ব্রাসেলসে বোঝাপড়ার আশায় জনসন
৮ ডিসেম্বর ২০২০ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনার মেয়াদ বাড়ানো সত্ত্বেও ঐকমত্য দেখা যাচ্ছে না৷ এবার শেষ প্রহরে সাফল্যের আশায় শীর্ষ স্তরে হস্তক্ষেপের তোড়জোড় চলছে৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সম্ভবত বুধবার ব্রাসেলসে এসে ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের সঙ্গে বোঝাপড়ার শেষ চেষ্টা চালাবেন৷ সেই প্রচেষ্টার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ইইউ নেতারা ব্রাসেলসে শীর্ষ সম্মেলনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন৷ তাঁরা ইতোমধ্যেই চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের জন্য প্রস্তুতি আরও জোরদার করতে সম্মত হয়েছেন৷
সোমবার জনসন ও ফন ডেয়ার লাইয়েন টেলিফোনে আলোচনা করে অবশিষ্ট মতমার্থক্যগুলি সম্পর্কে মুখোমুখি আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ দুই পক্ষই স্বীকার করেছে, যে শুক্রবারের পর আলোচনায় তেমন কোনো অগ্রগতি হয় নি৷ ব্রিটেন তাই শীর্ষ রাজনৈতিক স্তরে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে৷ ইইউ থেকে পাকাপাকি বিদায়ের প্রায় তিন সপ্তাহ আগেও অনিশ্চয়তার ফলে বিশেষ করে ব্রিটেনে অস্বস্তি বাড়ছে৷
ইইউর সঙ্গে বিচ্ছেদ চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ব্রিটেনের একটি আইন গোটা প্রক্রিয়ার উপর কালো ছায়া ফেলছে৷ ব্রিটিশ সংসদের নিম্নকক্ষ আবারও উচ্চকক্ষের আপত্তি উপেক্ষা করে আইনের খসড়ার বিতর্কিত অংশগুলি অন্তর্গত করেছে৷ এবার সেই খসড়া আবার উচ্চকক্ষে পাঠানো হচ্ছে৷ ব্রিটেনের সরকার অবশ্য আশ্বাস দিয়েছে, যে ইইউ-র সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি হলে নতুন আইনের মাধ্যমে বিতর্কিত অংশগুলি আবার দূর করা হবে৷ ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার উচ্চপদস্থ সদস্য মাইরেল গোভ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে ব্রাসেলসে গেছেন৷ উল্লেখ্য, শেষ পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্ভব হলেও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ব্রিটেনের এই পদক্ষেপের কারণে ভেটোর হুমকি দিয়েছে৷ জেনেশুনে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের এমন আচরণের প্রেক্ষিতে ইইউ বাণিজ্য চুক্তির পূর্বশর্ত হিসেবে আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে বোঝাপড়ার দাবি করছে৷ অর্থাৎ ভবিষ্যতে এমন চুক্তি লঙ্ঘন করা হলে আদালতের দ্বারস্থ হবার ও শাস্তিমূলক পালটা পদক্ষেপের সুযোগ রাখতে চায় ইইউ৷
ইইউ-র প্রধান মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ে সোমবার ইইউ সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যে বর্তমান ম্যানডেটের কাঠামোর আওতায় দুই পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়ার কোনো সম্ভাবনা আর নেই বললেই চলে৷ জনসন ও ফন ডেয়ার লাইয়েন মুখোমুখি আলোচনায় বসলে বিশেষ করে ইইউ-র পক্ষে কোনো ছাড় দেওয়া সম্ভব হবে বলেও আপাতত মনে করার কোনো কারণ নেই৷ বিশেষ করে ফ্রান্স এ ক্ষেত্রে কড়া অবস্থান নিচ্ছে৷ অর্থাৎ ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট এমন কোনো ছাড়ের প্রস্তাব দিতে পারেন না, কোনো সদস্য দেশের সরকার বা ইইউ পার্লামেন্ট যার বিরোধিতা করতে পারে৷ বিশেষ করে ইইউ-র অভ্যন্তরীণ বাজারের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়, এমন কোনো ছাড় কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ এমন অবস্থায় জনসনের মুখরক্ষার করতে সামান্য কোনো ছাড়ের বিনিময়ে ব্রিটেনকেই ইইউ-র শর্ত মেনে নিতে হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ জনসন সেই ঝুঁকি না নিতে চাইলে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট অনিবার্য হয়ে পড়বে৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি, ডিপিএ)