‘বেহাল অবস্থায় ব্যাংকিং খাত'
৭ আগস্ট ২০১৮ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার সার্বিক চিত্র এই মুহূর্তে কেমন বলে মনে করেন আপনি?
এম এম আকাশ: বেশ হতাশাজনক৷ এমনকি কোনো কোনো ব্যাংক তো একেবারে আতঙ্কজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে৷ এর মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক একটা৷ এটা তো দেউলিয়া হবে কি হবে না, এই পর্যায়ে পৌঁছে গেছে৷
আর খেলাপী ঋণের পরিমাণ মতান্তরে ৭১ হাজার কোটি টাকা, কেউ কেউ বলে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা৷ এই পরিমাণ খেলাপী ঋণ থাকলে এবং আপনার টোটাল আউটস্ট্যান্ডিং ঋণের ১০ পার্সেন্ট খেলেপী ঋণ হয়ে গেলে, যেটা উপমহাদেশের অন্যান্য জায়গায় ৩-৫ শতাংশ৷ সুতরাং এটা তো খুবই আতঙ্কজনক এবং হতাশাজনক৷
রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোতে একের পর এক অনিয়ম ধরা পড়ছে৷ কেন্দ্রীয় ব্যংকের ভূমিকা এখানে কী?
দেখুন, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর পরিচালনা এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একক কর্তৃত্বাধীন নেই৷ এটা পরিচালনার দায়িত্ব চলে গেছে ফিন্যান্স মিনিস্ট্রির ব্যাংকিং বিভাগের অধীনে৷ তাঁরা বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের মালিক সরকার, সুতরাং সরকার এটা পরিচালনা এবং দেখভালের দায়িত্ব নেবে৷ সেইভাবে ওখানে আলাদা একটা ব্যাংকিং বিভাগ খুলে এর দায়িত্ব নিয়েছে৷ কিন্তু দ্বৈত কর্তৃত্বের কারণে, যখন কোনো অনিয়ম হচ্ছে, তখন একে অপরকে দোষারোপ করার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে৷ সেই সুযোগে অপরাধীরা মাফ পেয়ে যাচ্ছে৷
প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর ওপর কেন্দ্রের নজরদারি কেমন?
প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর পরিচালনা বোর্ড গঠনেই গলদ আছে৷ পরবর্তীতে এই দফায় কিছুটা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে৷ কিন্তু তারপরও আমার ধারণা অদক্ষ-অপেশাদার সরকারি দলের সঙ্গে সংযুক্ত এমন লোকের আধিপত্যই বেশি৷ ফলে তাঁরা যে দায়িত্বটা পালন করার কথা, তা ঠিকমতো পালন করছে না৷ আমি বলছি না যে দুর্নীতিবাজ সবাই৷ কিন্তু ব্যাংকের বোর্ডে তো পেশাদার দক্ষ লোকজনকে নিয়োগ দিতে হবে৷ সেখানে তো অন্যধরনের লোক নিয়োগ সুবিধা হবে না৷
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, ব্যাংকের কার্যক্রমে মানুষের মনে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে৷ এই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার উপায় কী?
যেসব রাঘববোয়ালরা দুর্নীতি করেছে এবং খেলাপী ঋণ করেছে তাদের এই খেলাপী ঋণ এবং দুর্নীতির সঙ্গে যেসব ব্যাংক কর্মচারীরা, রাজনীতিবিদরা এবং সরকারি কর্মচারীরা জড়িত আছেন, তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে৷ রাঘববোয়ালদের বাধ্য করতে হবে ঋণ পরিশোধে৷ যদি এ ধরনের কিছু শাস্তি দেয়া যায়, তাহলে হয়তো মানুষের আস্থা ফিরে পাওয়া যাবে এবং ব্যাংকগুলো তখন শৃঙ্খলার মধ্যে আসতে শুরু করবে৷
অনেকেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পর দেশের আর্থিক খাত ঢেলে সাজানোর কথা বলছেন৷ আপনার প্রস্তাব কী?
প্রথমত, পরিচালনা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আমি যে ত্রুটিগুলার কথা বললাম সেগুলো দূর করা৷ তারপর, সোজা কথা, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হবে বাংলাদেশ ব্যাংক৷ এবং তাকে চূড়ান্ত ক্ষমতা দিতে হবে এবং পেশাদারি দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের এই দায়িত্বে নিয়োগ করতে হবে৷ সেরকম লোক আছে বাংলাদেশ ব্যাংকে, তাঁরা সেসব দক্ষ লোকদের দায়িত্ব দিতে পারে৷ তাঁদের যদি ফিল্ড ভিজিট করে ইন্সট্যান্ট ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার দেয়া যায়, এবং তাঁরা যদি একই সাথে পাবলিক ব্যাংক এবং প্রাইভেট ব্যাংকের দেখভাল করার দায়িত্ব পায়৷
যেমন ভারতে রিজার্ভ ব্যাংক যেসব নীতিতে চলে এবং যেসব ক্ষমতা নিয়ে চলে, সেরকম নীতি ও ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংককে দিলে এখনও একটা সম্ভাবনা আছে অ্যকাউন্টেবিলিটি নিশ্চিত হবে এবং ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে৷ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশ হওয়ার জন্য যে ধরনের ফিনানশিয়াল সিস্টেম দরকার, সেটা আমরা পাবো৷
অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশের সাক্ষাৎকারটি কেমন লাগলো? লিখুন নীচের ঘরে৷