ব্রিটেনে ইউরোপ বিমুখিতা
১৬ নভেম্বর ২০১৩‘‘ইউরোস্কেপটিসিজম'' বা ইউরো-নিন্দা এমন একটি শব্দ, যা স্ট্রাসবুর্গের করিডরে শোনা যাবে না – ইউরোপীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন নাইজেল ফারাজ, ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টির নেতা৷ অথচ এটা একটি দেশের জাতিগত সত্তার ‘‘সাধারণ, বাস্তববুদ্ধিসম্মত বহিঃপ্রকাশ'' ছাড়া আর কিছু নয়, বলে ফারাজ মনে করেন৷
‘‘আমরা জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রের এক ইউরোপে বাঁচতে, কাজ করতে, নিঃশ্বাস নিতে চাই৷ আমরা একসঙ্গে ব্যবসা করতে চাই, সহযোগিতা করতে চাই৷ বাস্তবসম্মত, সাধারণ যৌথ মানদণ্ড সম্পর্কে একমত হতে পারলে আমরা খুশি এবং হ্যাঁ, আমরা আমাদের নিজেদের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, যা যে কোনো জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের পক্ষে একটি বাস্তববুদ্ধিসম্মত, যুক্তিযুক্ত কর্তব্য,'' বলেন ফারাজ৷
যুক্তরাজ্যে মনোভাবটি নতুন নয়৷ ২০০৭ সালেই তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, লেবার দলের গর্ডন ব্রাউন সেই স্মরণীয় প্রতিশ্রুতি দয়েছিলেন: ‘‘ব্রিটিশ শ্রমিকদের জন্য ব্রিটিশ চাকুরি৷'' আবার এই ২০১৩ সালে ব্রিটেনের রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন কারখানা শ্রমিকদের সমীপে বলেছেন, ব্রিটেনের পূর্ব ইউরোপ থেকে আগত শ্রমিকদের প্রতি ‘‘না'' বলা উচিত৷ এমনকি ক্যামেরন মন্তব্য করেন যে, ‘‘আজ আমাদের দেশে এমন কারখানা আছে, যেখানকার অর্ধেক শ্রমিক পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া কিংবা লাটভিয়া থেকে এসেছে''৷ ২০১৪ সাল থেকে আবার রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার মানুষরা স্বাধীনভাবে ইইউ-তে আসার ও কাজ করার সুযোগ পাবেন৷
নাইজেল ফারাজ গত সপ্তাহেই ‘‘বুলগেরিয়া এবং রোমানিয়ার জন্য আমাদের সীমান্ত খুলে দেওয়া'' সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ সাধারণভাবেই তিনি – এবং অন্যান্য হাওয়া-গরম-করা ব্রিটিশ রাজনীতিকরা – পূর্ব ইউরোপ থেকে অভিবাসনের বিরুদ্ধে: অভিবাসীরা নাকি ব্রিটিশ নাগরিকদের কাছ থেকে চাকরি, সামাজিক সুযোগসুবিধা এবং অন্যান্য ভাতা ‘‘চুরি'' করে থাকে৷
ফারাজ ইইউ-এরই একটি জরিপ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘ব্রিটেনে ছ'লাখ পূর্ব ইউরোপীয় বাস করছে, যারা অর্থনৈতিক বিচারে কিছুই করে না, কিন্তু আমাদের নিজেদের সরকার সে সম্পর্কে উচ্চবাচ্য করে না''৷ ফারাজ দাবি করেন যে, যুক্তরাজ্য বর্তমানে পঞ্চাশ হাজার শিশুদের জন্য ভাতা দেওয়া হচ্ছে, যে সব শিশুরা ব্রিটেনে বাস পর্যন্ত করে না৷ অথচ এ জন্য ব্রিটেনের সপ্তাহে দশ লক্ষ পাউন্ড ব্যয় হচ্ছে, বলেন ফারাজ৷
ফারাজ দাবি করেন যে, অভিবাসন ২০১৪ সালের ইউরোপীয় নির্বাচনে ‘‘কেন্দ্রীয় বিষয়'' হবে৷ আরে বড় কথা, ব্রিটেন ইইউ-তে থাকবে কিনা, সে বিতর্কেরও কেন্দ্রীয় বিষয় হবে ঐ অভিবাসন সমস্যা৷ ক্যামেরনের নিজের দল কনজারভেটিভদের মধ্যেও ফারাজের মনোভাব সম্বলিত সদস্যের অভাব নেই৷ বলতে কি, ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টির জনপ্রিয়তা এখন রক্ষণশীলদের সমর্থনে ভাগ বসাতে শুরু করেছে৷
ব্রিটিশ বিজনেস লবি-র দৃষ্টিকোণ থেকে এই ইউরোপ বিমুখিতা ভালো কথা নয়৷ শিল্পবাণিজ্যের কর্ণধারদের ধারণা, পঞ্চাশ কোটি গ্রাহকের ইউরোপীয় বাজারে পণ্য ও পরিষেবা বেচতে পারাটা ব্রিটেনের অর্থনীতির পক্ষে সর্বাপেক্ষা ইতিবাচক উপাদান হিসেবে কাজ করেছে৷ এছাড়া ব্রিটেনের ইইউ সদস্যতা বিশ্বের নেতৃস্থানীয় ফাইন্যান্সিয়াল কেন্দ্র হিসেবে যুক্তরাজ্যের সুনাম বজায় রাখতে সাহায্য করছে৷
এমা ওয়ালিস/এসি
দেবারতি গুহ