বৈরুত বিস্ফোরণ নিয়ে এখনও পর্যন্ত যা জানা গেল
৬ আগস্ট ২০২০বিস্ফোরণের পর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। বৈরুতে এখনো চলছে উদ্ধার কাজ। বৈরুত প্রশাসনের দাবি, ঘটনায় অন্তত ১৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত চার হাজারেরও বেশি। তার মধ্যে বুধবার রাতে বৈরুত বন্দরের বহু অফিসারকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। কী ভাবে এই বিস্ফোরণ হলো, কাদের গাফিলতিতে এমন ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বুধবার সকালেই দেশের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব জানিয়েছিলেন দুই সপ্তাহের জন্য লেবানন জুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হবে। বুধবার রাতে বিশেষ ক্যাবিনেট বৈঠক সেরে দেশের প্রেসিডেন্ট দুই সপ্তাহ জরুরি অবস্থার কথা ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাদের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হবে।
যদিও কাদের গাফিলতিতে এমন ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে। বন্দরের যে অফিসারদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই গুদামের অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সরিয়ে নেওয়ার জন্য আদালত এবং সরকারের কাছে আবেদন করা হচ্ছিল। কিন্তু কোনো পক্ষই জবাব দেয়নি। অফিসারদের দাবি, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত গুদামের বাইরে বিশেষ নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়েছিল। কারণ তাঁরা জানতেন, এই রাসয়নিক থেকে বিস্ফোরণের সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এত বড় বিস্ফোরণ হতে পারে, তা তাঁরা কল্পনা করতে পারেননি।
বৈরুত প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, গুদামে যতটা নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা উচিত ছিল, ততটা রাখা হয়নি। কী ভাবে এমন ঘটল, তার তদন্ত চলছে। একই সঙ্গে চলছে উদ্ধার কাজ। কারণ, ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বহু মানুষকে এখনও ধ্বংসাবশেষে আটকে আছেন।
প্রশাসনের একাংশের দাবি, গত সরকারের কাছে বন্দর কর্তৃপক্ষ যে চিঠি লিখেছিলেন, তার উত্তর দেওয়া হয়নি। ফলে এই ঘটনায় তাদেরও যোগ আছে। যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দাবি, পরমাণু বিস্ফোরণ বাদ দিলে বৈরুতের বিস্ফোরণ বিশ্বের সব চেয়ে শক্তিশালী বিস্ফোরণ। হিরোশিমায় যে পরমাণু বোমা ফেলা হয়েছিল, তার দশ ভাগের এক ভাগ তীব্র ছিল বৈরুতের বিস্ফোরণ। যা ভয়াবহ।
২০১৩ সালে মলডোভার পতাকা লাগানো একটি জাহাজ মোজাম্বিক যাওয়ার পথে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে বৈরুত বন্দরে আসে। বৈরুত বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজের কাগজপত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখে তাতে বহু সমস্যা রয়েছে। ফলে জাহাজটিকে আটকানো হয়। জাহাজ সংস্থাটি পরে জাহাজটির দায় ঝেড়ে ফেলে। ফলে জাহাজে মজুত দুই হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত করার জায়গা প্রয়োজন হয়। সরকার এবং আদালতের নির্দেশে একটি গুদামে তা মজুত করেন বন্দরকর্তৃপক্ষ। গৃহবন্দি বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই ওই রাসায়নিক নিলামের জন্য আবেদন জানাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু সরকার গুরুত্ব দেয়নি।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, ডিপিএ)