বড় সমাবেশ বড় বাধা!
২৫ জুলাই ২০২৩আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা হলো বিএনপি যত বড় সমাবেশ করতে চাইবে তত বড় বাধার মুখে ফেলা হবে।
দুই দলের নেতা এবং তৃণমূল পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, সমাবেশের দুইদিন আগেই তারা মাঠে নেমে গেছে। বিএনপি রাজপথে ফয়সালা করতে চাইলে তার জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি মনে করছে সরকার বাধা দেবেই।ফলে ওই বাধা উপেক্ষা করেই আন্দোলন এগিয়ে নিতে হবে। সমাবেশে কয়েক লাখ লোকের উপস্থিতি ঘটাতে হবে।
২৭ জুলাই ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে এরইমধ্যে ঢাকার বাইরে থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। শুধু ঢাকার আশপাশের জেলা ছাড়া আর সবাইকে বুধবারের (২৬ জুলাই) ঢাকায় থাকতে বলা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকায় যারা এসেছেন তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এটা স্পষ্ট যে যেদিন সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের তারুণ্যের সমাবেশ থেকে তার পরদিন থেকেই ধাপে ধাপে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসছেন। আর যারা তারুণ্যের সমাবেশে এসেছেন তাদের একটি অংশ ফিরে যাননি। ঢাকায়ই অবস্থান করছেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তাই ২২ তারিখ সমাবেশ থেকে মাত্র চারাদিনের ব্যবধানে ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি দেয়া হয়।
বিএনপির তৃণমূলের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, "আমরা জানি সরকার বাধা দেবেই। পথে পথে তল্লাশি করা হবে। পুলিশ চেক পোস্ট বসাবে। তাই আমরাও কৌশলী। একবারে ঢাকায় রওনা না হয়ে ধাপে ধাপে ব্যক্তিগতভাবে যাচ্ছি। আর আমরা অনেকেই এখন বাটন ফোন ব্যবহার করছি এই ধরনের কর্মসূচিতে যাওয়ার সময়। যাতে আমাদের ফোন ঘেঁটে কিছু না পায় পুলিশ। আর আমরা এখন চেষ্টা করছি আগামী কয়েক মাসের জন্য ঢাকায়ই অবস্থান করতে। সে কারণে তারুণ্যের সমাবেশে যোগ দেয়ার পর অনেকে আর ঢাকায় ফেরেননি।”
২৭ জুলাই বিএনটি বড় সমাবেশ করতে চায়। কমপক্ষে ১০ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটাতে চায়। অনেক কথা শোনা গেলেও এখনো ওই দিনের সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা ছাড়া অন্য কোনো পরিকল্পনা নাই। তবে সেই কর্মসূচি অবরোধের মতো আরেকটু কঠোর হতে পারে। বিএনপি মনে করে এখন তারা সুসংগঠিত। তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোও তৎপর। তাই এখনই আরো কঠোর কর্মসূচি বাস্তবায়নের সময়। বিএনপির সঙ্গে তাদের সমমনা দলগুলোও ২৭ জুলাই ঢাকায় আলাদা আলাদা সমাবেশ করবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন, "আমাদের এটা মহাসমাবেশ, আমাদের অনেক লোকের সমাবেশ ঘটানোর পরিকল্পনা আছে। সেটা ১০ লাখের বেশি হতে পারে। সরকার এরইমধ্যে মামলা দিয়ে পথে পথে বাধা নির্যাতনের মাধ্যমে সমাবেশকে ব্যর্থ করতে চাইছে। কিন্তু তারা সেটা পারবে না। তাই তারা আমাদের মহাসমাবেশের দিন পাল্টা কর্মসূটি দিয়ে সংঘাত সৃষ্টি করতে চাইছে। সংঘাতের আশঙ্কা আছে। আর এই আশঙ্কা তৈরি করছে সরকার ও আওয়ামী লীগ।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,"আমরা সমাবেশ থেকে সরকারকে চূড়ান্ত ও কঠোর বার্তা দেব। নতুন কর্মসূচি দেব। এর বাইরে কোনো পরিবল্পনা আপাতত নেই।”
কিন্তু সরকার ও আওয়ামী লীগ খুব বড় সমাবেশ করতে দিতে চায় না বিএনপিকে। তারা আসলে বিএনপি যত বড় সমাবেশ করতে তত বড় বাধা তৈরির নীতি গ্রহণ করেছে। শুধু রাজনৈতিকভাবে পাল্টা কর্মসূচিই নয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এরজন্য ভালোভাবেই কাজে লাগাতে চায় সরকার। জানা গেছে পুলিশ ঢাকা শহরের মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মীদের চলাচলে আপাতত তেমন বাধা দিতে চায় না। কিন্তু ঢাকার প্রবেশ পথ ও জেলায় জেলায় তাদের সতর্ক তল্লাশি ও চেকপোস্ট এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে। নৌযান ও রেলেও নজর রাখবে তারা। এবার ব্যক্তিগত যানবাহনেও নজরদারি করা হচ্ছে। কারণ গোয়েন্দারা মনে করছেন গণপরিবহনের চেয়ে ব্যক্তিগত ও ছোট ছোট যানবাহন ভাড়া করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসতে পারে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সব ধরনের সম্ভাবনাকেই মাথায় রেখে এবার কাজ করছে। ২৮ জুলাই বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে। তবে এর আয়োজক আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ,স্বেচ্ছাবেক লীগ ও ছাত্রলীগ।
সমাবেশের আগের দিন দুই দির আগে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ তার ঢাকা মহানগরের নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মত বিনিময় সভা করেছে। এই মত বিনিময় সভার মূল উদ্দেশ্য হলো এক দিন আগেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যেন ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় । শান্তি সমাবেশ ছাড়াও তার ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নেবে ২৭ জুলাই।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা বলেন,"আমাদের কাছে খবর ছিলো যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্র দলের ২২ তারিখ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশ থেকেই বিএনপি টানা অবরোধ কর্মসূচিতে চলে যেতে পারে। আর সেই কারণেই আমরাও ঢাকায় দ্রুত সমাবেশের আয়োজন করি। আমরা ধারণা করছি বিএনপি এখন সুযোগ খুঁজছে , যেকোনো কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেই তারা ঢাকা অচল করে দেয়ার চেষ্টা করতে পারে। তাই আর কোনো ছাড় নয়। এখন থেকে আমরা কাউন্টার কর্মসূচিসহ সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে থাকব। ”
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন ২৭ তারিখ কোনো সংঘাতের আশঙ্কা দেখেন না। তার ধারণা, বিএনপি সমাবেশ করে বাড়ি চলে যাবে। ছাত্রলীগ যুবলীগ শান্তি সমাবেশ করবে। যদি বিএনপি তাদের সমাবেশ থেকে টানা অবস্থানে চলে যায় বা শহর অচল করে দেয় তাহলে কী হবে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন."বিএনপি একটা ঢোঁড়া সাপ। বিষ নেই। কাগুজে বাঘ। তারা হুঙ্কারই দেবে কিছু করতে পারবে না।” বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা এবং নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, "বিএনপি নিজেই একটা গায়েবি দল। আর সে কারণেরই এইসব গায়েবি অভিযোগ করে।”