1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের ফোনে আড়িপাতা পেগাসাস দিয়ে

১৯ জুলাই ২০২১

ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও-র তৈরি করা স্পাইওয়্যার পেগাসাস দিয়ে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের ফোন হ্যাক করা হয়েছিল।

https://p.dw.com/p/3wfsS
পেগাসাসের নির্মাতা এনএসও-র অফিস। ছবি: Jack Guez/AFP/Getty Iamges

২০১৯ সাল থেকে ১৭টি সংবাদমাধ্যম পেগাসাসের কীর্তিকলাপ নিয়ে তদন্ত করছে। এই তদন্তের আনুষ্ঠানিক নাম 'পেগাসাস প্রজেক্ট'। আর সেই তদন্তে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা, সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের ফোনে আড়িপাতা হয়েছে। ফোন হ্যাক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টি সেলফোন হ্যাক করার প্রমাণ তারা পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

প্যারিস ভিত্তিক সংগঠন ফরবিডন স্টোরিস এবং মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ৫০ হাজার সেলফোন নম্বরের একটি তালিকা তুলে দেয় ১৭টি সংবাদমাধ্যমের কনসর্টিয়ামের হাতে। তার মধ্যে থেকে ৫০টি দেশের এক হাজার জনের তালিকা তৈরি করে কনসর্টিয়াম, যাদের ইসরায়েলি সংস্থা এনএসও-র গ্রাহকরা বেছে নিয়েছিল আড়িপাতার জন্য। এর মধ্যে ১৮৯ জন সাংবাদিক, ৬০০ জন রাজনীতিক, ৬৫ জন শিল্পপতি, ৮৫ জন মানবাধিকার কর্মী। সাংবাদিকদের মধ্যে যাদের ফোনে আড়িপাতা হয়েছে তারা এপি, রয়টার্স, সিএনএন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ফিন্যানশিয়াল টাইমস সহ অনেকগুলি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। ভারতেও 'দ্য ওয়্যার' সহ বেশ কিছু সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিকদের ফোনে আড়িপাতা হয়েছে বলে অভিযোগ।

অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, তাদের ফরেনসিক গবেষকরা দেখেছেন, ওয়াশিংটন পোস্টের নিহত সাংবাদিক জামাল খাসোগির বাগদত্তার ফোনে পেগাসাস ইনস্টল করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে ইস্তানবুলে সৌদি কনসুলেটে খাসোগিকে হত্যা করার চারদিন বাদে তার বাগদত্তার ফোনে এই স্পাইওয়্যার বসানো হয়। এর আগেও পেগাসাস নির্মাতা এনএসও-র বিরুদ্ধে নজরদারির অভিযোগ এসেছে। তদন্তে ওয়াশিংটন পোস্টও ছিল। তারা জানিয়েছে, খাসোগির ঘনিষ্ঠ দুই নারীর ফোনে স্পাইওয়্যার বসানো হয়েছিল।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, এনএসও-র হ্যাকিং সফটওয়্যারের বহুল ব্যবহার হয়েছে এবং তা অপব্যবহার করা হয়েছে। এই সফটওয়্যার স্মার্টফোন থেকে মেসেজ, ফটো, ইমেল, দেখতে পারে, কল রেকর্ড করতে পারে। রয়টার্স জানাচ্ছে, কে হ্যাক করছে, কেন হ্যাক করছে, তা তারা কনফার্ম করতে পারেনি।

এনএসও গোষ্ঠী সংবাদসংস্থা এপি-কে ইমেল করে জানিয়েছে, তারা কাউকে টার্গেট করেনি, তাদের কাছে টার্গেট করার মতো কোনো তালিকাও নেই। ভুলভাল ধারণা ও সম্পর্কহীন তত্ত্ব খাড়া করা হচ্ছে। তারা জানিয়েছে, একমাত্র সরকারি এজেন্সি ছাড়া তারা কাউকে এই সফটওয়্যার বিক্রি করেনি। সরকারি সংস্থাকেও সন্ত্রাসবাদী এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য এই সফটওয়্যার বিক্রি করা হয়েছে।

কিন্তু সমালোচকরা এনএসও-র এই দাবি মানতে চাইছেন না। তারা দাবি করছেন, এই হাই-টেক স্পাইং সফটওয়্যার এনএসও সরাসরি ম্যানেজ করে এমন তথ্য তাদের কাছে আছে। পেগাসাসের বারবার অপব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও আইন মানা হয়নি।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, তাদের ১৫ জন সাংবাদিকের সেলফোন তারা পরীক্ষা করেছেন এবং সেখানে পেগাসাসের ট্রেস পেয়েছেন। এই সাংবাদিকদের ফোন লিক হওয়া নম্বরের মধ্যে ছিল। হাঙ্গেরির দুই সাংবাদিকের ফোনে পেগাসাস পাওয়া গেছে বলে তারা জানিয়েছে।  সব চেয়ে বেশি ফোন নম্বর ছিল মেক্সিকোর। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের ফোন নম্বর ছিল। তার মধ্যে সৌদি আরবও ছিল। সৌদি এনএসও-র ক্লায়েন্ট বলেও অভিযোগ। এছাড়া ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, ভারত, আজারবাইজান, কাজাখস্তান ও পাকিস্তানের প্রচুর ফোন নম্বর তালিকায় আছে।

অ্যামনেস্টির সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, যেভাবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পেগাসাস ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, যে সব সাংবাদিক সমালোচনা করেন, তাদের ভয় দেখানো, তাদের চুপ করানোর কীরকম চেষ্টা হয়েছে। গার্ডিয়ানের মেক্সিকোর সাংবাদিক পিনেডা বিরটোর ফোন নম্বর তালিকায় ছিল। ২০১৭ সালে তাকে হত্যা করা হয়।

এপি-র ডিরেক্টর  মিডিয়া রিলেশনস লরেন ইস্টন জানিয়েছেন, কোম্পানির দুই জন সাংবাদিক এবং অন্য সংগঠনের প্রচুর সাংবাদিকের নাম এক হাজার জনের তালিকায় আছে দেখে, তারা খুবই বিচলিত। তারা পরীক্ষা করে দেখার চেষ্টা করছেন, ওই দুই সাংবাদিকের ফোনে পেগাসাস ইনস্টল করা হয়েছিল কি না।

কনসর্টিয়াম তাদের তদন্তের কাজে টরেন্টোর সাইবার সিকিউরিটির ওয়াচডগ সংস্থা সিটিজেনস ল্যাবের সাহায্য নিয়েছে।

জিএইচ/এসজি(রয়টার্স, এপি)