বুড়ো-বুড়িদের দেখভাল নিয়ে সমস্যায় পড়েছে জার্মানি
২২ অক্টোবর ২০১১চক্রের ঘূর্ণন শুরু হয় সেই জন্ম লগ্ন থেকে৷ ছোটবেলা কাটিয়ে উঠে কৈশোর, তারপর যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব, বার্ধক্য, আর সবশেষে অনিবার্য মৃত্যু৷ এই ধ্রুব সত্য শুধু আপনার-আমার নয়, সবার জন্যই৷ কিন্তু, চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিকীকরণের ফলে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশি৷ এতে ডাক্তার, ব্যাঙ্ক ও বিমা কোম্পানিগুলির পসার বৃদ্ধি পেলেও, দেখা দিয়েছে নতুন সমস্যা৷
জার্মান সমাজব্যবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর, বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব আমাদের দেশের মতো নয়৷ পশ্চিমের অন্যান্য দেশগুলির মতো এখানেও সামাজিক নিরাপত্তা বেশি৷ অর্থাৎ, জার্মানিতে বৃদ্ধ বাবা-মা বৃদ্ধাশ্রমে যাবেন অথবা তাদের নিজেদের খরচ নিজেরাই বহন করবেন – এটাই স্বাভাবিক৷ কর্মজীবনের উপার্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, এজন্য সরকারি ভাতাও পেয়ে থাকেন তাঁরা৷ তারপরও মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়া এবং তার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ফলে বৃদ্ধ মানুষদের দেখাশোনা করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে৷
তাই সম্প্রতি পরিবারে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থাকলে, তাঁদের দেখাশোনা ও যত্নের জন্য চাকুরিজীবী ছেলে-মেয়ে বা স্বজনদের কাজের সময় কমিয়ে আনার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার৷ গত বৃহস্পতিবার, জার্মান সংসদে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনাও হয়েছে৷ সন্তানদের দেখাশোনার জন্য যেমন বিশেষ আইন আছে, ঠিক তেমনই এবার বৃদ্ধ বাবা-মা বা আত্মীয়স্বজনদের যত্ন নেওয়ার জন্য আইন তৈরির ব্যাপারে উঠে-পড়ে বসেছে জার্মানি৷ তবে শুধু পরিবারের সদস্যদের জন্য আইন প্রণয়নই নয়, যাঁরা বৃদ্ধাশ্রমগুলিতে কাজ করেন অথবা বিভিন্ন হাসপাতাল, নার্সিং হোমে বয়স্ক মানুষদের সেবা করেন – তাঁদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিতেও এগিয়ে এসেছে সরকার৷
সাধারণত এ ধরণের পেশার প্রতি আগ্রহ দেখা যায় না তরুণ প্রজন্মের মধ্যে৷ আর দেখা যাবেই বা কেন? দিন নেই, রাত নেই – যে কোনো সময় ডিউটি, ছোট ‘টিম' অথচ বেশি কাজের চাপ, তার ওপর আবার কম মাইনে – সব কিছু মিলিয়ে এ পেশা খুব একটা আকৃষ্ট করে না তাঁদের৷ তাই জার্মানির অনেক পরিবার বা বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা অর্থের বিনিময়েও ভালো ‘কেয়ারটেকার' বা ‘নার্স'-এর সন্ধান পান না৷ এ জন্য সরকারের তরফ থেকে এ ধরণের পেশাকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে৷
জার্মান নার্সিং কাউন্সিল-এর কর্মকর্তা আন্দ্রেয়াস ভেস্টারফেলহাউস জানান, ‘‘সব সময়ই ডাক্তারদের স্বল্পতার কথা শোনা যায়৷ অথচ কেউই নার্স বা সেবক-সেবিকাদের অপ্রতুলতার কথা বলে না৷ অথচ ২০২৫ সালের মধ্যে জার্মানিতে আরো প্রায় তিন লক্ষ নার্সের প্রয়োজন৷ কোথা থেকে আসবেন তাঁরা?''
তাই স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে৷ নার্সদের উপার্জন বৃদ্ধি করে, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে পারলে সম্ভব হবে আরো বেশি সংখ্যক মানুষকে এই পেশায় নিয়ে আসা৷ যদিও ডায়না আন্দ্রেজেভেস্কি'র মতে, ‘‘সেবার ইচ্ছে এবং আত্মত্যাগের একটা ভাবনা ছাড়া এ পেশায় আসার কোনো মানেই হয় না৷ ''
সত্যি, অন্যের সেবা করাকেই নিজের জীবনের মূলমন্ত্র বলে ধরে নিয়েছেন ডায়না৷ আর সে কারণে অন্য কিছু করার কথা ভাবতেই পারেন না তিনি৷
প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক