ব্লাটার বিদায় নিচ্ছেন
৩ জুন ২০১৫ঝড়ঝাপটা এলে ধৈর্যের পরীক্ষা, নীরবতা বজায় রাখা, হেসে উড়িয়ে দেওয়া – ইয়োসেফ এস ব্লাটার এতকাল এমনটাই করে এসেছেন৷ গত কয়েক বছরে ফিফার অগুন্তি সংকটের একটির সময় তিনি নিষ্পাপ শিশুর মতো বলেছিলেন, ‘‘সংকট? সংকট আসলে কী?'' অমর ব্লাটার যেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে থেকে সমালোচনা উপেক্ষা করে এসেছেন৷ অথবা এমন করেও বলা চলে, যে সমালোচনা নিয়ে তাঁর কোনো আগ্রহই ছিল না৷ এখনো পর্যন্ত এমনটাই ছিল৷
তিনি বিদায় নিচ্ছেন৷ গোটা ফুটবল জগত হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো৷ সেই সম্মিলিত নিঃশ্বাসের শব্দও যেন শোনা গেছে৷ এ যেন এক নির্বাণপ্রাপ্তি৷ যে মানুষটি প্রায় ৪০ বছর ধরে ফিফার উপর এতটা প্রভাব রেখেছেন, তিনি এখন পদত্যাগ করতে চান৷ মোট তিনটি কারণে ফুটবলের জন্য এটা সুদিন৷
আশাবাদী হবার তিনটি কারণ
প্রথমত, এটা সত্যি একটা ভালো দিন, কারণ বিশ্ব ফুটবল সংগঠনে নোংরা দুর্নীতির সংস্কৃতি গোটা সিস্টেমের প্রায় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার জন্য ব্লাটার দায়ী৷ তিনি নিজে ঘুস কাণ্ডে জড়িত, এখনো পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বটে৷ তবে তিনি যে সব কথা জানতেন, সেটা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ সরকারি কৌঁসুলির দৃষ্টিতে ব্লাটার ঘুস হিসেবে ১৪ কোটি ২০ লক্ষ সুইস ফ্রাঁ হস্তান্তরের কথা অবশ্যই জানতেন৷ নিজের সংস্থায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি কিছুই করেন নি৷ বড়জোর কিছু প্রতীকী লোক-দেখানো পদক্ষেপ নেবার চেষ্টা করেছেন৷ এর মধ্যে বেশ কিছু উচ্চপদস্থ ফিফা কর্মকর্তাকে দুর্নীতির অভিযোগে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকে আবার ব্লাটার-এর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত৷ সবকিছু জেনেও নীরব থাকার কারণে তিনিও দুর্নীতির দোসর হয়ে উঠেছেন৷
দ্বিতীয়ত, এটা সত্যি একটা ভালো দিন, কারণ ফিফা সামান্য হলেও কিছুটা আস্থা ফিরে পাচ্ছে৷ মুখের কথার দিন শেষ হয়েছে – কমপক্ষে এইটুকু আশা করা চলে৷ বার বার ‘স্বচ্ছতা'-র কথা বলা হলেও সব কিছু অন্ধকারই থেকে গেছে৷ যেমন ব্লাটার-এর বেতন ফিফার রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার বেড়াজালে অজানা থেকে গেছে৷ ‘ফেয়ারপ্লে' শব্দটিও শব্দই থেকে গেছে৷ ১৯৯৮ সালে ফিফার প্রেসিডেন্ট পদে ব্লাটার-এর নির্বাচনের সময় খামে ভরা ঘুসের টাকা সম্পর্কে সংস্থার মধ্যেই কানাঘুষো শোনা গেছে৷ বর্তমান দুর্নীতি কেলেঙ্কারির সময়ও ব্লাটার শুধু মৌখিক ও দায়সারাভাবে ‘দায়িত্ব' স্বীকার করেছেন৷ এখনো পর্যন্ত সেটা অন্তঃসারশূন্য একটা শব্দ থেকে গেছে৷
এবার উয়েফা-র পালা
তৃতীয়ত, এটা সত্যি একটা ভালো দিন, কারণ নতুন সূচনার পথ প্রশস্ত হয়ে গেছে৷ ফিফা নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারে, পুরানো রীতিনীতি বর্জন করতে পারে, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মীদের বিতাড়ন করতে পারে৷ হ্যাঁ, ব্লাটার-এর আগেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল৷ নির্বাচনে তাঁর জয় প্রতিপক্ষদের ক্ষতি করেছে এবং শেষ বারের মতো তাঁর বিজয় নিশ্চিত করেছে৷ ফলে এখন তিনি অপরাজেয় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে রিং থেকে নেমে আসছেন৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও এর ইতিবাচক দিকটাও ভুললে চলবে না৷ ইউরোপে তাঁর পরাজিত বিরোধীরা অবশেষে নিজেদের কোন্দল ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে৷ তাদের অবশ্যই দায়িত্ব স্বীকার করতে হবে এবং দেখাতে হবে, আরও ভালো ফিফা কী রকম হতে পারে৷ যেমন ফিফা আসলে কী রকম সংগঠন, তা অবশেষে স্পষ্ট করে বলতে হবে৷ এটি সুইস আইন অনুযায়ী কোনো জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং সম্পূর্ণ লাভজনক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান৷ এমন স্পষ্টবাদী স্বীকারোক্তি দিয়ে নতুন সূচনা হতে পারে৷
এটা মানতেই হবে, এ সব কথার মধ্যে অনেক আশা লুকিয়ে রয়েছে৷ ব্লাটার-এর পদত্যাগ সত্যি এক ফিফা-বিপ্লবের সূচনা ঘটাবে কি না, তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে৷ তবে সম্ভাবনা অবশ্যই রয়েছে৷ এবার এমন একজনকে প্রয়োজন, যিনি তার সদ্ব্যবহার করবেন৷