1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্যক্তিগত উড়োযান কি বন্ধ করে দেয়া উচিৎ?

৮ ডিসেম্বর ২০১৯

ধনী আর তারকাদের মধ্যে ব্যক্তিগত উড়োযান ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে৷ যা ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণের পরিমানও বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ এইজন্য পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন বিমান নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে৷   

https://p.dw.com/p/3UPGL
Russland Jet Expo 2017
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Sitdikov

গত জুলাইতে জলবায়ু নিয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল৷ সেই আয়োজনে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রসিডেন্ট বারাক ওবামা, ইংল্যান্ডের রাজপুত্র হ্যারি, হলিউডের অভিনেত্রী লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও'র মতো খ্যাতনামা তারকারা৷ তাদের মতো ১১৪ জন অতিথি ইটালির ভের্দুরা অবকাশ কেন্দ্রে হাজির হয়েছেন ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে চেপে৷

একদিকে বিশ্ব বাঁচানোর আহবান আর অন্যদিকে কার্বন পুড়িয়ে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে ভ্রমণ, বিষয়টিকে এক ধরনের ‘ভণ্ডামি’ হিসেবে দেখছেন অনেক পরিবেশবাদী৷ জানুয়ারিতে জেনেভায় বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামেও পরিবেশ বিষয়ক এক আয়োজনে ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে৷ ডাচ ঐতিহাসিক রুটগার ব্রেখমান সেসময় রসিকতা করে বলেছেন, ‘‘কীভাবে আমরা পৃথিবী ধ্বংস করছি তা নিয়ে স্যার ডেভিড অ্যাটেনব্রার বক্তব্য শুনতে এইখানে উড়ে এসেছে ১৫০০ ব্যক্তিমালিকানার উড়োযান৷’’

মাদ্রিদে চলমান জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনেও যে তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না তা বলা বাহুল্য৷ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা টুনব্যার্গ যতোই নৌকা আর ট্রেনে চেপে আসুন না কেন অনেক অতিথিই নির্ভর করবেন ভয়াবহ কার্বন নিঃসরণ নির্ভর সব উড়োজাহাজের উপর৷

ব্যক্তিগত উড়োযান এখন আর কেবল বৈশ্বিক এলিট শ্রেণীর বাহনই নয়৷ যুক্তরাষ্ট্রসহ, এশিয়া, দক্ষিণ অ্যামেরিকার অনেক দেশের ধনীরা এখন যাতায়তের জন্য ব্যক্তিগত বিমানের উপর নির্ভর করেন৷ ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়ায় এবং সিঙ্গাপুরে এই ধরনের পরিবহন ব্যবসাও দিন দিন স্ফীত হচ্ছে৷

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজনেস জেট ট্রাভেলার ম্যাগাজিন ২০১৮ সালে ১৪০০ নির্বাহী ও ধনী মানুষের উপর এক জরিপ চালিয়েছে৷ আরাম আয়েশ, নিরাপত্তা আর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখতে তারা এমন বাহন ব্যবহার করেন, বলে জানান৷ সেই সঙ্গে যাত্রাপথ পরিবর্তন আর ছোট বিমানবন্দরে অবতরণের সুবিধার কারণে সময় বাঁচাতেও তারা প্রাইভেট জেট ব্যবহার করেন৷

কিন্তু পরিবেশবাদীরা বলছেন, যতো ফ্লাইট পরিচালিত হবে বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের পরিমানও ততো বাড়বে৷ বার্লিন থেকে নিউ ইয়র্কে ইকোনোমিক ক্লাস ভ্রমণ করা যাত্রীদের ক্ষেত্রে যার পরিমান গড়ে দেড় থেকে দুই টন৷ এই কারণে প্রতিবছর একজন জার্মান নাগরিক গড়ে আট দশমিক নয় টন কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ি৷ যুক্তরাষ্ট্রে এর পরিমান প্রায় ১৫ টন৷

বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় প্রথম শ্রেণীতে ভ্রমণকারী বিমানের ইকোনোমিক ক্লাসের যাত্রীদের চেয়ে তিনগুণ বেশি কার্বন ছড়ানোর জন্য দায়ি৷ ব্রিটেনের কমন ওয়েলথ নামের এই থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ব্যক্তিগত উড়োযান ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই ১৫ গুণ বেশি৷ আর উচ্চ গতির রেলের সাথে তুলনা করলে সেটি হবে ৭৫ থেকে ২৫০ গুণ বেশি৷

এমন বাস্তবতায় ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ নিষিদ্ধে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর চাপ বাড়ছে বিভিন্ন দেশে৷ ব্রিটেনে ২০২৫ সালের জ্বালানি তেল নির্ভর উড়োযান বন্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে ফ্রি রাইড আর কমন ওয়েলথ৷ ১২ই ডিসেম্বরের নির্বাচনে জিতলে এই প্রস্তাব পরীক্ষা করে দেখার আশ্বাস দিয়েছে লেবার পার্টিও৷

তবে ইউরোপীয় বিজনেস অ্যাভিয়েশন অ্যাসোসিয়েশন বলছে, তারা উড়োজাহাজ ভ্রমণকে পরিবেশবান্ধব করতে কাজ করে যাচ্ছে৷ বিদ্যুতের ব্যবহার আর জ্বালানি সাশ্রয়ের মাধ্যমে এই শিল্পের কার্বন নিঃসরণের পরিমান ২০০৫ সালের তুলনায় ২০৫০ সালে ৫০ ভাগ কমিয়ে আনা হবে৷

মার্টিন কুয়েবলার/এফএস