বেসরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি সিনিয়র ডাক্তারদের
১০ অক্টোবর ২০২৪ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলে জুনিয়র চিকিৎসকরা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অনশনের সাড়ে চার দিন পার হয়ে গিয়েছে। সরকারের সঙ্গে আলোচনা নিষ্ফল হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হুঁশিয়ারি দিলেন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের হুঁশিয়ারি
সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা গণ ইস্তফা দিয়েছেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র চিকিৎসকরা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, কর্মবিরতি থেকে অনশনের কর্মসূচি নিয়েছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকরা এই আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছেন, তারা প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নিয়েছেন। এবার সরকারের চিন্তা বাড়িয়ে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা কর্মবিরতির পথে হাঁটছেন।
কলকাতার সবচেয়ে বড় বেসরকারি হাসপাতাল ই এম বাইপাসের উপর অবস্থিত। সেখানকার সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ বুধবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একাংশকে চিঠি দিয়ে কাজ বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
বিভিন্ন বিভাগের ২৩ জন চিকিৎসক ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। চলতি আন্দোলনে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বলেছেন, "আমাদের ভাইবোনেরা, সহকর্মীরা আমরণ অনশন করছেন। সরকারের দিক থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে হাত মেলাতে সোমবার থেকে আমরা যারা কনসালট্যান্ট রয়েছি, তারা অত্যন্ত জরুরি ছাড়া বাকি পরিষেবা প্রত্যাহার করব।"
এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালের সহকর্মীদের এগিয়ে আসার বার্তা দিয়েছেন। ডা. রাম বলেন, "সবাইকে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। সবাইকে বার্তা দিতে হবে, আমরা সবসময় জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে রয়েছি।"
এই প্রবণতা অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে। বেসরকারি হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, "একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ওপিডি বন্ধের ডাক দেয়া হয়েছে। অন্য হাসপাতালে এটা ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে সরকার যখন অসংবেদনশীল আচরণ করছে। দেখা যাক, আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। এখনো আমরা সবাই কাজেই আছি, সিনিয়ররা কর্মবিরতি করেননি। জুনিয়ররা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেই অনশনে বসেছে।"
পাশে সিনিয়ররা
ধর্মতলার ধর্নামঞ্চে অনশন করছেন পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজের সাত জন জুনিয়র ডাক্তার। তবু কেন সরকার ১০ দফা দাবিতে মান্যতা দিচ্ছে না, এই প্রশ্ন তুলে সরকারি হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকরা কর্মবিরতির কথা না বললেও গণ ইস্তফা দিয়েছেন।
প্রথমে আর জি কর মেডিক্যালের প্রায় ৫০ জন সিনিয়র চিকিৎসক একসঙ্গে ইস্তফা দেন। সবমিলিয়ে সেখানে ১০০ র বেশি চিকিৎসক পদত্যাগ করেছেন। এরপর রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা ইস্তফা দিয়েছেন। রাজ্য জুড়ে কমবেশি ২০০ জন সিনিয়র চিকিৎসক ইস্তফা দিয়ে আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন।
এর মধ্যে রয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ৭০ জন। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ৩৫ জন সিনিয়র পদ ছেড়েছেন।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ৫০ জন, জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের ১৯ জন সিনিয়র চিকিৎসক ইস্তফা দিয়েছেন। সাগর দত্ত মেডিক্যালে গণ ইস্তফার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ৩০ জন চিকিৎসক। একই ইঙ্গিত মিলেছে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকদের গণ ইস্তফার কোনো আইনি বৈধতা নেই বলে প্রশ্ন উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো চিকিৎসক চাইলেই পদত্যাগ করতে পারেন না। সমষ্টি নয়, ব্যক্তিগতভাবে ইস্তফাপত্র দিতে হবে। পদত্যাগের চিঠি পাঠানোর পর থাকবে নোটিস পিরিয়ড। এরপর আবেদন মঞ্জুর হলে অব্যাহতি পাবেন চিকিৎসক।
যদিও পদত্যাগী চিকিৎসকরা বলছেন, তারা সরকারকে বার্তা দিতে গণ ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেউ কাজ বন্ধ করছেন না, সেটা গোড়া থেকেই বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার, মহাসপ্তমীর দুপুরে সিনিয়র চিকিৎসকদের একটি দল অনশন মঞ্চে যান। অনশন প্রত্যাহার করে অন্য উপায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ তারা জুনিয়রদের দিয়েছেন।
এই অচলাবস্থার সমাধান কোথায়?
সিনিয়র চিকিৎসক কুণাল সরকার ডিডাব্লিউ কে বলেন, "হাসপাতাল কিন্তু পেট্রল পাম্প বা ব্যাংক নয়। স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পূর্ণ থমকে যাবে, এটা কল্পনা করা যায় না। অল্পবয়সি নিরপরাধ ছেলেমেয়ে জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করছেন। এর মধ্যে উভয় পক্ষের জেদ আছে। কোথাও আমাদের এই বৃত্তকে ভাঙতে হবে। এর দায়িত্ব অবশ্যই রাজ্য সরকারের। আমরা যে খাদ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছি, সেটা আটকাতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ জরুরি। আশা করি তিনি সেটা করবেন।"