বিশ্ব জুড়ে শেয়ার বাজারে ধস
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮২০১১ সালের পর এত বড় ধস দেখেনি ওয়াল স্ট্রিট৷ শেয়ার বাজার নিয়ে চিন্তার ভাঁজ বিশ্বের সর্বত্র৷ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, একদিনে মার্কিন শেয়ার বাজার ১৬০০ পয়েন্ট নেমে গিয়েছে৷ যা শুধু চিন্তার নয়, রীতিমতো আতঙ্কের৷
বিশ্ব জুড়ে শেয়ারের ব্যাপারীরা ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ার পয়েন্টের দিকে তাকিয়ে থাকেন৷ কারণ, অ্যামেরিকার শেয়ারের উপর নির্ভর করে বিশ্বের প্রায় সমস্ত রাষ্ট্রের শেয়ার সূচক৷ ফলে ওয়াল স্ট্রিটে ধস নামার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জাপান শেয়ার বাজারেও লাল সংকেত জারি হয়৷ সেখানকার শেয়ার সূচক ‘নিক্কেই' নেমে যায় বছরের সবচেয়ে কম পয়েন্টে৷ সূত্রের খবর দিনের শেষে সেখানকার শেয়ার সূচক ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কমে গিয়েছে৷
শুধু অ্যামেরিকা বা জাপান নয়, শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলি এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতেও৷ অস্ট্রেলিয়ার শেয়ার সূচক কমে গিয়েছে ৩ শতাংশ৷ দক্ষিণ কোরিয়ায় নেমেছে ২ শতাংশ৷ গত ১০০ দিনের মধ্যে এত বড় ধস ঘটেনি দক্ষিণ কোরিয়ায়৷
উপমহাদেশে ভারতের শেয়ার বাজার গুরুত্বপূর্ণ৷ বস্তুত, গত কয়েক বছরে ভারতের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ওয়াল স্ট্রিট এবং নিকেইয়ের ধসের সরাসরি প্রভাব পড়েছে ভারতের শেয়ার সূচকেও৷ যার ফলে প্রায় ৪ দশমিক ৯৫ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে একদিনেই৷ ভারতের শেয়ার সূচক সেনসেক্স এবং নিফটি দিনের শেষে নেমে লাল সংকেতের নীচে গিয়ে পৌঁছেছে৷ মাথায় হাত বিনিয়োগকারীদের৷
সোমবারের এই বিপুল ধস ভারতের বহু বিনিয়োগকারীকেই ২০০৮ সালের কথা মনে পরিয়ে দিচ্ছে৷ বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সে বছরও মার্কিন শেয়ার সূচক ধসে গিয়েছিল৷ ভারতের বহু বিনিয়োগকারী সে সময় বিপুল পরিমাণ আর্থিক মন্দার সম্মুখিন হয়েছিলেন৷
বহু নতুন শেয়ার শূন্যে গিয়ে পৌঁছেছিল৷ অর্থনৈতিক ক্ষতি স্বীকার করেও রাতারাতি শেয়ার তুলে নেওয়ার হিরিক পড়ে গিয়েছিল৷ ফলে শেয়ার বাজার আরো নিম্নমুখী হয়েছিল৷ ২০০৮ সালের সেই ধস সামলাতে বহু সময় লেগে গিয়েছিল৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়টা প্রায় তিন বছর৷ তবে ২০১১ সালের ওয়াল স্ট্রিটের ধস সেভাবে প্রভাব ফেলেনি ভারতের বাজারে৷ কিন্তু এবারের ধসে ভারতের বাজার খুবই টালমাটাল৷
গত কয়েকবছরে ভারতের সাধারণ মানুষ আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন শেয়ার বাজারে৷ তার সবচেয়ে বড় কারণ, ভারত সরকার খোলা বাজারে বিনিয়োগকে গুরুত্ব দিচ্ছে৷ ব্যাংকগুলোর আমানতে আগের চেয়ে সুদ অনেকটাই কমে গিয়েছে৷ চার-পাঁচ বছর আগেও যেখানে স্থায়ী আমানত বা ফিক্সড ডিপোসিটে ব্যাংকগুলো ৯ থেকে ১০ শতাংশ বার্ষিক সুদ দিত, গত দু'বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ শতাংশের কাছাকাছি৷ ব্যাংকের সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদও চোখে পড়ার মতো কমেছে৷ কমে গেছে রেকারিং আমানতে সুদের পরিমাণও৷ এমতাবস্থায়, সরাসরি শেয়ার কেনাবেচার দিকে না গেলেও মিউচুয়াল ফান্ড বা সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্টে জোড় দিয়েছেন সাধারণ মানুষ৷ যা সরাসরি শেয়ার বাজারের সঙ্গে জড়িত৷ ব্যাংকগুলোও মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রি করতে শুরু করেছে৷ ফলে সাধারণ মানুষের আমানত এখন গিয়ে জমা হচ্ছে খোলা বাজারে৷ শেয়ারের ওঠা-পড়ার সঙ্গে সুদের পরিমাণ নির্ভর করছে৷
এত মানুষের আমানতের জন্য গত কয়েক বছরে ভারতীয় শেয়ার বাজারও স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল৷ বড় সড় ধস নামেনি বহুদিন৷ কিন্তু সোমবারের ধস সাধারণ মানুষের কপালেও চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে৷ অনেকেই মনে করছেন, ওয়াল স্ট্রিট দ্রুত ধসের মেরামত করতে না পারলে ভারতের বাজার আরো বিপর্যস্ত হবে৷ এবং সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের খোলা বাজারে টাকা জমানোর প্রবণতাও খানিকটা বাধাপ্রাপ্ত হবে৷ দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেই তা খুব মঙ্গলের হবে না৷
এসজি/ডিজি (রয়টার্স, এএনআই, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)