বুলিংয়ের যত রকমফের
একসময় স্বাভাবিক বা হালকাভাবে নেয়া হতো এমন অনেক আচরণকে বুলিং হিসেবে এখন চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞ ও আইনপ্রণেতারা৷ আপনার বা আপনার আশেপাশের কারো আচরণ কি বুলিংয়ের মধ্যে পড়ে কিনা জেনে নিন ছবিঘরে৷
বুলিং কী?
অ্যামেরিকান সাইকোলোজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বুলিং হলো ইচ্ছাকৃত ও বারবার করা এমন ধরনের আক্রমণাত্ত্বক আচরণ যা অন্যকে আহত করে বা অস্বস্তিতে ফেলে৷ বুলিং শারীরিকভাবে, কথার মাধ্যমে বা চতুর কার্যকলাপের মাধ্যমে সংঘটিত হতে পারে৷
বুলিংয়ের প্রকারভেদ
বুলিং প্রতিরোধ ও সচেতনতা তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়েবসাইট ‘স্টপবুলিং’ (stopbullying.org)-এ তিন ধরনের বুলিংয়ের কথা বলা হয়েছে৷ সেগুলো হলো: মৌখিক বুলিং, সামাজিক বুলিং ও শারীরিক বুলিং৷ যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন্সসহ বিভিন্ন দেশে বুলিং প্রতিরোধে আলাদা আইন রয়েছে৷
মৌখিক বুলিং
কাউকে উত্যক্ত করা, গালাগাল বা অপমানসূচক কথা বলা, অনুপযুক্ত যৌন মন্তব্য, বিদ্রুপ বা উপহাস, কারো ক্ষতি করার জন্য হুমকি দেয়া এ ধরনের বুলিংয়ের মধ্যে পড়ে৷ এমনকি কারো নাম নিয়ে তাকে ঠাট্টা বা অপমান করলেও বুলিং হিসেবে গণ্য হবে৷
সামাজিক বুলিং
কারো সুনাম বা সম্পর্ক ক্ষুন্ন করা সামাজিক বুলিং-এর মধ্যে পড়ে৷ উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউকে বিচ্যুত করা, কোন শিশুকে কারো সাথে বন্ধুত্ব গড়তে মানা করা, কারো নামে গুজব ছড়ানো, জনসম্মুখে কাউকে বিব্রত করা এ ধরনের আচরণের উদাহরণ৷
শারীরিক বুলিং
কাউকে শারীরিকভাবে আঘাত করা বা লক্ষ্যবস্তু করা এ ধরনের বুলিংয়ের মধ্যে পড়ে৷ এর মধ্যে রয়েছে আঘাত, কিল বা ঘুষি, থুতু দেয়া, ধাক্কা দেয়া, কারো কিছু কেড়ে নেয়া বা ভেঙে ফেলা, অভদ্র অঙ্গভঙ্গি করা ইত্যাদি৷
আরো যেসব বুলিং
মোটাদাগে এই তিন ধরনের বুলিংয়ের বাইরেও একসময় স্বাভাবিক বা হালকাভাবে নেয়া হতো এমন অনেক আচরণকে বুলিং হিসেবে এখন চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা৷ ক্যানাডায় বুলিং প্রতিরোধে কাজ করা গবেষকদের নেটওয়ার্ক প্রিভনেট তাদের তালিকায় বর্ণবাদ, ধর্ম, যৌন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সংক্রান্ত বুলিংকে অন্তর্ভুক্ত করেছে৷
ইলেক্ট্রনিক বা সাইবার বুলিং
ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে বুলিংয়ের ঘটনা ঘটছে হরহামেশা৷ কাউকে ই-মেইল, ফোন, লিখিত বার্তা পাঠিয়ে কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করে হুমকি, হয়রানি, বিব্রত করা হচ্ছে৷ সামাজিকভাবে মানুষকে হেয়, সম্মানহানি, বন্ধুত্বে চিড় ধরানো হচ্ছে৷ এসব আচরণকে ইলেক্ট্রনিক বা সাইবার বুলিংয়ের উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছে প্রেভনেট৷
জাতি পরিচয়ের কারণে হেনস্থা
কারো জাতিগত বা নৃতাত্ত্বিক পরিচয় তুলে তাকে হেয় করা বুলিংয়ের মধ্যে পড়ে৷ কারো সংস্কৃতিকে উপহাস করা, জাতিবিদ্বেষী নামকরণ, নেতিবাচক শব্দের ব্যবহার বা এ নিয়ে কৌতুক করাকেও বুলিং হিসেবে দেখা হয়৷ সাধারণত সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, শরণার্থী, আদিবাসি, সংখ্যালঘুদের প্রতি হরহামেশা এমন আচরণ লক্ষ্য করা যায়৷
ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে হেনস্থা
কারো ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ, ধর্মীয় বিশ্বাস বা আচার নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য, কাউকে আঘাত দেয়ার উদ্দেশ্যে তার ধর্ম নিয়ে কৌতুক ও নামকরণ করাকেও বুলিং হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ক্যানাডার বিশেষজ্ঞরা৷
যৌন পরিচয়ের কারণে বুলিং
কারো যৌন পরিচয়ের কারণে তাকে আলাদা করা, তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা অথবা তিনি অস্বস্তি বোধ করেন এমন কিছু করা বুলিং৷ নারীদেরকে হেয় করে মন্তব্য, কৌতুকও এর মধ্যে পড়ে৷ এছাড়া স্পর্শ ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে জড়িয়ে ধরা, যৌন পরিচয় ও আচরণ নিয়ে রুঢ মন্তব্য ও এ সংক্রান্ত গুজব ছড়ানোকেও বুলিং হিসেবে দেখা হয়৷ বিশেষ করে এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর সদস্যরা বিভিন্ন দেশেই এমন বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন৷
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বুলিং
বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের প্রতি এখনও বিভিন্ন সমাজে বিরুপ আচরণ লক্ষ্য করা যায়৷ প্রতিবন্ধকতার জন্য তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করা বা খারাপ আচরণকে বুলিং হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রেভনেট৷ তাদের সঙ্গে এমন আচরণ, কৌতুক করা যাবে না যাতে তারা অস্বস্তি বোধ করতে পারেন৷
কর্মক্ষেত্রে বুলিং
বিভিন্নদেশে কর্মক্ষেত্রে বুলিংকেও এখন বেশ গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে৷ কর্মক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা বা ব্যবস্থাপক, অন্য ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দ্বারা মৌখিক, শারীরিক, সামাজিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হলে অস্ট্রেলিয়ার আইনে প্রতিকারের ব্যবস্থা রয়েছে৷ ক্যানাডার আইন অনুসারে কর্মীদের কেউ যাতে এই ধরনের ঝুঁকিতে না পড়েন নিয়োগকর্তাকে তা নিশ্চিত করতে হবে৷