বিশ্বজুড়ে বডি শেমিং ও আইনি সহায়তা
সম্প্রতি প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৬৯.৯২ শতাংশ তরুণী শারীরিক অবয়ব নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হন৷ বিশ্বের অন্যত্র পরিস্থিতি কেমন, আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা আছে কিনা - তা জানার চেষ্টা করা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
মালয়েশিয়ায় জেল, জরিমানার আইন
মালয়েশিয়ায় সামাজিক মাধ্যমে কারো শরীর নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করলে সর্বোচ্চ সোয়া ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা সর্বোচ্চ এক বছরের জেল, কিংবা উভয় শাস্তি হতে পারে৷ ২০১৯ সালে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বডি শেমিংয়ের প্রভাব নিয়ে একটি সচেতনতামূলক পোস্টার প্রকাশ করেছিল৷ এতে বলা হয়, বডি শেমিংয়ের কারণে চাপ ও মানসিক সমস্যা, আত্মবিশ্বাস হারানো, খাওয়া-দাওয়ায় সমস্যা, বিষাদ ও আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিতে পারে৷
ভারতে বডি শেমিং করায় মামলা
২০২০ সালের অক্টোবরে ভারতের এক নারী বডি শেমিং করায় তার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেন৷ অভিযোগে তিনি বলেন, ২০১৭ সালের বিয়ের পর থেকে তারা তার শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে কথা বলতে থাকে৷ তাকে বারবার থাইরয়েড পরীক্ষা করাতে বাধ্য করে৷ এমনকি তাকে দিনে মাত্র একবেলা খাবার দেয়া হত বলেও অভিযোগ করা হয়৷ বাসা পরিষ্কার থাকার পরও তাকে বারবার পরিষ্কার করতে বাধ্য করা হত৷
ইন্দোনেশিয়ায় আইন
বডি শেমিং করার অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাড়ে চার মাস জেল কিংবা সর্বোচ্চ সাড়ে চার হাজার ইন্দোনশিয়ান রূপি জরিমানা হতে পারে৷ আর সামাজিক মাধ্যমে বডি শেমিং করলে সর্বোচ্চ চার বছরের জেল কিংবা সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় শাস্তি হতে পারে৷
বাংলাদেশ পরিস্থিতি
গত ৫ মার্চ বেসরকারি সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রকাশ করা সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৬৯.৯২ শতাংশ তরুণী শারীরিক অবয়ব নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন৷ এক হাজার ১৪ তরুণীর ওপর জরিপ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় সংগঠনটি৷ এতে আরো উঠে এসেছে, ৩৭.২৪ শতাংশ তরুণী আত্মীয় স্বজনদের কথায় ও ইঙ্গিতে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন৷ বন্ধুবান্ধবের কাছে বডি শেমিংয়ের শিকার হয়েছেন ২২ শতাংশ নারী৷
বাংলাদেশে আইনি পরিস্থিতি
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অন্যান্য যৌন হয়রানির ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকলেও বডি শেমিংয়ের বিষয়ে আইন স্পষ্ট নয়৷ তবে আদালতে যাওয়া যেতে পারে৷’’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হকও জানান, ‘‘এই জায়গাতে আমাদের দেশে আইনি কোনো ভিত্তি নেই৷ অন্য আইনগুলো দিয়ে হয়ত মামলা করা বা থানায় অভিযোগ করা যায়৷’’
মোটা হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি যেতে পারে
যুক্তরাষ্ট্রে একমাত্র মিশিগান রাজ্য ও সান ফ্রান্সিসকো, ম্যাডিসনের মতো কয়েকটি শহর ছাড়া বাকি সব জায়গায় চাকরিদাতারা মোটা হওয়ার কারণ দেখিয়ে কাউকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করতে পারে৷ কারণ এই বৈষম্য থেকে রক্ষা করার কোনো আইন নেই সেখানে৷ অথচ এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ২.৭২ কেজি ওজন বাড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারী কর্মীর বেতন ঘণ্টাপ্রতি দুই শতাংশ কমে গেছে৷
ছয় দেশের পরিস্থিতি
অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত ওজনধারী প্রায় ১৪ হাজার মানুষের উপর পরিচালিত এক জরিপ বলছে, অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকের বেশি তাদের ডাক্তার, পরিবার, বন্ধুবান্ধব, ক্লাসমেট ও সহকর্মীদের দ্বারা ফ্যাট-শেমিংয়ের শিকার হয়েছেন৷ জরিপটি গত জুনে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ওবেসিটিতে প্রকাশিত হয়েছে৷ সবচেয়ে বেশি (৭৬ থেকে ৮৮ শতাংশ) ফ্যাট-শেমিং করেছেন পরিবারের সদস্যরা৷