ব্লগাররা নিরাপদ নয়
১২ মে ২০১৫গত দু'বছর ধরেই ইন্টারনেটে একটি হিট লিস্ট নিয়ে আলোচনা চলছে৷ বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ৮৪ জন ব্লগার, অ্যাক্টিভিস্টের নাম রয়েছে সেই তালিকায়, যাদের মধ্যে ন'জন এখন পর্যন্ত খুন হয়েছেন৷ মানবাধিকার সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাআউট বর্ডার্স এই তালিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ তবে পুলিশ লিস্টের অস্তিত্বের কথা স্বীকার করেনি৷ যদিও বাংলাদেশের ব্লগাররা বিশ্বাস করেন ধর্মীয় মৌলবাদীরা এই তালিকা ধরেই একের পর এক হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে৷
পুলিশের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ
ব্লগার দাস হত্যাকাণ্ডের পর ডয়চে ভেলের দ্য বব্স পিপল'স চয়েস অ্যাওয়ার্ড জয়ী ব্লগার আরিফ জেবতিক মঙ্গলবার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘৮৪ জনের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছিল দুই বছর আগে, তালিকা থেকে নবম হত্যা হয়েছে আজকে সিলেটে৷ তালিকা নিশ্চয়ই চূড়ান্ত নয়, গত দুই বছরে আরো নাম সেই তালিকায় নির্ঘাত যুক্ত হয়েছে৷ কিন্তু অন্তত এই ৮৪ জনের ব্যাপারে গত ২ বছরে কোনো খোঁজখবর হয়নি, তাঁরা নিয়মিত বিরতিতে খুন হওয়া শুরু করেছেন৷''
চলতি বছর এখন পর্যন্ত তিনজন ব্লগার খুন হয়েছেন৷ একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ফেব্রুয়ারির ২৬ তারিখ খুন হন ব্লগার অভিজিৎ রায়৷ ঢাকার একটি পত্রিকা লিখেছে হিট লিস্টের তিন নম্বরে ছিল তাঁর নাম৷ তিনি বলেন, ‘‘মাসিক কোটায় হত্যা শুরু হয়েছে হয়তো এটি সপ্তাহান্তের কোটায় উন্নীত হবে৷ ৮৪ জন যাবে, আরো হাজার চুরাশির নাম তালিকায় আসবে৷ খানিক আহাজারি হবে, সবখানেই একটা ফিসফিস-চুপচুপ ভাব, কিছু বিকৃত মানুষের উল্লাস-তারপর পরের হত্যার জন্য অপেক্ষা৷''
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে হত্যাকারীরা
ব্লগার দাসকে হত্যার পরপরই টুইটারে বেশ কয়েকটি টুইট করা হয় ‘আনসার বাংলা আট' নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে৷ সেক্যুলার ব্লগারকে সফলভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে টুইটার অ্যাকাউন্টটি থেকে জানানো হয়, মুক্তমনা ব্লগের একজন মডারেটর ছিলেন দাস৷
টুইটার অ্যাকাউন্টটি থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন টুইট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গ্রুপটির কাছে ব্লগারদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য রয়েছে যা সাধারণভাবে পাওয়া কার্যত সম্ভব নয়৷ শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার টুইটার অ্যাকাউন্টটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা এবং পুলিশের সাহায্য ছাড়া এ ধরনের তথ্য পাওয়া প্রায় অসম্ভব৷
ইমরান এইচ সরকার মনে করেন, টুইটার অ্যাকাউন্টটি তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে গোটা বিশ্বকে জানাতে বেশ সোচ্চার৷ তাদের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে পারে এবং তারা সম্ভবত আল-কায়েদার মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে৷
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জাহাঙ্গীর আলম অবশ্য পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পর্কের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন৷ ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপনকে তিনি বলেন, ‘‘ব্লগাররা কোন হিট লিস্ট দিয়েছে কী না আমার জানা নেই৷ পুলিশের কেউ কেউ জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের ব্লগারদের ব্যাপারে তথ্য দিচ্ছে এই অভিযোগ সঠিক নয়৷ এটা কাল্পনিক অভিযোগ৷''
নিরাপদ নয় ব্লগাররা
ব্লগার দাস মুক্তমনা ব্লগে নিয়মিত লিখতেন৷ এমনকি তিনি ২০০৫ সালে ব্লগটি থেকে একটি পুরস্কারও জয় করেন৷ মুক্তমনার মডারেটর ফরিদ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে আমরা দু'জনকে হারিয়েছি যারা মুক্তমনার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন৷ আমরা জানতাম অনন্ত বিপদে আছেন কেন না তিনি ‘যুক্তি' নামের একটি যুক্তিবাদী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন৷''
ফরিদ মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে একথা বলাই যায় যে, বাংলাদেশ প্রগতিশীল এবং যুক্তিবাদী ব্লগারদের জন্য নিরাপদ নয়৷ রায়, রহমান এবং দাস – সবাইকে প্রকাশ্য এবং জনাকীর্ন পরিবেশে হত্যা করা হয়েছে৷''
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বের্নহার্ড হার্টলাইনও মনে করেন, বাংলাদেশ এখন আর ব্লগার এবং মুক্তমনাদের জন্য নিরাপদ নেই৷ ব্লগার দাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অ্যামনেস্টি শোকাহত জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁরা আশা করেন বাংলাদেশ সরকার ব্লগার এবং সাংবাদিকদের নিরাপদ রাখতে কাজ করবে৷
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছর এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্লগার হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাননি৷ তাঁর ছেলে এবং অন্যতম উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বর্তমান নিয়ত পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না৷