ব্রেক্সিট: কারো সর্বনাশ, কারো পৌষ মাস
২১ এপ্রিল ২০১৭ব্রিটেনবাসী চিরকালই ইউরোপ-অ্যামেরিকা বেড়াতে ভালোবাসে৷ কিন্তু ব্রেক্সিট গণভোটের পর ব্রিটিশ পাউন্ড নেমেছে ডলারের হিসেবে ২০ শতাংশ, ইউরোর হিসেবে ১৬ শতাংশ৷ এখন সেই মূল্যহ্রাস কমে ডলারের ক্ষেত্রে ১৪ শতাংশ আর ইউরোর ক্ষেত্রে ৮ শতাংশ হলেও, ব্রিটিশ ক্রেতারা যে তাদের পাউন্ড দিয়ে কত বেশি পণ্য বা পরিষেবা কেনা যায়, তার পন্থা খুঁজছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷
তার প্রথম প্রমাণ হলো, ব্রিটেনবাসী স্বদেশে ছুটি কাটানোর দিকে ঝুঁকছেন: ‘লোকেশান'-এর পরিবর্তে ‘স্টেকেশান' বুক করছেন৷ ‘স্টেকেশান' কথাটি এসেছে ‘স্টে' অথবা ‘থাকা', অর্থাৎ দেশে থাকা থেকে৷ ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে ছুটি কাটানোর কেবিনগুলি বুক করার জন্য নাকিজুন মাসের গণভোটের পর থেকেই টেলিফোন বাজতে শুরু করে, রয়টার্স সংস্থাকে বলেছেন এক কেবিন মালিক৷
মূল্যবৃদ্ধি
২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের আর্থিক সংকটের পর ব্রিটেনে বাৎসরিক মূল্যবৃদ্ধি পাঁচ শতাংশে পৌঁছায়৷ এখনও মূল্যবৃদ্ধি তিন শতাংশের দিকে এগোচ্ছে, অপরদিকে বেতন ও পারিশ্রমিক বৃদ্ধির হার কমে এসেছে৷ মূল্যবৃদ্ধির একটি কারণ স্বভাবতই স্টার্লিংয়ের মূল্যহ্রাস, যার ফলে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়েছে৷
২০১৭ সালের প্রথম তিন মাসে ব্রিটেনে খুচরো বিক্রি বেড়েছে বিগত দশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মন্থর হারে৷ আর্থিক সংকটের সময়েও ব্রিটেনে দুই জার্মান সুপারমার্কেট গ্রুপ আলডি ও লিডল-এর বিক্রি বেড়েছিল৷ ২০১৭-তেও তা-ই ঘটছে, জানিয়েছেন ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডে আলডি-র সিইও ম্যাথিউ বার্নস৷
‘স্টেকেশান'
গতমাসে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের গভর্নর মার্ক কার্নি স্বয়ং উল্লেখ করেন যে, ব্রিটেনের গ্রাহকরা যে কিভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছেন, স্টেকেশানের চাহিদা বৃদ্ধি তার একটা নমুনা৷
‘ভিজিট ইংল্যান্ড' টুরিজম এজেন্সির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালে যেখানে ৫৭ শতাংশ ব্রিটেনবাসী ইংল্যান্ডে ছুটি কাটানোর কথা ভাবছিলেন, ২০১৭ সালে তাদের অনুপাত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ শতাংশে৷ আরো অনেকে যাবেন স্কটল্যান্ড, ওয়েলস বা উত্তর আয়ারল্যান্ডে৷
ব্রিটেনবাসীরা যে বিদেশযাত্রা পরিত্যাগ করেছেন, এমন নয়৷ ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস অবধি তিন মাসে যুক্তরাজ্যের অধিবাসীদের বিদেশযাত্রার পরিসংখ্যান ৮ শতাংশ বেড়েছে৷ কিন্তু ঐ একই সময়ে ব্রিটেনে বিদেশি পর্যটকদের আগমন বেড়েছে ২২ শতাংশ, যার কারণ স্বভাবতই দুর্বল পাউন্ড৷
২০১৭ সালের মার্চ অবধি ছয় মাসে ব্রিটেনের লাক্সারি ব্র্যান্ড বারবেরি-র মার্কিন খদ্দেরদের সংখ্যা বেড়েছে ৯০ শতাংশ৷ এখানেও কারণ, দুর্বল পাউন্ড৷
চিন্তায় পড়েছে শুধু ইউরোপের বৃহত্তম বাজেট এয়ারলাইন ‘রায়ানএয়ার'৷ তারা দেশের বাইরে তাদের ক্যাপাসিটি বাড়াচ্ছে৷ অন্যদিকে টিকিটের দাম কমিয়ে খদ্দের ধরার চেষ্টা করছে রায়ানএয়ার ও তাদের প্রতিযোগীরা৷
এসি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)