বেড়ে চলেছে শিশু অধিকার লংঘন
২৩ অক্টোবর ২০০৯১৯৪৮ সালের সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা পত্রে সাধারণভাবে সবার অধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু আলাদা করে শিশুদের অধিকার রক্ষায় বিশেষ কোন অনুচ্ছেদ সেখানে নেই৷
শিশুদের অধিকার রক্ষা করতে ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে কনভেনশন অন দ্যা রাইট অফ চাইল্ড অনুমোদন করা হয়৷ সবগুলো সদস্য দেশ তাতে স্বাক্ষর করে, সমর্থন জানায়৷ শুধু দুটি দেশ কনভেনশনটি অনুমোদন করতে অস্বীকার করে৷ অ্যামেরিকা এবং সোমালিয়া৷
গত ২০ বছরে সারা বিশ্বে শিশু অধিকার লংঘন বেড়েছে৷ যে সব দেশ কনভেনশন স্বাক্ষর করেছে সেদেশগুলোতেও তা দেখা গেছে৷ বিশেষ করে পর্নোগ্রাফী, পতিতাবৃত্তি, শিশুশ্রম বৃদ্ধি পেয়েছে আশংকাজনক হারে৷ প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে বিশ্ব কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি হয়েছে কাল৷
স্বীকার করতেই হচ্ছে ইন্টারনেটের এই যুগে অনেক কিছুই সহজ হয়েছে৷ শিশুদের অধিকার লংঘিত হয়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি সহজে৷ চাইল্ড পর্নোগ্রাফী এবং অন্যান্য ধরনের পীড়ণ ত্বরান্বিত করতে সৃষ্টি করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ওয়েব সাইটের৷ প্রশ্ন, প্রযুক্তির কাজ কী? সভ্যতার দিকে এগিয়ে যাওয়া নাকি বর্বরতাকে প্রশ্রয় দেয়া?
২০ বছর আগে শিশুদের রক্ষায় গ্রহণ করা হয়েছিল কনভেনশন অন দ্যা রাইট অফ চাইল্ড৷ এরপর স্নায়ু যুদ্ধের অবসান হয়েছে৷ ঠিক তখনই দেখা গেছে আফ্রিকা মহাদেশে অন্য এক চিত্র৷ সেখানে শিশুদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে সেনা হবার জন্য৷ বই বা খেলনা নয় শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে অস্ত্র৷ স্কুল নয় শিশুদের পাঠানো হচ্ছে ট্রেনিং ক্যাম্পে৷
তবে এশিয়া মহাদেশে শিশুশ্রম কমেছে বলে জানানো হচ্ছে৷ এর কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক মন্দাকে কিছুটা বাহবা দেয়া যেতে পারে৷ কিন্তু তা কতদিন? শুধু তৃতীয় বিশ্ব নয় শিল্পোন্নত দেশগুলোতেও শিশুরা অনেক ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত৷ জার্মানিসহ আরো বেশ কিছু ই ইউর দেশে শিশুরা বাস করছে দারিদ্র্যসীমার নিচে৷ শিক্ষার আলো থেকে তারা বঞ্চিত৷ অভিবাসী বা শরণার্থী পরিবারগুলোতে তা দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি৷
এ মাসের শুরুতে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক দপ্তর ইউনিসেফ একটি প্রতিবেদন পেশ করেছে৷ সেখানে জানানো হয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কম বেশি শিশুদের অধিকার লংঘন করা হচ্ছে৷ অনেক দেশে শিশুদের বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে৷
প্রতিবেদনে প্রকাশ সারা বিশ্বে অন্তত ১০ লক্ষ শিশু কারাবন্দি৷ এর প্রায় অর্ধেক নিরপরাধী৷ ঠিক কোন ধরনের অপরাধে তারা অপরাধী তা জানা যায়নি বা জানানো হয়নি৷ এমন অনেক দেশ রয়েছে যেখানে দোষী সাব্যস্ত হলে শিশুদের মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত দেয়া হয়৷
ইউনিসেফ জানিয়েছে সারা বিশ্বের ১৫ বছরের নিচে প্রায় দেড়শ কোটি শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত৷ কারণ তাদের কাজের সন্ধানে প্রতিদিন সকালে বের হয়ে যেতে হয়৷ ২০০৭ সালে এই পৃথিবীকে আরো আলোকিত করতে এসেছে প্রায় ৫১ লক্ষ শিশু৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ তাদের জন্ম নিবন্ধন করা হয়নি৷
ফলে যা দাঁড়ালো তা হল তাদের সুরক্ষা, নিশ্চিত জীবন-যাপন চরম অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হল৷ তারা কি শিক্ষার আলো পাবে? বাবা-মায়ের আদরে তারা কি বড় হতে পারবে? বলা কঠিন কারণ প্রায় ১৮ লক্ষ শিশু পালিয়ে বেড়াচ্ছে অন্য দেশে, বড় হচ্ছে অন্য পরিবারের সঙ্গে থেকে৷ কারণ নিজ দেশে গৃহযুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত৷
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনো জোর করে অল্প বয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ আফ্রিকার নাইজার, চাড এবং মালি তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য৷ সেখানে প্রায় ৭০ শতাংশ মেয়েকে অল্প বয়সে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়৷ সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে৷ সেখানে অল্প বয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দেয়া হয় ঠিকই কিন্তু তাদের গড় বয়স ১৬৷
ইউনিসেফ জানিয়েছে শিশু অধিকার রক্ষা করতে প্রতিটি দেশের সরকারকে হতে হবে আরো বেশি সক্রিয়৷ একই সঙ্গে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে নয়তো শিশুরা হারিয়ে যাবে নৈরাজ্যে৷ শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত উপহার দেয়া আমাদের সবার কতর্ব্য৷
প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার, সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার