বিষে কি শুধুই বিষক্ষয়?
৩১ জানুয়ারি ২০২২আর স্প্যানিশ মাছিগুলো মধ্যযুগে ভায়াগ্রার মতো ব্যবহৃত হত? প্রাণীর বিষ নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই৷ এ যেন এখনো এক অজানা দুনিয়া!
সব গুপ্তধন সোনাদানার তৈরি নয়৷ আর কখনো এমন জায়গায় এর দেখা মেলে যেখানে পাওয়ার কথা নয়৷ যেমন, পৃথিবীতে প্রায় দুই লাখ প্রজাতির বিষধর প্রাণী রয়েছে৷ এদের অনেকেই জীবন বাঁচায় এমন ওষুধের উপাদান আমাদের দিয়েছে৷ তাই বিজ্ঞানীদের কাছে তারা মহামূল্যবান সম্পদ৷
ফ্রাউনহফার ইনস্টিটিউটের ড. টিম ল্যুডডেকে একটি প্রাণী বিষ গবেষণা দলের প্রধান৷ তিনি বলেন, ‘‘ওষুধের উপাদান আছে এমন প্রাণী বিষ খোঁজা আসলে গুপ্তধন খোঁজার মতোই৷ ভবিষ্যত প্রজন্মের ওষুধ এই বিষের মধ্যে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল৷ আমাদের শুধু প্রয়োজনীয় উপাদানটি খুঁজে বের করতে হবে৷’’
কাজটি মোটেই সহজ নয়৷ কারণ প্রাণীর বিষে লাখ লাখ অণু থাকে৷ টিম ল্যুডডেকে স্থানীয় মাকড়সা প্রজাতির বিষে সেই উপাদান খুঁজছেন৷ এই প্রজাতির বিষ সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নেই কারো, যেমনটা আছে উষ্ণ এলাকার মাকড়সা সম্পর্কে৷
গবেষকরা ওয়াসপ স্পাইডারের বিষে একধরনের আলাদা প্রোটিনের অস্তিত্ব পেয়েছেন৷ কিন্তু এই প্রোটিন কীভাবে কাজ করে? প্রাণীরা তাদের বিষ ব্যবহার করে শিকার ধরে বা আত্মরক্ষা করে৷ এদের অবশ বা অচেতন করে দেয়৷ বিবর্তনের ধারায় বিষের উপাদানগুলো আরো বেশি নির্দিষ্ট ও কার্যকরী হয়ে উঠছে৷ কিন্তু মানবশরীরে এর প্রভাব কী?
ল্যুডডেকে বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত খুব অল্প সংখ্যক ওষুধই প্রাণীর বিষ থেকে তৈরি হয়েছে৷ তবে যে কয়টি হয়েছে, তার তুলনা নেই৷’’
অত্যন্ত বিরল ও একইসঙ্গে কার্যকরী এই প্রাণীর বিষ মানুষের জন্য খুবই উপকারী বলে বার বার প্রমাণিত হয়েছে- অন্তত পরীক্ষাগারে৷
যেমন হলুদ ভূমধ্যসাগরীয় বিছার স্নায়ুবিষের ক্লোরোটক্সিন মানুষের ব্রেন টিউমার সারাতে পারে৷
মৌমাছির বিষে মেলিটিন টক্সিন আছে৷ দ্রুত ছড়ায় এমন একরকম স্তন ক্যান্সার প্রতিকারে সম্প্রতি এটি কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে৷
প্রাণীর বিষের ব্যবহার সম্পর্কে আগেও মানুষ জানত৷
যেমন চার হাজার বছর আগেও চীন ও জাপানে বিষাক্ত ব্যাঙ ব্যবহার করা হত৷ ব্যাঙের চামড়ার গুড়োয় এমন বিষ আছে যা মানুষের হৃদযন্ত্র সক্রিয় করে৷ তবে সবাই ভালো কাজে বিষ ব্যবহার করেননি৷ যেমন, আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেটের সেনাসদস্যরা রাসেল ভাইপার সাপের বিষে তির চুবিয়ে ব্যবহার করতেন৷ বিষাক্ত তির শত্রুর শরীরে বিদ্ধ হলে তার রক্তচাপ ও হৃদপন্দন সাথে সাথে কমে যেত৷
অন্যদিকে, স্প্যানিশ মাছিগুলো মধ্যযুগে ভায়াগ্রার মতো ব্যবহৃত হত৷ অয়েল বিটলের বিষে যৌনক্ষমতা বর্ধক উপাদান রয়েছে৷ এই টোটকা এখনো ব্যবহার করা হয়৷
তবে ফার্মা কোম্পানিগুলোর জন্য প্রাণীবিষ থেকে ওষুধ তৈরি খুব একটা আকর্ষণীয় বিষয় নয়৷
ল্যুডডেকে বলেন, ‘‘প্রাণী বিষ বা অন্য কোন প্রাকৃতিক উপাদান থেকে ওষুধ তৈরি খুবই ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ৷ একেকটায় অন্তত দশ বছর তো লাগেই৷ কোম্পানিগুলো এ ধরনের বিনিয়োগ থেকে দূরে থাকে এবং তাই এসব কাজ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর করতে হয়৷’’
উপকারী বিষ খোঁজার এই কঠিন কাজ শুরু হয় বিষাক্ত প্রাণীদের ডেরায় হানা দেয়ার মধ্য দিয়ে৷ কারণ প্রথমে তো বিষ পেতে হবে!
মার্কুস প্লসজিউস্কি/জেডএ