1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্বকাপ ফুটবল: কী অবস্থা ফেবারিটদের?

৮ এপ্রিল ২০১৮

দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮৷ প্রস্তুতি পর্বের ম্যাচগুলোও প্রায় শেষ পর্যায়ে৷ বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরকে সামনে রেখে কেমন দল গড়েছে ফেবারিটরা?

https://p.dw.com/p/2vaVr
ছবি: Reuters/M. Shemetov

ফেবারিটের তালিকায় অনেকেই চলে আসে৷ তবে জনপ্রিয়তা ও পারফরমেন্সের বিচারে পাঁচটি দলের অবস্থা তুলে ধরা হলো৷

জার্মানি

গতবারের চ্যাম্পিয়ন দল জার্মানি৷ আরেকবার বিশ্বসেরার মুকুট পড়লে ব্রাজিলের সমান পাঁচ বার এই শিরোপা জেতার রেকর্ডটি ছুঁয়ে ফেলবে তারা৷ সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও মন্দ নয়৷ গত ২৭ মার্চ ব্রাজিলের কাছে না হারলে লম্বা সময় অপরাজিত থাকার আগের রেকর্ডটিই স্পর্শ করে ফেলত তারা৷

বিশ্লেষকদের তালিকায় তারা বিশ্বের এখন এক নম্বর দল এবং ব্রাজিলের সঙ্গে যৌথভাবে শিরোপা উঁচিয়ে ধরার দৌঁড়ে সবার আগে৷

বাছাই পর্বে ১০ ম্যাচের ১০টিতেই জিতে মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে ব্রাজিল৷ এছাড়া টানা ২২ ম্যাচে অপরাজিত থেকেছে, যেখানে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও স্পেনের সঙ্গে ড্র করেছে৷ তবে ব্রাজিলের কাছে হেরে গেছে ১-০ গোলে৷

জার্মানি দলে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, তাদের গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ারকে ঘিরে৷ ইনজুরির কারণে সেপ্টেম্বর থেকে মাঠের বাইরে তিনি৷ আশা করা যাচ্ছে হয়তো আগামী গ্রীষ্মে রাশিয়া যাচ্ছেন তিনি৷ তবে পুরোপুরি এখনো নিশ্চিত নয়৷

দলে নতুন সংযোজন লাইপজিশের ফরোয়ার্ড টিমো ভ্যার্নারের ১২ ম্যাচে ৭ গোল করে একজন যথার্থ স্ট্রাইকারের অভাব পূরণ করেছেন, যে অভাব ২০১৬ ইউরোর লড়াইয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ডয়েচরা৷ তাঁর ওপর বাজি রাখছেন বিশ্লেষকরা৷

ব্রাজিল

বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল, যার ঝুলিতে আছে পাঁচ পাঁচটি ট্রফি৷ সম্প্রতি জার্মানিকে ১-০ গোলে হারিয়ে চার বছর আগে ঘরের মাঠে ৭-১ গোলে শোচনীয়ভাবে হারের লজ্জা কিছুটা হলেও ঢাকতে পেরেছে তারা৷

ব্রাজিল বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচেই হারে চিলির কাছে৷ কিন্তু সেই হারই যেন শক্তি হয়ে ধরা দেয় ফুটবলের এই ল্যাটিন পরাশক্তির কাছে৷ বাছাই পর্বের পরের ১৭ ম্যাচে কোনো হার নেই তাদের৷ দ্বিতীয় অবস্থায় থাকা উরুগুয়ের থেকে প্রায় ১০ পয়েন্ট এগিয়ে তারা৷

এরপর আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে জাপানকে হারায় ও ইংলিশদের সঙ্গে ড্র করে৷ তারপর জার্মানিকে হারাবার আগে এবারের বিশ্বকাপের স্বাগতিক রাশিয়াকে হারায় ৩-০ গোলে৷

ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমারের দলে ফেরা নিয়ে এখনো শঙ্কা রয়েছে৷ পায়ে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে এই নন্দিত ফরোয়ার্ডের৷ অবশ্য দল তাঁর ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী৷

ব্রাজিলের দলকে যতটা বলা হয়, তারচেয়েও বেশি ভারসাম্যপূর্ণ বলে মনে করেন অনেকেই৷ সেখানে ফরোয়ার্ড ও মিডফিল্ডে নেইমার, কোটিনিয়ো, ফিরমিনো, কস্টা, উইলিয়ান ও ফার্নান্ডিনিয়োরা দলকে চমৎকারভাবে গভীরতা এনে দিতে পারে৷

বিশ্বকাপের আগে ক্রোয়েশিযা ও অস্ট্রিযার সঙ্গে প্রীতি ম্যাচে নিজেদের আরো ঝালিয়ে নেয়ারও সুযোগ আছে তাদের৷

আর্জেন্টিনা

দু'বারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা গতবারের রানার্সআপ৷ ৩০ বছর বয়সি মেসির এটিই সম্ভবত শেষ বিশ্বকাপ, যেখানে পারফরম্যান্সের শিখরেই থাকবেন তিনি৷ অবশ্য মেসি এই আসরের পরই আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেয়ার কথাও নাকি ভাবছেন৷ সে যাই হোক মেসি ছাড়া আর্জেন্টিনা দলের সর্বশেষ খবর হলো, স্পেনের কাছে ৬-১ গোলের লজ্জাজনক পরাজয়৷

বাছাইপর্বেও ধুকেছে আর্জেন্টাইনরা৷ এ পর্বের শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে মেসির হ্যাট্রিকের বদৌলতে রাশিয়ার টিকেট পেয়েছে নীল-সাদারা৷ নভেম্বরে প্রীতি ম্যাচে তারা রাশিয়াকে হারালেও হেরেছে আফ্রিকান পরাশক্তি নাইজেরিয়ার কাছে৷ তবে মেসিকে ছাড়া বিশ্বকাপের টিকেট না পাওয়া ইটালির বিপক্ষে কষ্টের জয় পেয়েছে৷

আর্জেন্টাইন ম্যানেজার সাম্পোলি মেসির ওপর এতটাই নির্ভর করছেন যে, সিরি আ'তে এ মৌসুমে সেরা পাঁচ গোলদাতার দু'জন ডিবালা ও ইকার্ডি-র কাউকেই বিবেচনায় আনছেন না তিনি৷ সাম্পোলি নিজেই দলের দায়িত্ব নিয়েছেন বাছাই পর্বের শেষ চার ম্যাচের আগে৷ তাই তাঁর পদ্ধতির সঙ্গে খেলোয়াড়রা মানিয়ে নিতে পারবেন কি না সন্দেহ আছে৷

হিগুয়েইনের ওপর তাঁর আস্থাকে অনেকেই সমালোচনার চোখে দেখেন৷ বিশ্বকাপের আগে আর একটি ম্যাচই খেলার সুযোগ পাবে আর্জেন্টিনা৷

ফ্রান্স

একবারই বিশ্বকাপ জিতেছে ফ্রান্স, ১৯৯৮ সালে নিজেদের মাটিতে৷ তাদের দলে বিশ্বের সবচেয়ে দামি পাঁচ খেলোয়াড়ের তিনজনই রয়েছেন৷

বাছাই পর্বের দশ ম্যাচের সাতটিতে জয় পেয়েছে ফ্রেঞ্চরা৷ প্রীতি ম্যাচে নভেম্বরে তারা ওয়েলসকে হারায়, ড্র করে জার্মানির সঙ্গে৷ কলম্বিয়ার বিপক্ষে একটিতে জয় পায় ও একটিতে পরাজিত হয়৷ আর রাশিয়াকে হারায় ৩-১ গোলে৷

ফুটবল বিশারদরা দিদিয়ে দেশঁ'র কৌশল নিয়ে সন্তুষ্ট নন৷ কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে যখন প্রতিপক্ষ কৌশল পাল্টায় তখনও দেশঁ তাঁর দলের কৌশলে কোনো পরিবর্তন আনেননি৷

সে যাই হোক পল পগবা হয়ত বিশ্বকাপে তাঁর সেরাটাই দেবেন৷ কিন্তু প্রচুর ভুল করছেন ডিফেন্ডার লে ব্ল্যু, যার মাশুল দিতে হয়েছে ফ্রান্সকে৷ তাঁর সঙ্গে হয়ত রক্ষণভাগ সামলাবেন স্যামুয়েল উমিতিতি, রাফায়েল ভারান ও লরাঁ কাসিয়েনি৷

তবে আক্রমণভাগে অনেকগুলো অপশন আছে দেশঁ'র সামনে৷

সেখান থেকে কারা মূল দলে জায়গা করে নেবেন তা চূড়ান্ত করতে আরো বিশ্বকাপের আগে আরো তিনটি প্রীতি ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকছে ফ্রান্সের৷

স্পেন

২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা গত আসরে গ্রুপ পর্বেই বিদায় নেয়৷ তবে তাদের এখন বেশ কঠিন দলই মনে হচ্ছে৷ বিশেষ করে আর্জেন্টিনাকে ৬-১ গোলেগুড়িয়ে দিয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন স্প্যানিশরা৷ সে ম্যাচে হ্যাট্রিক করেছেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ইসকো৷

বোল্ট খেললেন মারাদোনার বিপক্ষে

নতুন ম্যানেজার জুলেন লোপেতেগি-র অধীনে ১৮ ম্যাচের একটিতেও হারেনি তারা৷ প্রত্যেক ম্যাচেই গোলও পেয়েছে টিকিটাকারা৷

বাছাইপর্বে দশ ম্যাচের ন'টিতে জয় ও একটিতে ড্র নিয়ে শীর্ষে থেকেই চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে স্পেন৷ প্রীতি ম্যাচে নভেম্বরে হারিয়েছে কোস্টারিকাকে ও ড্র করেছে রাশিয়ার সঙ্গে৷ এরপর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানির সঙ্গে ড্র করেছে এবং আর্জেন্টিনাকে এক কথায় উড়িয়েই দিয়েছে৷

স্পেন দলটিকে বেশ গোছানো মনে হচ্ছে এবার৷ চমৎকার ফর্মে আছেন গোলরক্ষক ডাভিড ডে গেয়া৷ এই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকাকে অনেকেই এখন পৃথিবীর সেরা গোলরক্ষক মনে করেন৷ সামনে আছে সার্গিও রামোস ও জেরার্ড পিকে-র সেন্ট্রাল ডিফেন্সের দুর্গ৷

ইনিয়েস্তা এখনো মাঝমাঠের কারিগর৷ তাঁর সঙ্গে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ইসকো দারুন খেলছেন ইদানীং৷ ভ্যালেন্সিয়া স্ট্রাইকার রডরিগো ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ স্ট্রাইকার ডিয়েগো কস্টা যখনই সুযোগ পাচ্ছেন গোল করে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখছেন৷

বিশ্বকাপের আগে আরো দু'টি ম্যাচ খেলবে স্পেন৷ তাই লাল নীল দুর্গ যে রাশিয়ায় এবার ব্যাপক তোপ হানবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷

সব মিলিয়ে এক দুর্দান্ত বিশ্বকাপ দেখার অপেক্ষায় ফুটবল প্রেমীরা৷

বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে আপনারা কী ধরনের প্রতিবেদন পেতে চান? জানান আমাদের, লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷