1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিহারের ফলাফল, পশ্চিমবঙ্গের কপালে ভাঁজ

স্যমন্তক ঘোষ নতুন দিল্লি
১১ নভেম্বর ২০২০

২০২১ সালের গোড়ায় পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। বিহারের ফল পশ্চিমবঙ্গে যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে।

https://p.dw.com/p/3l7xW
ছবি: Imago Images/Pacific Press Agency/S. Paul

বিহারের ফল কি প্রভাব ফেলবে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে? রাজ্য রাজনীতিতে এখন এটাই সব চেয়ে বড় প্রশ্ন। বস্তুত, বিহার জয় বিজেপির পালে অনেকটা হাওয়া দিয়েছে। সেই হাওয়া পশ্চিমবঙ্গেও থাকবে বলে মনে করছেন দলের কেন্দ্র এবং রাজ্যের একাধিক নেতা। যদিও মনে রাখলে ভালো, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি এক নয়। ফলে বিহার সমীকরণে পশ্চিমবঙ্গ জেতা যাবে, এমন ভাবার কারণ নেই। আবার এ কথাও ঠিক যে, বিহারের শিক্ষা পশ্চিমবঙ্গে ব্যবহার করবে বিজেপি।

বিহার নির্বাচনে বিজেপি ছিল মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জোট সঙ্গী। গত পাঁচ বছর নীতীশের জেডিইউ এবং বিজেপি যৌথ ভাবে সরকার চালিয়েছে। অনেকেই মনে করেছিলেন, সরকার বিরোধী হাওয়ায় শাসকপক্ষ উড়ে যাবে এবং বিরোধীরা ক্ষমতায় আসবে। সেই সমীকরণ কি কাজ করেনি? অবশ্যই করেছে। করেছে বলেই, নীতীশের আসন কমেছে। ভোটের হার চোখে পড়ার মতো কমেছে। কিন্তু ভোট বাড়িয়েছে বিজেপি। কী ভাবে?

গত কয়েক দশকে বিহারের ভোটে অত্যন্ত গুরুত্ব পেয়েছে জাতপাতের বিষয়টি। এ বার আরজেডির নেতা এবং লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র তেজস্বী সেই হাওয়া ঘুরিয়ে দিতে পেরেছিলেন। সহযোগী দল হিসেবে পেয়েছিলেন বামেদের। অর্থনীতি, শিক্ষা, চাকরি নিয়ে ভোটের প্রচার করেছেন তাঁরা। প্রথম দুই দফার বিহার ভোটে তার প্রভাবও পড়েছে। তৃতীয় দফার ভোট হয়েছে সীমান্ত অঞ্চলে। এত দিন এই অঞ্চল ছিল আরজেডির শক্ত ঘাঁটি। বিজেপি সেখানে প্রচারে নিয়ে এসেছে হিন্দুত্ববাদী নেতা এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে। যোগী প্রচারে এসে এনআরসি, সিএএ নিয়ে কথা বলেছেন। হিন্দুত্ববাদের প্রচার করেছেন। স্বয়ং জোটসঙ্গী নীতীশ কুমারই যোগীর এই বক্তব্যের সঙ্গে প্রকাশ্যে দ্বিমত পোষণ করেছেন। কিন্তু বিজেপি হিন্দুত্ববাদী লাইন থেকে সরেনি। অন্য দিকে, এই পশ্চিমাঞ্চলেই প্রার্থী দিয়েছিল আসাদুদ্দিন ওয়েইসির এমআইএম। যারা কট্টর ইসলামপন্থী দল হিসেবে পরিচিত। ফলে সীমান্ত অঞ্চলের ভোট ধর্মীয় মেরুকরণের ভিত্তিতে হয়েছে। সেখানে অন্য প্রসঙ্গগুলি ধোপে টেকেনি। বিজেপি তার ফসল তুলেছে।

২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের ভোটে ঠিক এই কাজটিই করেছিল বিজেপি। ২০১৪ এবং ২০১৬ সালের যথাক্রমে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ভোট পেয়েছে নয় শতাংশ এবং ১২ শতাংশের কাছাকাছি। সেই বিজেপি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ভোট পেয়েছে ৪০ শতাংশ। কারণ, হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণের রাজনীতি তারা সফল ভাবে করতে পেরেছে। অন্য বিষয়গুলি থেকে চোখ সরিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণের অঙ্ক সফল ভাবে তৈরি করতে পেরেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলও বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতির ন্যারেটিভে পা দিয়েছে। বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাম এবং কংগ্রেসকে সরানোর লক্ষ্যে মমতা আগেই মেরুকরণের একটি ন্যারেটিভ তৈরি করেছিলেন। বিজেপিকে প্রধান রাজনৈতিক শত্রু হিসেবে তৈরি করেছিলেন। বিজেপি সেই অঙ্ক চমৎকার ভাবে ব্যবহার করেছে লোকসভা নির্বাচনে।

Syamantak Ghosh
স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

লোকসভা আর বিধানসভা এক নয়। বিধানসভা ভোটে স্থানীয় বিষয়গুলি গুরুত্ব পায়। শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে স্বাভাবিক ভাবেই এক ধরনের অ্যান্টি ইনকমবেন্সি আছে। সেখানে ধর্মীয় মেরুকরণ আরো প্রকট হলে বিজেপি কিছুটা হলেও অতিরিক্ত সুযোগ পাবে। সেই জমি ক্রমাগত পশ্চিমবঙ্গে তৈরিও করছে বিজেপি।

পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু ভোট প্রায় ৩৩ শতাংশ। মুসলিম ভোট ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। বিভিন্ন পকেট মুসলিম প্রধান অথবা হিন্দু প্রধান। ফলে শতাংশের হিসেবে মেরুকরণ হবে না। কিন্তু মেরুকরণের হাওয়া যখন তৈরি হয়, তখন তার এক ধরনের সামগ্রিক বাতাবরণ তৈরি হয়। লোকসভা নির্বাচনে সেই হাওয়া পশ্চিমবঙ্গ দেখেছে। তৃণমূল যদি সেই পুরনো ন্যারেটিভ বদলাতে না পারে, বাম এবং কংগ্রেস যদি নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করতে না পারে, তা হলে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ভালো লড়াই দেবে। ফলাফল কী হবে তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। তবে বিহার নির্বাচনের মতোই যে পশ্চিমবঙ্গের ভোটের ফলাফলও আইপিএলের উত্তেজনা আনতে পারে, তাতে সন্দেহ নেই।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷