অ্যালকোহল এবং স্বাস্থ্য
৪ জুন ২০১৪এক গ্লাস পান করলে তো তেমন ক্ষতি নেই৷ কিন্তু তাতেই ক্ষান্ত দিতে ইচ্ছা করে না৷ বাড়তে থাকে তৃষ্ণা৷ মদ পান শুরু করলে এমন অনুভূতি হয় অনেকেরই৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে এই ধরনের একটি চিত্রই ফুটে উঠেছে৷
মদ্যাসক্তদের সংখ্যা কম নয়
জার্মানিতে ১.৬ থেকে ১.৮ মিলিয়ন মানুষ মদ্যাসক্ত৷ মানহাইমের সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট ফর মেন্টাল হেল্থ-এর ফাল্ক কিফার বলেন, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ হয়ে জীবনের মূল্যবান বছরগুলি হারিয়ে যায়৷ ‘‘বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে মদ্যাসক্তির কারণে অনেক বছর নষ্ট হয়ে যায়৷ অকাল মৃত্যুই শুধু নয়, লিভার সিরোসিস বা লিভারের কঠিন অসুখ থেকে শুরু করে কর্মক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন অনেকে৷''
ডাব্লিউএইচও-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে ৩.৩ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন৷ সমগ্র মৃত্যুর হারের প্রায় ছয় শতাংশ৷ এছাড়া ২০০টি নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ হতে পারে অতিরিক্ত অ্যালকোহলের কারণে৷ যেমন হৃদযন্ত্রের সমস্যা ও মানসিক সমস্যা৷
সামাজিক সমস্যাও প্রকট হয়
স্বাস্থ্যহানির পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাও বড় হয়ে দেখা দেয়৷ অনেকে চাকরি হারান৷ ‘‘জার্মানিতে মদ্যাসক্তির কারণে প্রতিবছর ২০ বিলিয়ন ইউরো খরচ হয়'', বলেন কিফার৷
জার্মানরা জনপ্রতি বছরে গড়ে ১১.৮ লিটার মদ্যপান করেন৷ বিশ্বব্যাপী মাথাপিছু ৬.২ লিটার মদ পান করা হয়৷ এক্ষেত্রে ইউরোপ এখন পর্যন্ত শীর্ষ স্থানে রয়েছে৷
ডাব্লিউএইচও-র পরামর্শ অনুযায়ী, মেয়েদের দৈনিক ২০ গ্রামের বেশি আর ছেলেদের ৪০ গ্রামের বেশি অ্যালকোহল পান করা উচিত নয়৷ এর বেশি হলে স্বাস্থ্যহানি হতে পারে৷ তবে আসক্তির ব্যাপারে পরিমাণটা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্পষ্ট কোনো সংজ্ঞা দেয়নি কখন থেকে মানুষ মদ্যাসক্ত হয়৷ ‘‘আসল কথা হলো, এই আসক্তি থেকে বের হয়ে আসা অনেক কষ্টকর৷ নিজের জীবনকে আবার গুছিয়ে এনে প্রাত্যহিক কার্যকলাপে মন দেওয়া সহজ নয়'', জানান কিফার৷ মদ্যপান নিয়ন্ত্রণ করা বা ছেড়ে দেওয়া বেশ কঠিন কাজ৷ ক্ষতিকর ফলাফলের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও৷
ইদানীং অ্যালকোহলের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ এ জন্য কয়েকটি লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে৷ ২০১০ সালের তুলনায় ২০২৫ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ শতাংশ কমাতে হবে৷
সমস্যা ভুলে থাকতে মদিরা
একাকিত্ব, অসন্তোষ, সামাজিক চাপ এসব কারণে মানুষ সুরাপানের দিকে ঝোঁকে৷ সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতিকে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে, বলেন কিফার৷ ‘‘সমাজে অ্যালকোহলের অপব্যবহার কমাতে চাইলে মদের বিজ্ঞাপন দেওয়াটা অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে৷''
বিশ্বব্যাপী মদ্যাসক্তদের আসল সংখ্যাটা অনেক বেশি হবে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷ কিন্তু অতিরিক্ত মদ্যপানের ব্যাপারটি সমাজে এক অস্বস্তিকর বিষয়৷ সেল্ফ হেল্প গ্রুপ ‘অ্যালকোহলিকস অ্যানোনিমাস' এক্ষেত্রে এক উজ্জল দৃষ্টান্ত৷
ভুক্তভোগীরা প্রকাশ করতে চায় না
কেউ নিজেকে মদ্যাসক্ত বলে পরিচয় দিতে চায় না, বলেন কিফার৷ ‘‘অ্যালকোহলের বিষয়টি খোলাখুলি আলোচনা করতে চাইলে চাপের মুখে পড়ে মানুষ৷ নিজের পানের অভ্যাসটা এড়িয়ে যেতে চায়৷
এ কারণে দূরের কোনো মানুষের অ্যালকোহল সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়৷ যেমন স্টেশনের আশেপাশে মদের বোতল থেকে মদ্যপান করতে যাঁদের দেখা যায়৷'' এক্ষেত্রে অনায়াসে বলা যায় যে, এর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই৷ ডাব্লিউএইচও-র রিপোর্ট কিন্তু অন্য চিত্রই তুলে ধরেছে৷