বিশ্বকাপ নিয়ে রোনাল্ডোর খোলাচিঠি
৪ মার্চ ২০১৪বিশ্বের আর কোনো দেশে বোধহয় সমাজজীবন এমনভাবে ফুটবলকেন্দ্রিক নয়৷ ২০০২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ে ব্রাজিলিয়ানদের হর্ষ আর ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে বিদায় নেওয়ার পর ব্রাজিলিয়ানদের বিষাদের তুলনা করলেই সেটা বোঝা যায়৷ তাহলে কি ফুটবলের ক্ষেত্রেও ইউরোপীয়দের তুলনায় তৃতীয় বিশ্বের দেশই থেকে যাবে ব্রাজিল?
না, ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ তো রয়েছে, যা সংঘটিত হবে ব্রাজিলের মাটিতেই৷ সেটাই হবে ব্রাজিলের নিজেকে প্রদর্শন করার সুযোগ: স্বচ্ছল অর্থনীতি, শক্তপোক্ত গণতন্ত্র, উচ্ছ্বল, প্রাণবন্ত সংস্কৃতি৷ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতি রোনাল্ডোর যে খোলাচিঠি আজ ৪ঠা মার্চ বার্লিনের ব্রাজিলীয় দূতাবাস থেকেও প্রকাশিত হবে – যে চিঠির অনুলিপি ডয়চে ভেলের কাছে তার অনেক আগেই পৌঁছেছে – সে চিঠির বক্তব্য হলো, আগামী বিশ্বকাপের মাধ্যমে ব্রাজিল ও তার বাসিন্দারা বিশ্বজনমানসে নিজেদের তুলে ধরার সুযোগ পাবে৷
‘ফাজের বোনিতো'
এ সবই মিষ্টি কথায় মন ভেজানোর চেষ্টা, ব্রাজিলে যাকে বলে ‘ফাজের বোনিতো'৷ অর্থাৎ ব্রাজিলের বিশ্বকাপ উদ্যোক্তা পরিষদের সদস্য রোনাল্ডো এবং অপরাপর প্রতিনিধিরা যা করছেন৷ কনফেডারেশনস কাপ চলাকালীনই লক্ষ লক্ষ ব্রাজিলিয়ান বিশ্বকাপের বিরুদ্ধে এবং স্বদেশে অর্থনৈতিক অসাম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রদর্শন করেছেন; স্টেডিয়াম নির্মাণের সময় বিভিন্ন দুর্ঘটনায় পূর্তশ্রমিকদের মৃত্যু; স্টেডিয়াম তৈরির কাজ সময়মতো শেষ হবে না, এমন আশঙ্কা; এ সব বিবরণই ইউরোপীয় গণমাধ্যমগুলিতে প্রকাশিত হয়েছে৷
বিশেষ করে জার্মানির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নেতিবাচক বিবরণ দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে বলে ব্রাজিলিয়ানদের ধারনা৷ নয়ত যে ৯০ লাখ টিকিট বিক্রি হয়েছে, যে ১৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবী নাম লিখিয়েছেন – তাঁদের বেলা? জার্মান জাতীয় কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ এবং মার্কিন জাতীয় কোচ ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান, দু'জনেই ব্রাজিলের নতুন স্টেডিয়াম কিংবা বিমানবন্দরগুলির আধুনিক স্থাপত্য নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন৷ কিন্তু এ সব ইতিবাচক খবরকে যেন পশ্চিমী মিডিয়ায় আমলই দেওয়া হচ্ছে না, বলে ব্রাজিলিয়ানদের ক্ষোভ৷
‘লা প্রেসিদেন্তা' ও স্টেডিয়াম নির্মাণ
ব্রাজিলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগামী অক্টোবরে৷ বর্তমান প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ বস্তুত রাষ্ট্রপ্রধান, এবং তা-তে তাঁর কোনো আপত্তি নেই; এমনকি তিনি ‘লা প্রেসিদেন্তে'-র বদলে আরো বেশি স্ত্রীলিঙ্গসুলভ ‘লা প্রেসিদেন্তা' সম্বোধনই পছন্দ করেন, যদিও পর্তুগিজ ভাষায় ‘প্রেসিদেন্তা' শব্দরূপই সম্ভব নয়৷ মোট কথা, রুসেফকে যদি আবার প্রেসিদেন্তে কিংবা প্রেসিদেন্তা হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হতে হয়, তাহলে স্বদেশে বিশ্বকাপ পরিপূর্ণভাবে সফল হওয়া প্রয়োজন৷
তার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন স্টেডিয়ামগুলো যথাসময়ে সমাপ্ত হওয়া৷ কিন্তু কি কুরিতিবার ‘আরেনা দা বাইসাদা', সাঁও পাওলো'-র ‘আরেনা করিন্থিয়ান্স', মানাউস-এর ‘আরেনা দে আমাজোনিয়া', কুইয়াবা-র ‘আরেনা পান্তানাল', নাতাল-এর ‘আরেনাস দাস দুনাস' বা পোর্তো আলেগ্রে-র ‘এস্তাদিও বাইরা-রিও', কোনো স্টেডিয়ামই ফিফার নির্দিষ্ট সময়সীমা, অর্থাৎ ২০১৩ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হতে পারেনি৷
স্টেডিয়ামের বাইরে?
নাতালের স্টেডিয়াম গত জানুয়ারির শেষে উদ্বোধন করা হয়েছে৷ পোর্তো আলেগ্রে-র স্টেডিয়ামে এসসি ইন্তারনাসিওনাল ক্লাবের প্রথম টেস্ট খেলাটি সংঘটিত হয়েছে বটে, কিন্তু ক্লাবের মতে তারা স্টেডিয়ামের দায়িত্বে, বাইরে মিডিয়া সেন্টার ইত্যাদির জন্য ক্লাব দায়ী নয়৷ বলতে কি, শেষমেষ সমস্যা দাঁড়াবে বিমানবন্দর থেকে আসা-যাওয়ার রাস্তা, স্টেডিয়ামমুখী বাসরুট, মেট্রো ইত্যাদি নিয়ে৷
তবে উত্তর তো একটা আছেই, যেমন ব্রাজিলিয়ানরা বলে, জার্মানিতে সংগঠন খুব ভালো, বাকি সব কিছু খারাপ; সে তুলনায় ব্রাজিলে সংগঠন খারাপ, কিন্তু বাকি সব কিছু ভালো৷ তবে তাদের আশাবাদিতা এবং আনন্দ করার ক্ষমতাটা নাকি মজ্জায় মজ্জায়: ব্রাজিল হলো সেই আনন্দের দেশ, যেখানে বিশ্বকাপ খেলতে ও দেখতে আসা মানুষদের সাদর অভ্যর্থনার কোনো অভাব ঘটবে না৷