বিশ্বকাপের ব্যাড বয়েজ
সুয়ারেজের কামড়, জিদানের মাথা দিয়ে ঢুঁস– বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমন উদ্ভট কাণ্ডের উদাহরণ আছে অনেক৷ এমন কিছু খেলোয়াড়কে নিয়ে আমাদের আজকের ছবিঘর৷
টনি শুমাখার (পশ্চিম জার্মানি)
১৯৮২ সালের স্পেন বিশ্বকাপ৷ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সেমি ফাইনাল ম্যাচে এমন আগ্রাসী ট্যাকল করেন শুমাখার, তার কোমড়ে বাড়ি খেয়ে প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকার বাতিস্তঁর দুটি দাঁত এবং পাঁজরের তিনটি হাড় ভেঙে যায়৷ মাঠেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন বাতিস্তঁ৷ শুমাখার অবশ্য বরাবরই বলে গিয়েছেন, তার লক্ষ্য ছিল শুধুই বল৷ ম্যাচটি ৩-৩ গোলে ড্র হওয়ার পর টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে জিতে নেয় পশ্চিম জার্মানি
খালিদ বুলারোজ (নেদারল্যান্ডস)
২০০৬ বিশ্বকাপের রাউন্ড অব সিক্সটিন৷ পর্তুগালের সাথে নেদারল্যান্ডসের ম্যাচটি পরিচিতি পায় ‘ন্যুরেমবার্গ যুদ্ধ’ হিসেবে৷ চারটি লাল কার্ড এবং ১৬টি হলুদ কার্ড বিশ্বকাপে এখনও ইতিহাস হয়ে রয়েছে৷ ক্রিস্টিয়ানো রোনালডোকে বাজেভাবে ট্যাকল করায় খেলার প্রথমার্ধে হলুদ কার্ড দেখেন বুলারোজ৷ মাঠ ছাড়তে হয় রোনালডোকে৷ দ্বিতীয়ার্ধে আবার হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন বুলারোজও৷ শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে হারতে হয় নেদারল্যান্ডকে৷
নিজেল ডি জং (নেদারল্যান্ডস)
২০১০ সালে স্পেন ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার বিশ্বকাপ ফাইনাল নাম পেয়েছিল ‘ব্যাটল অব জোহানেসবার্গ’৷ জাবি আলনসোকে ফ্লাইং কিক দিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন ডি জং৷ ম্যাচে নেদারল্যান্ডকে দেখতে হয় ৯টি হলুদ কার্ড৷ দুটি হলুদ কার্ড পেয়ে অতিরিক্ত সময়ে মাঠ ছাড়েন জন হাইটিঙ্গা৷ যুদ্ধে ছাড় দেয়নি স্পেনও, পেয়েছে ৫টি হলুদ কার্ড৷ আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার শেষ মুহূর্তের গোলে ‘যুদ্ধে’ জয়ী হয় স্প্যানিশরাই৷
জিনেদিন জিদান (ফ্রান্স)
২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালের সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্ত ইটালির মার্কো মাতেরাজ্জিকে জিদানের মাথার গুঁতো৷ প্রাথমিক ধারণা ছিল, মাতেরাজ্জির কোনো একটি কথায় ক্ষেপে গিয়ে ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন জিদান৷ তবে মাতেরাজ্জি ঠিক কী বলেছেন, তদন্তে তা প্রমাণ করা যায়নি৷ ১-১ সমতায় শেষ হওয়া ম্যাচ টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে জিতে নেয় ইটালি৷
ডেভিড বেকহাম (ইংল্যান্ড)
১৯৯৮ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড বনাম আর্জেন্টিনার ম্যাচ৷ দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই প্রতিপক্ষের অধিনায়ক দিয়েগো সিমিওনিকে লাথি মেরে লাল কার্ড দেখেন ডেভিড বেকহাম৷ ২-২ সমতায় ম্যাচ শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারে ইংল্যান্ড৷ দেশে ফেরার পর সমর্থকদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় এই ইংলিশ তারকাকে৷
স্লাভেন বিলিচ (ক্রোয়েশিয়া)
১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপ৷ সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলে এগিয়ে আছে স্বাগতিকেরা৷ লরেন ব্লঁ-এর সাথে ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে হঠাৎ করেই মাথা চেপে ধরে মাটিতে পড়ে যান বিলিচ৷ এ ঘটনায় ক্যারিয়ারে প্রথমবার লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় ব্লঁঁকে৷ ভিডিও রিপ্লেতে দেখা যায়, বিলিচকে বলতে গেলে স্পর্শই করেননি ব্লঁ৷ ফাইনালে ব্লঁ খেলতে না পারলেও সে বছর ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ঠিকই কাপ জেতে ফ্রান্স৷
রয় কিন (আয়ারল্যান্ড)
আইরিশ দল জাপানের সাইপানে প্রশিক্ষণে ব্যস্ত৷ তখনও বিশ্বকাপ শুরুই হয়নি৷ যন্ত্রপাতি এবং খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ম্যানেজার মিক ম্যাকার্থির সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন কিন৷ ফলশ্রুতিতে বিশ্বকাপ শুরুর আগেই কিনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়৷ শেষ ষোল’র লড়াইয়ে স্পেনের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয় আয়ারল্যান্ডকে৷
লুইস সুয়ারেজ (উরুগুয়ে)
প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের কামড়ানো সুয়ারেজের পুরনো অভ্যেস৷ ২০১৪ সালে ইটালির সাথে ম্যাচে হঠাৎ করেই ডিফেন্ডার জর্জিও চিলিনিকে কামড় দিয়ে বসেন সুয়ারেজ৷ অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় চার মাসের জন্য ফুটবল সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রমে তাঁকে নিষিদ্ধ করে ফিফা৷ পাশাপাশি ৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে তাঁকে নিষিদ্ধও করা হয়৷
ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান (পশ্চিম জার্মানি)
ঝাঁপিয়ে মাটিতে পড়ে যাওয়ায় বেশ নামডাক ছিল ক্লিন্সমানের৷ কিন্তু ক্যারিয়ারে তাঁর সবচেয়ে সমালোচিত ডাইভ ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে৷ আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে ৬৫ মিনিটে পেদ্রো মোনসনের ট্যাকলে উড়ে মাটিতে পড়েন ক্লিনসমান, লাল কার্ড দেখতে হয় মোনসনকে৷ পরে দেখা যায়, ইচ্ছে করেই লাফ দিয়েছেন এই জার্মান খেলোয়াড়৷