বিরোধীদের নেতৃত্ব দিতে উদ্যোগী রাহুল গান্ধী
২৮ জুলাই ২০২১সংসদের এখন শীতকালীন অধিবেশন চলছে। আর সেখানেই এবার অত্যন্ত সক্রিয় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি শুধু পেগাসাস দিয়ে আড়িপাতা নিয়েই সক্রিয় নন, তিনি সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, সবচেয়ে বড় কথা তিনি বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করছেন। বুধবারও রাহুলের সভাপতিত্বে বিরোধী দলের বৈঠক হয়েছে। বিরোধী দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরোধিতায় রাহুল যেভাবে নেতৃত্ব দেয়ার চেষ্টা করছেন, তা ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পর দেখা যায়নি।
রাহুল এদিন সংসদ ভবনে ১৪টি বিরোধী দলের যে বৈঠক করছেন তাতে উপস্থিত ছিলেন, ডিএমকে, এনসিপি, শিবসেনা, আরজেডি, সমাজবাদী পার্টি, সিপিএম, সিপিআই, ন্যাশনাল কনফারেন্স, আপ, মুসলিম লিগ, আরএসপি, কেসিএম এবং ভিসিকে নেতারা। তৃণমূল কংগ্রেসের কোনো প্রতিনিধি সেখানে ছিলেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন দিল্লিতে। তিনি এদিন সাংসদদের নিয়ে বৈঠকও করছেন।
সক্রিয় রাহুল
সংসদের শীত অধিবেশন শুরু হতেই রাহুল গান্ধী অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনি এদিন বিরোধী দলের বৈঠকে বলেছেন, সংসদের বাকি সরকারি কাজ পরে হবে, আগে পেগাসাস দিয়ে ফোনে আড়িপাতা, কৃষক বিক্ষোভ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়া নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তাদের এই দাবি সরকার না মানলে তারাও লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিক্ষোভ দেখাবেন।
পেগাসাস নিয়ে আড়িপাতার তালিকায় রাহুল গান্ধীর নিজের ফোনও ছিল। তিনি ইতিমধ্যে সংসদ ভবনে গান্ধী মূর্তির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। মঙ্গলবারও বিরোধী কিছু দলের নেতাকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। বুধবার তো ১৪টা দলকে নিয়ে বৈঠক করলেন। মঙ্গলবার তিনি কৃষকদের সমর্থনে ট্রাক্টর চালিয়ে সংসদ ভবনেও এসেছেন।
রাহুলের এই অতি-সক্রিয়তা এবং বিরোধী দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে মোদী সরকারের বিরোধিতা করার ঘটনাটা যখন ঘটছে, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যে বিরোধী দলগুলির নেতৃত্ব দিতে চান, মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধী মুখ হতে চান, সেই বিষয়টি এতদিনে স্পষ্ট। এই পরিস্থিতিতে রাহুলের এই সক্রিয়তাও তাৎপর্যপূর্ণ।
মমতা-সোনিয়া বৈঠক
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন মমতা। দেখা করেছেন তিন কংগ্রেস নেতা কমল নাথ, আনন্দ শর্মা এবং অভিষেক মণু সিংভির সঙ্গে। বুধবার তিনি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেন। মমতা জানিয়েছেন, সোনিয়া তাকে চা খেতে ডেকেছেন। তিনি তাই দশ জনপথে গিয়ে সোনিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন। তার আগে নিজের সংসদীয় দলের বৈঠকও করবেন তৃণমূল নেত্রী।
যে ফর্মুলা নিয়ে মমতা এবং কয়েকটি আঞ্চলিক দল এগোতে চাইছে, তা হলো জোট হবে মূলত আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে। তাতে কংগ্রেসও যোগ দেবে। কংগ্রেস সেখানে নেতৃত্ব দেবে না। আর বিজেপি-র একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের একজন প্রার্থী থাকবে।
রাহুলের সক্রিয়তার পিছনে
রাহুল গান্ধীর এই হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠার পিছনে কি কোনো বার্তা আছে? প্রবীণ সাংবাদিক সুনীল চাওকের মতে, অবশ্যই আছে। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''মমতার চেষ্টা সকলেই দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু মমতা এটাও জানেন যে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে জোট হবে না। তাই তিনি দিল্লি এসে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে কথা বলছেন। আর রাহুল গান্ধীর সক্রিয়তা এবং বিরোধী দলগুলির নেতৃত্ব দেয়ার চেষ্টা থেকে বোঝা যাচ্ছে কংগ্রেস অত সহজে তাদের জায়গা ছাড়বে না।''
আরেক প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তার মতে, ''বিরোধীদের মধ্যে কংগ্রেস একমাত্র জাতীয় দল। আর পশ্চিমবঙ্গের বাইরে তৃণমূলের কোনো প্রভাব এখনো নেই। কংগ্রেসের আগের প্রভাব প্রতিপত্তি না থাকলেও মরা হাতি এখনো লাখ টাকা। এত আগে থেকে তারা বিরোধী দলগুলির নেতৃত্ব দেয়ার জায়গা কেন তৃণমূলকে ছেড়ে দেবে?''
সুনীলের বক্তব্য, ''লোকসভার ক্ষেত্রে প্রায় ২০০টি আসনে বিজেপি-র বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই হবে। বাকি অনেকগুলি রাজ্যে যেখানে আঞ্চলিক দলগুলি শক্তিশালী, সেখানে কিছু আসনে কংগ্রেসের প্রভাব বেশি। ফলে কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দলগুলি হাত মিলিয়ে লড়লে বিজেপি কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে পারে। তাই রাহুল গান্ধী নেতৃত্ব দেয়ার প্রয়াস করবেন না, এমন কথা একেবারেই বলা যায় না।''
শরদ বলছেন, ''মমতার সামনের রাস্তাটা তাই একেবারে মসৃন নয়। সেখানে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হবে তাকে। অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।''