বেঁচে থাকার বাজেটেও দুর্নীতির ভয়
১০ জুন ২০২০চলতি বাজেট পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার৷ অর্থমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, বাজেট মানুষের জন্য৷ স্বাস্থ্যখাতই প্রাধান্য পাবে৷
আর সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, ‘‘পৃথিবীর ইতিহাসে এখন একটা ক্রিটিক্যাল টাইম৷ এবার বাজেট দেয়াই সাহসের বিষয়৷ তবে এই বাজেটে অনেক কিছুই অনিশ্চিত থাকবে৷ কারণ আমরাতো জানিনা এই দুর্যোাগ শেষ হবে কবে৷’’
এবারের বাজেট হবে সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড় ঘাটতি বাজেট৷ অর্থনীতিবিদেরা বলছেন এবারো বাজেটে রাজস্ব আদায়ই বড় চ্যালেঞ্জ৷ আর আর মূল চ্যালেঞ্জ হলো দুর্নীতি ঠোকানো ও বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষমতা৷ এগুলো নিশ্চিত করতে না পারলে এই সংকটকাল আরো ঘনীভূত হবে৷ ক্ষতি কমানোই হবে বাজেটের সফলতা৷
২০০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৮.২ ভাগ৷ করোনার কারণে এই লক্ষ্য যে অর্জিত হচ্ছে না তা সবারই জানা৷ তবে প্রবৃদ্ধি কমে ২.৫ ভাগে নেমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত৷ তবে এবারও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮.২ ভাগ৷ আগামী বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা৷
সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘আমাদের হিসেবে চলতি অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি থাকবে৷ তারপরও সরকার আরো বড় বেশি পরিমাণে রাজস্বের হিসাব করে বাজেট দিতে যাচ্ছে, যা আদায় করা কঠিন হবে৷ বাজেট বাস্তবায়নেও দক্ষতার অভাব আছে, আছে দুর্নীতি৷ দক্ষতা বাড়ানো এবং দুর্নীতি কমানো না গেলে এই সংকট থেকে উত্তরণ কঠিন হয়ে পড়বে৷ আমাদের হিসেবে চলতি বাজেটে প্রবৃদ্ধি হবে ২.৫ শতাংশ ৷ বিশ্বব্যাংক অবশ্য আরো কম বলছে৷ আগামী বাজেটের প্রবৃদ্ধি নির্ভর করছে আমরা কত দ্রুত স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারব তার ওপর৷ মনে হচ্ছে এই ঝুঁকি আগামী বছরও প্রলম্বিত হবে৷ আর তাহলে প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না৷’’
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত মনে করেন এবার স্বাস্থ্যের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে৷ কিন্তু সমস্যা হবে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ায়৷ উৎপাদন না থাকলে রাজস্ব আসবে কোথা থেকে৷ তবে আমাদের একটা সুবিধা আছে ৷ আমাদের ঘাটতি হলো ৪.৫ ভাগ৷ তাই এটা বাড়িয়ে ৭ বা তার কিছু বেশি করলে হয়তো পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেয়া যাবে৷’’
এবার বাজেটে রাজস্বসহ সব মিলিয়ে মোট আয় ধরা হচ্ছে তিন লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা৷ বাজেটে ঘাটতি হবে এক লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা৷ এই ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে এবার বড় আকারে ঋণের পরিকল্পনা আছে সরকারের৷ তবে তা আবার তারল্য সংকট তৈরি করতে পারে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা৷ ফলে এবারের বাজেটটি বেশ জটিল৷ বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় ধরা হচ্ছে হবে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা৷
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এবারের বাজেটে দর্শনগত চিন্তায় পরিবর্তন আনতে হবে৷ এবারের বাজেট হবে টিকে থাকার, বেঁচে থাকার৷ ক্ষতি কত কমানো যায় সেটাই বিবেচনায় নিতে হবে৷ বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘যেহেতু ঝড়টা চারিদিকে তাই অর্থনীতির হালটা ধরে রাখতে পারলেই হলো৷ জীবনের ক্ষতি যত কম হয়, জীবিকার ক্ষতি যত কম হয়, উন্নয়ন সম্ভাবনার ক্ষতি যত কম হয় সেটাই বাজেটে মূল লক্ষ্য হতে হবে৷স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে শুধু বেশি বরাদ্দ দিলেই হবে না৷ সেটার সুবিধা মানুষ যাতে পায় তার নিশ্চয়তা দিতে হবে৷ দুর্নীতি যেন সবকিছু খেয়ে না ফেলে৷’’
বজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ কোনোই কাজে আসবেনা যদি তাদের বিনিয়োগের খাত স্পষ্ট না করা হয় বলে মনে করেন ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম৷ তিনি বলেন, ‘‘কালো টাকার জন্য প্রণোদনা নয়, দণ্ডের ব্যবস্থা থাকতে হবে৷ তা না হলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না৷’’
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, ‘‘এবারের বাজেটে আমরা কৃষি ও স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দিয়েছি৷ স্বাস্থ্যখাত নিয়ে আগামী ২০ বছরের পরিকল্পনা থাকবে৷ কিভাবে মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা যায়, কিভাবে সেই স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দুয়ারে পৌছে দেওয়া যায় সেই পরিকল্পনা থাকছে৷’’
সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে বুধবার বিকেলে৷ বৃহস্পতিবার বাজেট পেশ করা হবে৷ এবার অধিবেশনে সব সংসদ সদস্য একবারে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না৷ করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে তারা ভাগে ভাগে অংশ নিচ্ছেন৷
গতবছরের বাজেট নিয়ে ছবিঘর