ভাইরাসের বিরুদ্ধে মোক্ষম অস্ত্র ‘ড্রাকো’
২৯ নভেম্বর ২০১১মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক মোক্ষম অস্ত্র খুঁজে পেয়েছেন৷ এটির নাম ড্রাকো৷ ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির গবেষক টড রাইডার জানান যে, নামটি বেশ খাপ খেয়ে যায়৷ কেননা এটা সত্যি সত্যি যেন ড্রাকোনিয়ান আইনের মত কড়া এক ওষুধ, যা সব ধরণের ভাইরাসকে দমন করতে পারবে৷
গবেষক রাইডারের ভাষায়, ‘‘আমরা ১৫ ধরনের ভাইরাস নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি৷ এর মধ্যে রয়েছে সোয়াইন ফ্লু, আন্ত্রিক ফ্লু, পোলিও ও ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস ইত্যাদি৷ নতুন ওষুধটি এই সব ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পেরেছে৷ আমাদের হাতে ভাইরাসের বড় সড় এক তালিকা রয়েছে, যেগুলি নিয়ে আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে চাই৷ আশা করি ড্রাকো সব ধরনের ভাইরাস কাবু করতে পারবে৷''
ভাইরাসদের সরাসরি আক্রমণ করেনা ড্রাকো
ড্রাকো সরাসরি ভাইরাসদের আক্রমণ করেনা বরং দেহের ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত কোষগুলিকে আক্রমণ করে৷ টড রাইডার বলেন, ‘‘ভাইরাসরা কোনো কোষে দ্রুত বিস্তার লাভ করে সেই কোষকে ধ্বংস করে৷ তারপর সেই কোষ থেকে বের হয়ে পাশের কোষকে আক্রমণ করার চেষ্টা করে৷ ড্রাকো সংক্রামিত প্রথম কোষটিকেই ধ্বংস করে দেয়, শরীরের অন্যান্য কোষ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আগেই৷''
যে সব দেহকোষ ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত, ড্রাকো সেগুলিকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করতে পারে৷ দেহকোষের ‘আর এন এ' বা রিবোনিউক্লেইক অ্যাসিড দেখে বোঝা যায়, ভাইরাসরা কোথায় বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ ভাইরাসরা বংশ বিস্তার করতে থাকলে দেহ কোষে আর এন এ-র অতি দীর্ঘ ডুপ্লেক্স তৈরি হয়, যা স্বাভাবিক কোষে সাধারণত থাকে না৷ আর এতেই বোঝা যায় যে, কোনো ভাইরাস দেহ কোষকে আক্রমণ করেছে৷ টড রাইডার বলেন, ‘‘ড্রাকো ভাইরাসের আর এন এ দেখে সংক্রামিত কোষকে চিনতে পারে৷ তারপর অসুস্থ কোষকে এমন এক অবস্থায় নিয়ে যায়, যেন সে নিজেই নিজেকে ধ্বংস করতে পারে৷ এর ফলে সুস্থ কোষগুলি সংক্রামিত হয় না৷
গবেষণাগারের পরীক্ষায় আশার আলো দেখা গেছে
টড রাইডার এবং তাঁর সহকর্মীরা দেখিয়েছেন, ড্রাকো ঠিক এই ভাবে কাজ করে৷ অন্তত পক্ষে গবেষণাগারে নানা রকম ভাইরাস নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষায় এই ফলাফলই পাওয়া গেছে৷ এ ছাড়া সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত ইঁদুররা আরোগ্য লাভ করেছে৷ টড রাইডার বিশ্বাস করেন, ড্রাকোতে সর্বসংহারী উপাদান রয়েছে, যা দিয়ে সব রকম ভাইরাসজনিত সংক্রমণকে কাবু করা যায়৷ সাধারণ সর্দি কাশি থেকে শুরু করে বসন্ত রোগ পর্যন্ত৷ অন্যান্য গবেষকরা অবশ্য এ ব্যাপারে কিছুটা সন্দিহান৷ যেমন নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সাইনাই স্কুল অব মেডিসিন'এর অ্যান্ড্রেয়া ব্র্যাঞ্চ৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এক্ষেত্রে আমার সহকর্মীদের কাজের প্রশংসা করতে হয়৷ কিন্তু গবেষণাগারে ইঁদুরের দেহকোষে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা এক বিষয়, আর মানুষের জন্য ওষুধ তৈরি করা আরেক বিষয়৷ সেই পর্যন্ত যেতে হলে আরো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে৷''
এ ছাড়া এ ক্ষেত্রে বিরাট ঝুঁকিও রয়েছে৷ জানান মাইক্রোজীববিজ্ঞানী অ্যান্ড্রেয়া ব্র্যাঞ্চ৷ তাঁর কথায়, ‘‘যদি দেহের অনেক কোষ সংক্রামিত হয়, তা হলে তাদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়াটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ৷ এর ফলে রোগী নিজেই মারা যেতে পারেন৷ যে সব সংক্রমণে অল্প কিছু কোষ আক্রান্ত হয় ড্রাকো সেগুলিকে ধ্বংস করতে পারে৷ রোগী সুস্থও হয়ে উঠতে পারেন৷ কিন্তু হেপাটাইটিস বি-এর মত রোগ, যেখানে যকৃতের অনেকটাই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়, সেখানে ড্রাকো ব্যবহার করলে রোগীর পুরো লিভারই নষ্ট হয়ে যাবে৷ সেক্ষেত্রে লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া রোগী বেঁচে থাকতে পারবেন না৷ বিপদটা এখানেই, যদি ভাইরাসদের আক্রমণ না করে দেহকোষকে আক্রমণ করা হয়৷''
তবে টড রাইডার ও তাঁর সহকর্মীরা অবশ্য ভীত না হয়ে তাঁদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন৷ পরবর্তীতে তাঁরা পরীক্ষা করে দেখতে চান, এবোলা ও এইচ আই ভি ভাইরাসের বিরুদ্ধে ড্রাকো কী ভাবে কাজ করে৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক