1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ব্যর্থ রাজনীতি, রাষ্ট্র নয়'

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১১ নভেম্বর ২০১৩

১৮ বছরে একটি মানুষ সাবালক হলেও বাংলাদেশের রাজনীতি ৪২ বছরেও সাবালক হয়নি৷ বলা বাহুল্য, রাজনীতি ব্যর্থ না হলে রাষ্ট্র আরো এগিয়ে যেত৷ কারণ রাজনৈতিক দল চলে চাঁদাবাজির টাকায়৷ তাই কেউ কোনোভাবেই ক্ষমতার বাইরে থাকতে চান না৷

https://p.dw.com/p/1AF7Z
epa03056476 Bangladesh Prime Minister Sheikh Hasina addresses the guests at the India-Bangladesh Business Meet in Agartala city, capital of Tripura state, northeast India, 11 January 2012. Sheikh Hasina's visit is the first by any Prime Minister of Bangladesh to Tripura state. EPA/STRINGER
ছবি: picture-alliance/dpa

বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী ১৮ দলের টানা ৮৪ ঘণ্টা, মানে চার দিনের হরতাল শুরু হয়েছে রবিবার সকাল ৬টা থেকে৷ প্রথম দিনের হরতালে সহিংসতায় ফেনী এবং চট্টগ্রামে দু'জন নিহত হয়েছেন৷ ককটেল বিস্ফোরণ এবং যানবাহনে আগুনও দেয়া হয়েছে যথারীতি৷

ঢাকায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কোনো নেতা-কর্মীকে দেখা যায়নি৷ কার্যালয়ের ভেতরে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী৷ বলেছেন, পাঁচজন নেতাকে গ্রেপ্তারের পর বাকি শীর্ষ নেতারা আত্মগোপন করেছেন৷ ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না৷ তিনি বাসায় থাকছেনই না, তার ওপর তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ৷ এমনকি, দা-কুড়াল নিয়ে প্রতিরোধের ডাক দেয়া বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ‘লা পাত্তা'৷ তাই দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতা তো দূরের কথা সাধারণ নেতা-কর্মীরাও হরতালে মাঠে নেই৷ শুধু কয়েকজন নেতা রবিবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর বাসায় গিয়ে দেখা করেছেন৷ তাঁদের মধ্যে একজন ওসমান ফারুক হরতালের মধ্যেই গাড়ি গিয়ে দেখা করতে গেলে খালেদা জিয়া তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি৷ খালেদা জিয়া নেতাদের বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবেন না তিনি, সে যত গ্রেপ্তার আর নির্যাতনই করা হোক না কেন৷ বরং আন্দোলন আরো তীব্র করা হবে৷
এর বিপরীতে ঢাকায় শনিবার শাসক দল আওয়ামী লীগের হরতাল বিরোধী মিছিল ছিল বড় সড়ক পেরিয়ে, গলি পথেও৷ তাদের অবশ্য কোনো পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়নি৷ ঢাকার বাইরেও হরতাল বিরোধী মিছিলের বেজায় আধিক্য দেখা যায়৷ এছাড়া, ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল রবিবার উত্‍সবমুখর৷ কারণ সংসদ নির্বাচনের জন্য রবিবার থেকেই দলীয় মনোনয়ন-পত্র বিক্রি শুরু হয়েছে৷ সারাদিন বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে মানোনয়ন-পত্র কিনেছেন দলের নেতারা৷ বলা বাহুল্য, প্রথম মনোনয়ন-পত্রটি কেনেন শেখ হাসিনা৷ তাঁর পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মনোনয়ন-পত্রটি কেনার মধ্য দিয়ে ফর্ম বিক্রি শুরু হয়৷ প্রথম দিনেই কোটি টাকার ফর্ম বিক্রি হয়েছে বলে খবর৷ ফর্ম কিনেছেন ৬৭৮ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী৷

একদিকে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা আর আরেকদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি৷ একদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রায় শূন্য আর অপরদিকে উত্‍সবমুখর শাসক দল আওয়ামী লীগের কার্যালয়৷ বাংলাদেশের রাজনীতির কেন এই চিত্র জানতে চাইলে সমসাময়িক রাজনীতির বিশ্লেষক আফসান চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ক্ষমতায় যেতে বিএনপি হরতাল আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে৷ অন্যদিকে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সরকার বিএনপির ওপর পাল্টা চাপ দিচ্ছে৷ যার ফল হলো, সাধারণ মানুষের প্রাণহানি আর ভোগান্তি৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো চাঁদাবাজির অর্থে পরিচালিত হয়৷ চাঁদাবাজির জন্য ক্ষমতা একটি মোক্ষম অস্ত্র৷ তাই যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়া বা ক্ষমতা ধরে রাখা তাদের প্রধান লক্ষ্য, জনগণ তাদের কাছে কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়৷ ফলে রাজনৈতিক সমঝোতা হয় না৷ যে যার অবস্থানে আপোষহীন থাকে৷''

আফসান চৌধুরী বলেন, এই রাজনীতির সঙ্গে দেশের মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই৷ দেশের মানুষ এই রাজনৈতিক আদর্শ ধারণও করেন না৷ তাঁরা তাঁদের মতো করে দেশের জন্য এবং আত্মউন্নয়নে কাজ করছেন৷ সাধারণ মানুষের ঘাম আর শ্রমেই বাংলাদেশ খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ, তৈরি পোশাক শিল্পে এগিয়েছে৷ আর দেশের বাইরে নানা ধরণের কাজ করে ‘রেমিটেন্স' পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা৷ মাথা পিছু আয় বাড়ছে, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সূচকে অগ্রগতি হচ্ছে৷ তাই বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে ব্যর্থ নয়, বরং সফল৷ ব্যর্থ বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদরা৷ তাঁরা সফল হলে দেশ আরো এগিয়ে যেত৷ তিনি বলেন, দেশের সাবালক সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে আছেন নাবালক রাজনীতির কাছে৷ ১৮ বছরে একজন মানুষ সাবালক হলেও বাংলাদেশের রাজনীতি ৪২ বছরেও সাবালক হতে পারেনি৷

তাঁর মতে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট কাটার কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না৷ যদি কোনো চাপের কারণে সংকট কেটেও যায়, তা হবে সাময়িক৷ সংকট আবারো ফিরে আসবে৷ কারণ, রজনৈতিক দলগুলোই সংকটের কারণ৷ তারাই সংকট চায়৷ সংকট টিকিয়ে রাখে তাদের স্বার্থে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য