1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‘বিড়ম্বনার ভোটে উপস্থিতি কম’’

সমীর কুমার দে, ঢাকা৫ জানুয়ারি ২০১৪

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১৫৩টি আসনে একক প্রার্থী থাকায় রবিবার অর্ধেকের বেশি আসনে ভোটগ্রহণ হয়নি৷ ঢাকারও অনেক আসনে ভোটগ্রহণ হয়নি৷ তবুও যেসব স্থানে ভোট নেয়া হয়েছে, সেসব স্থান পর্যবেক্ষণ করেছেন আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি৷

https://p.dw.com/p/1AlRa
Bangladesch Parlamentswahlen
সঠিক কেন্দ্র খুঁজে পাননি অনেক ভোটারছবি: AFP/Getty Images

রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা আতিয়ার রহমান৷ পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী৷ সকাল এগারোটায় ভোট দিতে যান হলি ক্রিসেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে৷ বাইরে থেকে নিজের ভোটার সিরিয়াল সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু ‘জাতীয় পরিচয় পত্র' সঙ্গে না নেয়ার কারণে তিনি নিজের সিরিয়াল খুঁজে পাননি৷ অনেক চেষ্টার পর প্রার্থীর এজেন্টরা তাকে জানায় তার কেন্দ্র এখানে নয়৷ কিন্তু কোনো কেন্দ্রে গেলে তিনি ভোট দিতে পারবেন তাও তারা জানাতে পারেনি৷ বাধ্য হয়ে সেখান থেকে তিনি ছুটে যান পাশের ফুলকি নার্সারী স্কুল কেন্দ্রে৷ সেখানেও একই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাঁকে৷ সেখানেও দীর্ঘ চেষ্টার পর তাঁকে জানানো হয় তাঁর নাম লিষ্টে নেই৷ এরপর তিনি ফিরে যান বাসায়৷

Bangladesch Parlamentswahlen
‘‘আমাদের কিসের ঠেকা পড়েছে, যে এভাবে ভোট দিতে হবে?’’ছবি: DW/S. Kumar Dey

জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে আবার ভোটের উদ্দেশ্যে বের হন আতিয়ার রহমান৷ অথচ ভোট দিতে এই পরিচয় পত্রের কোনো দরকার নেই৷ এরপর তিনি যান হাজী আশ্রাফ আলী হাইস্কুল কেন্দ্রে৷ সেখানে কম্পিউটারে তল্লাশি চালিয়ে এজেন্টরা জানায় এখানেই তাঁর ভোট৷ সিরিয়াল নম্বর নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশের পর আরেক বিড়ম্বনা৷ একই স্কুলের মধ্যে ৭টি কেন্দ্র৷ তাঁর কেন্দ্র আসলে কোনটা? কেন্দ্রের ভোট কক্ষের বাইরে কেউ কিছু বলতেও পারছে না৷ এক পর্যায়ে একজন আনসার সদস্য তাকে সহযোগিতা করেন৷ শেষ পর্যন্ত তিনি ভোট দিতে সমর্থ হন৷

বের হওয়ার সময় বেলা একটায় সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে খুলে দিলেন অভিযোগের ঝাঁপি৷ রাগে, ক্ষোভে বিরক্ত এই ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘এভাবে ক’জন দুই ঘণ্টা চেষ্টা করে ভোট দেবে? আমাদের কিসের ঠেকা পড়েছে, যে এভাবে ভোট দিতে হবে?''

শুধু আতিয়ার নয়, খোদ রাজধানীর বহু ভোটারকে একই ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে৷ কেন্দ্র খুঁজতে গিয়ে গলদঘর্ম তাদের৷ অনেকে ভোট না দিয়ে ফিরেও গেছেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী রোকসানা আক্তার শেওড়াপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে নিজেদের বাড়িতে থাকেন৷ বাসার পাশেই ইস্ট ওয়েস্ট স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে নিজের নাম খুঁজে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন বাসায়৷ এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ক্ষুব্ধ রোকসানা বললেন, ‘‘অত চেষ্টা করতে পারব না৷ আর এবার কোনো প্রার্থী বাসায় ভোটার নম্বরও পাঠায়নি৷'' বিরক্ত রোকসানা এক পর্যায়ে নির্বাচন নিয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন৷

Bangladesch Parlamentswahlen
প্রার্থীদের এজেন্টদের কাছে নিজের সিরিয়াল নম্বর খুঁজতে মানুষের জটলা ছিল চোখে পড়ার মতো (ফাইল ফটো)ছবি: DW/S. Kumar Dey

ঢাকা-১৫ আসনে প্রধানত দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে৷ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এখলাছ উদ্দিন মোল্লা এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন৷ কোনো প্রার্থীকেই খুব একটা ভোট চাইতে দেখা যায়নি৷

সকাল ৯টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত মিরপুরের বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, কেন্দ্রের মধ্যে কোনো লাইন নেই৷ নেই ভোটারদের চাপ৷ তবে বাইরে প্রার্থীদের এজেন্টদের কাছে নিজের সিরিয়াল নম্বর খুঁজতে মানুষের জটলা ছিল চোখে পড়ার মতো৷

হলি ক্রিসেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জনতা ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার কামরুল হাসান জানান, তাঁর কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ১৫৩ জন৷ সকাল ১০টায় এখানে কাষ্ট হয় ১৭ ভোট৷ বেলা ১টায় গিয়ে দেখা গেছে ওই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১৭৩টি৷

একই অবস্থা ইস্ট ওয়েস্ট স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে৷ এই স্কুলে তিনটি কেন্দ্র৷ প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোটার ছাব্বিশ শত'র বেশি৷ বেলা দেড়টা পর্যন্ত এসব কেন্দ্রে কাষ্ট হয়েছে ১০০ থেকে দেড়শ'র মতো ভোট৷ এর একটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার পাট গবেষণা ইনষ্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাকসুদার রহমান বলেন, ‘‘বেলা ১টা পর্যন্ত ভোট কাষ্ট হয়েছে ১০ শতাংশেরও কম৷''

ভোটার উপস্থিতি এত কম কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে হাজী আশ্রাফ আলী হাই স্কুলের একটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জনতা ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘ভোটার সিরিয়াল নম্বর খুঁজে পেতে অনেক বিড়ম্বনায় পড়ছেন ভোটাররা৷ অনেক ভোটার ভোট দিতে এসে তাদের কাছে এই অভিযোগ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এতে তাদের কিছুই করার নেই৷ আগে তো প্রার্থীরাই ভোটারদের কাছে সিরিয়াল নম্বর পৌঁছে দিত৷ এবার কোনো প্রার্থী এমনটি করেনি বলেই ভোটারদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে৷'' তবে দুপুরের পর কিছু ভোটার বাড়তে পারে বলে ধারণা করেন তিনি৷ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভোটের ফ্লো একটু বেড়েছে বলে বেলা দুইটার দিকে জানান এই নির্বাচনি কর্মকর্তা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য