1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বৈষম্যবিরোধী সমন্বয়কদের বিরুদ্ধেই বৈষম্য সৃষ্টির অভিযোগ

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে সফল গণ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা কোথাও কোথাও সভা করতে গিয়ে প্রতিরোধের মুখে পড়ছেন, হামলাও হচ্ছে তাদের ওপর৷ কেন তারা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি?

https://p.dw.com/p/4kjHb
শাহজালার আস্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড. মুহম্মদ ইউনূসের পাশে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা
(ফাইল ফটো) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা কোথাও কোথাও সভা করতে গিয়ে প্রতিরোধের মুখে পড়ছেনছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

সর্বশেষ সাতক্ষীরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ পণ্ড হয়েছে৷ ১৬ সেপ্টেম্বর জেলার শিল্পকলা অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে মত বিনিময় সভা করতে পারেননি কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা৷ তাদের ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে বক্তব্য দিতে বাধা দেয় স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা৷ তাদের মতে,৩২ কেন্দ্রীয় সম্বয়করা তাদের সঙ্গে বৈষম্য সৃষ্টি করেছেন৷ প্রতিবাদের মুখে সমন্বয়করা মতবিনিময় না করেই সাতক্ষীরা ছাড়তে বাধ্যহন৷

একই দিনে পিরোজপুরে কেন্দ্রীয় সম্বয়কদের মত বিনিময় সভায় দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় পাঁচজন আহত হন৷

১৫ সেপ্টেম্বর বরগুণায় বেষম্য বিরোধীদের দুই গ্রুপের মধ্যে বিশৃঙ্খলার কারণে সমাবেশ সংক্ষিপ্ত করে সমন্বয়করা জেলা ত্যাগ করেন৷

এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর একই ধরনের ঘটনা ঘটে বগুড়ায়৷ সেখানে দুই গ্রুপ শিক্ষার্থীর পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে সরকারি আজিজুল হক কলেজের মত বিনিময় সভা পন্ড হয়৷ কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা সেনা ও পুলিশ পাহারায় বগুড়া ছাড়েন৷

একই দিন চাঁদপুরে বৈষম্যবিরোধী কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সভায় হাতাহাতি হয়৷ সেখানে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের প্রায় এক ঘণ্টা একটি স্কুলে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়৷

ছাত্রদলের শিক্ষার্থীরা, ছাত্রলীগের শিক্ষার্থীরা- সবাই নিজেদের সমন্বয়ক দাবি করছেন: সানজানা অফিফা

এরকম আরো অনেক ঘটনা ইতিমধ্যে ঘটেছে৷ তাই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা যখন  ঢাকার বাইরে সফরে যাচ্ছেন তখন তাদের নিরাপত্তা দিশে স্থানীয় পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ তবে এই বিশেষ নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ৷ আবার গত ৯ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য মুহাম্মাদ নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারীকে আহবায়ক এবং ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে নতুন সংগঠন ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি'র আত্মপ্রকাশও নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে৷ বলা হচ্ছে এটাই হবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম৷ অন্যদিকে বন্যার জন্য ত্রাণের অর্থ সংগ্রহ করে তা ব্যাংকে জমিয়ে রাখায়ও নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে৷

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম এখন নিস্ক্রিয় হয়ে গেছেন৷ তার কথা, ‘‘আসলে আমাদের মধ্যে একটি রাজনৈতিক বিভাজন হয়ে গেছে৷ আমরা যারা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনে আছি, তাদের সেই সংগঠন থেকে পদত্যাগ করতে বলা হচ্ছে৷ আমাদের কোণঠাঁসা করে রাখা হচ্ছে৷ কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও তো একটা রাজনীতি৷ আর যারা এখন পরিচিত সমন্বয়ক, তারাও তো আন্দোলন শুরুর মাত্র কয়েক মাস আগেও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনে ছিলেন৷’’

‘আমাদের একটা নতুন গণতান্ত্রিক বন্দ্যোবস্ত তৈরি করতে হবে’

তিনি বলেন, ‘‘এই কারণে এখন কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা দেশের বিভিন্ন জেলায় সফরে গিয়ে কোথাও কোথাও মতবিনিময় করতে পারছে না৷ কোথাও প্রতিরোধের মুখে পড়ছেন৷ আসলে এখন আমাদের মধ্যে দুই বা ততোধিক গ্রুপ হয়ে গেছে৷’’

‘‘আবার বন্যার সময় ত্রাণের টাকা নিয়ে তা  ব্যাংকে জমিয়ে রাখা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷ এই সিদ্ধান্ত কীভাবে নেয়া হয়েছে তা আমরা জানি না৷ এখন প্রশ্ন ওঠার পর বলা হচ্ছে পুনর্বাসনের কাজে ব্যবহার করা হবে৷ সেটা প্রশ্ন ওঠার আগে কেন বলা হয়নি?’’- জানতে চান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম৷

তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক দল গঠন করা৷ সেখানে আমাদের অনেককে রাখার কথা ছিল৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাখা হয়নি৷’’

ঢাকা কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সমন্বয়ক অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটিয়ে এখন নিজেরাই বৈষম্যের শিকার৷ দেশের কলেজ ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু এখন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না৷ যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক সমন্বয়ক, তারাই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন৷’’

এসব প্রশ্ন ও অভিযোগের জবাবে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সানজানা অফিফা অদিতি বলেন, ‘‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন৷ সেখানে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সদস্যরাও অংশ নিয়েছেন৷ এখন সমস্যা হচ্ছে, ছাত্রদলের শিক্ষার্থীরা, ছাত্রলীগের শিক্ষার্থীরা- সবাই নিজেদের সমন্বয়ক দাবি করছেন৷ ফলে আমরা সভা করতে গেলে সেখানে একাধিক গ্রুপ হয়৷ তারা এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়৷ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়৷ আমরা তো জেলা পর্যায়ে কোনো সমন্বয়ক কমিটি দেইনি৷ কিন্তু তারা সমন্বয়ক হতে চাচ্ছেন৷ ফলে ঝামেলা হচ্ছে৷’’

জাতীয় নাগরিক কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যারা আন্দোলনে ছিলেন, কিন্তু ছাত্র নয়, তাদের মূল্যায়ণ করার জন্য আমরা ওই কমিটি করেছি৷ আসলে কে কোন রাজনীতি করলো, সেটা বিষয় নয়৷ আমরা দেখছি, আন্দোলনে কার কতটুকু ত্যাগ৷’’

বন্যার সময় ত্রাণের টাকা নিয়ে তা ব্যাংকে জমিয়ে রাখা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে: সাইফুল ইসলাম

বন্যাদুর্গতদের সহায়তার জন্য প্রায় ১১ কোটি ১০ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতার৷ এর মধ্যে এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের সহায়তায় খরচ হয়েছে প্রায় এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা৷ বাকি ৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা৷ সানজানা

অফিফা অদিতি  বলেন, ‘‘এটা আমাদের সবার সিদ্ধান্তেই জমা রাখা হয়েছে৷ আমরা আসলে এই অর্থ বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে খরচ করতে চাই৷ এই অর্থ নিয়ে কোনো অস্বচ্ছতা নাই৷ তখন আসলে  সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায় থেকে বন্যার্তদের সহায়তা করায় আমরা ওই সিদ্ধান্ত নিই৷’’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই অবস্থার প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘‘আসলে একটি দাবিতে নানা মত এবং পথের ছাত্ররা এক হয়েছিল৷ আর তা হলো- হাসিনা সরকারের পতন৷ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনার পতন হয়েছে৷ লক্ষ্য পূরণ হয়েছে৷ তাই আমার মনে হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামের এই প্ল্যাটফর্মটি বিলুপ্ত করা উচিত৷ তা না হলে বিভেদ আরো বাড়বে৷ তারা যেভাবে নন্দিত হয়েছে, সেভাবেই দিনে দিনে তাদের সমালোচনা বাড়বে৷ সাধারণ মানুষ বিরক্ত হয়ে উঠতে পারে৷’’

তার কথা,  ‘‘এখান থেকে কেউ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে গিয়েছেন, কেউ সমন্বয়ক হিসাবে বাইরে সভা, সমাবেশ করছেন৷ তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছা প্রকাশ পাচ্ছে৷ তারা যদি আলাদা রাজনৈতিক দল গঠন করেন, তা করতে পারেন৷ কিন্তু সেটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ব্যবহার করে করা ঠিক হবে না৷ কারণ, এখানে নানা মত, পথ ও দলের ছাত্ররা আছেন৷ আর দেশের মানুষও তাদের সমর্থন দিয়েছেন স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে৷ তারা কোনো রাজনীতি এখানে দেখেননি৷’’

‘দল হিসেবে আওয়ামী লীগ চলবে’

‘‘আর যারা এই আন্দোলনের পর এখন ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কথা বলছেন তারা কিন্তু ছাত্র রাজনীতি করতেন৷ তারা আসলে তাদের সুবিধার জন্য এটা বলছেন বলে মনে করি,'' বলেন তিনি৷

প্রসঙ্গত, ১৪ সেপ্টেম্বর ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে৷ অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব পদে ছিলেন৷ এছাড়া ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এই সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ছিলেন৷ আখতার এখন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য