1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিষে কি শুধুই বিষক্ষয়?

৩১ জানুয়ারি ২০২২

জানেন কি, চার হাজার বছর আগেও ব্যাঙের বিষ হার্টের রোগ সারাতে ব্যবহার করতেন পূর্ব এশিয়ার লোকেরা? কিংবা আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেটের সেনাসদস্যরা রাসেল ভাইপার সাপের বিষে তির চুবিয়ে ব্যবহার করতেন?

https://p.dw.com/p/46Ilb
ছবি: I. Schulz/blickwinkel/McPHOTO/picture alliance

আর স্প্যানিশ মাছিগুলো মধ্যযুগে ভায়াগ্রার মতো ব্যবহৃত হত? প্রাণীর বিষ নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই৷ এ যেন এখনো এক অজানা দুনিয়া!

সব গুপ্তধন সোনাদানার তৈরি নয়৷ আর কখনো এমন জায়গায় এর দেখা মেলে যেখানে পাওয়ার কথা নয়৷ যেমন, পৃথিবীতে প্রায় দুই লাখ প্রজাতির বিষধর প্রাণী রয়েছে৷ এদের অনেকেই জীবন বাঁচায় এমন ওষুধের উপাদান আমাদের দিয়েছে৷ তাই বিজ্ঞানীদের কাছে তারা মহামূল্যবান সম্পদ৷

ফ্রাউনহফার ইনস্টিটিউটের ড. টিম ল্যুডডেকে একটি প্রাণী বিষ গবেষণা দলের প্রধান৷ তিনি বলেন, ‘‘ওষুধের উপাদান আছে এমন প্রাণী বিষ খোঁজা আসলে গুপ্তধন খোঁজার মতোই৷ ভবিষ্যত প্রজন্মের ওষুধ এই বিষের মধ্যে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল৷ আমাদের শুধু প্রয়োজনীয় উপাদানটি খুঁজে বের করতে হবে৷’’

কাজটি মোটেই সহজ নয়৷ কারণ প্রাণীর বিষে লাখ লাখ অণু থাকে৷ টিম ল্যুডডেকে স্থানীয় মাকড়সা প্রজাতির বিষে সেই উপাদান খুঁজছেন৷ এই প্রজাতির বিষ সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নেই কারো, যেমনটা আছে উষ্ণ এলাকার মাকড়সা সম্পর্কে৷

গবেষকরা ওয়াসপ স্পাইডারের বিষে একধরনের আলাদা প্রোটিনের অস্তিত্ব পেয়েছেন৷ কিন্তু এই প্রোটিন কীভাবে কাজ করে? প্রাণীরা তাদের বিষ ব্যবহার করে শিকার ধরে বা আত্মরক্ষা করে৷ এদের অবশ বা অচেতন করে দেয়৷ বিবর্তনের ধারায় বিষের উপাদানগুলো আরো বেশি নির্দিষ্ট ও কার্যকরী হয়ে উঠছে৷ কিন্তু মানবশরীরে এর প্রভাব কী?

ল্যুডডেকে বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত খুব অল্প সংখ্যক ওষুধই প্রাণীর বিষ থেকে তৈরি হয়েছে৷ তবে যে কয়টি হয়েছে, তার তুলনা নেই৷’’

অত্যন্ত বিরল ও একইসঙ্গে কার্যকরী এই প্রাণীর বিষ মানুষের জন্য খুবই উপকারী বলে বার বার প্রমাণিত হয়েছে- অন্তত পরীক্ষাগারে৷

প্রাণীর বিষ দিয়ে ওষুধ তৈরির গবেষণা

যেমন হলুদ ভূমধ্যসাগরীয় বিছার স্নায়ুবিষের ক্লোরোটক্সিন মানুষের ব্রেন টিউমার সারাতে পারে৷

মৌমাছির বিষে মেলিটিন টক্সিন আছে৷ দ্রুত ছড়ায় এমন একরকম স্তন ক্যান্সার প্রতিকারে সম্প্রতি এটি কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে৷

প্রাণীর বিষের ব্যবহার সম্পর্কে আগেও মানুষ জানত৷

যেমন চার হাজার বছর আগেও চীন ও জাপানে বিষাক্ত ব্যাঙ ব্যবহার করা হত৷ ব্যাঙের চামড়ার গুড়োয় এমন বিষ আছে যা মানুষের হৃদযন্ত্র সক্রিয় করে৷ তবে সবাই ভালো কাজে বিষ ব্যবহার করেননি৷ যেমন, আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেটের সেনাসদস্যরা রাসেল ভাইপার সাপের বিষে তির চুবিয়ে ব্যবহার করতেন৷ বিষাক্ত তির শত্রুর শরীরে বিদ্ধ হলে তার রক্তচাপ ও হৃদপন্দন সাথে সাথে কমে যেত৷

অন্যদিকে, স্প্যানিশ মাছিগুলো মধ্যযুগে ভায়াগ্রার মতো ব্যবহৃত হত৷ অয়েল বিটলের বিষে যৌনক্ষমতা বর্ধক উপাদান রয়েছে৷ এই টোটকা এখনো ব্যবহার করা হয়৷

তবে ফার্মা কোম্পানিগুলোর জন্য প্রাণীবিষ থেকে ওষুধ তৈরি খুব একটা আকর্ষণীয় বিষয় নয়৷

ল্যুডডেকে বলেন, ‘‘প্রাণী বিষ বা অন্য কোন প্রাকৃতিক উপাদান থেকে ওষুধ তৈরি খুবই ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ৷ একেকটায় অন্তত দশ বছর তো লাগেই৷ কোম্পানিগুলো এ ধরনের বিনিয়োগ থেকে দূরে থাকে এবং তাই এসব কাজ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর করতে হয়৷’’

উপকারী বিষ খোঁজার এই কঠিন কাজ শুরু হয় বিষাক্ত প্রাণীদের ডেরায় হানা দেয়ার মধ্য দিয়ে৷ কারণ প্রথমে তো বিষ পেতে হবে!

মার্কুস প্লসজিউস্কি/জেডএ