমণ্ডলে ১৪ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে সোফিয়া৷ নীচের স্তরে বাষ্প ইনফ্রারেড আলো গিলে ফেলে৷ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে পৌঁছালে সবকিছু স্পষ্ট দেখা যায়৷
ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ বিজ্ঞানীদের মহাজাগতিক ধুলার মেঘে উঁকি মারতে দেয়৷ মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতে নক্ষত্রের জন্মও পর্যবেক্ষণ করতে পারেন তাঁরা৷ হামবুর্গ শহরে লুফৎহানসা বিমান সংস্থার প্রকৌশল কেন্দ্রে সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণ চলছে৷ বোয়িং ৭৪৭এসপি বিমানটির বয়স প্রায় ৩৭ বছর৷ বিশাল উচ্চতায় উড়তে পারে সেটি৷ বিশেষজ্ঞদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ এক বিশাল চ্যালেঞ্জ৷ বিশেষ করে ১৭ টন ওজনের টেলিস্কোপটির কারণে বিমানটিকে ‘জ্যাক আপ' করা, অর্থাৎ তুলে ধরা সত্যি অ্যাডভেঞ্চারের মতো৷ লুফৎহানসা টেশনিক-এর আন্দ্রেয়াস ব্রিৎস বলেন, ‘‘আমরা জানতাম, সমস্যা হবে৷ তবে যাবতীয় তথ্য ও হিসেব অনুযায়ী সব কিছু সীমার মধ্যেই ছিল৷ তবে বিমানটি ওজন করে বুঝতে পারলাম, যেভাবে সাধারণত কাজ করি, এক্ষেত্রে সেটা করা সম্ভব হবে না৷''
সাধারণত ইঞ্জিনিয়াররা তিনটি জায়গায় বিমান ‘জ্যাক আপ', অর্থাৎ তুলে ধরতে পারেন৷ কিন্তু পেছনের দিকে টেলিস্কোপ থাকায় সোফিয়া প্রায় উলটে যাচ্ছিল৷ ওজন পাঁচটি হাইড্রলিক লিফটারের উপর ভাগ করে দিতে হয়েছিল৷ আন্দ্রেয়াস ব্রিৎস বলেন, ‘‘প্রথমে বেশ উত্তেজনা হচ্ছিল৷ কারণ অঙ্ক কষে যা বার করা হয়েছিল, তা সত্যি কাজ করবে কিনা, তা জানা ছিল না৷ তারপর বিমানটি যখন উপরের দিকে উঠতে লাগলো, এবং মাত্রাতিরিক্ত ওজনের কোনো সতর্কতা-সংকেত এলো না, তখন সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল৷ তারপর সব কিছু বেশ দ্রুত হয়ে গেল৷ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বিমানটাকে তোলা গেল৷''
মেনটেনেন্স ইনস্পেকশন শেষ হতে কয়েক মাস সময় লাগে৷ প্রকৌশলিরা ফাটল, ক্ষয়ের চিহ্ন ও ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি খোঁজেন৷ কাজটা সহজ নয়, কারণ মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা এই পুরানো বিমানটিকে হাই-টেক সজ্জায় সজ্জিত করেছিল৷ তাই প্রায় কিছুই আর প্রাথমিক অবস্থায় নেই৷ আন্দ্রেয়াস ব্রিৎস বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে এত রকম রদবদল করা হয়েছে যে, তার ১১,০০০-এরও বেশি নকশা রয়েছে৷ নাসা এখনো সেগুলি ক্যাটালগ করতে পারেনি৷ তাই প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিজেদেরই খুঁজে নিতে হয়৷''
টেলিস্কোপের রক্ষণাবেক্ষণ করাও সহজ কাজ নয়৷ কারণ সেটি বিমানের স্থায়ী অংশ হিসেবেই বসানো হয়েছিল৷ তাই ‘অন দ্য স্পট' রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া উপায় নেই৷ জার্মান সোফিয়া ইনস্টিটিউটের ড. টোমাস কাইলিশ বলেন, ‘‘রক্ষণাবেক্ষণের সব কাজ এখানেই হচ্ছে বলে আমাদের সেন্সর-গুলিকেও নতুন করে প্রস্তুত করতে হচ্ছে৷
তার গোটা সারফেস জুড়ে আমরা বেশ কয়েকটি সেন্সর লাগিয়েছি৷ বিমান ওড়ার সময় সেটিকে নিখুঁতভাবে মাঝখানে রাখতে হয়৷''
বিমান ওড়ার সময় ছবি যাতে অস্পষ্ট না হয়ে পড়ে, তা নিশ্চিত করতে টেলিস্কোপটি এয়ার কুশনের উপর বসানো থাকে৷ পূর্বনির্ধারিত যাত্রাপথ থেকে সামান্য বিচ্যুতি ঘটলে ফলাফল ভুল হতে পারে৷ উদ্দেশ্য হলো, টেলিস্কোপকে বহু কোটি আলোকবর্ষ দূরে কোনো অতি ক্ষুদ্র বিন্দুর প্রতি মনোযোগ দিতে শেখানো৷ এভাবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব৷