ভাঙন রুখে ঘুরে দাঁড়াবে তৃণমূল?
১৮ জানুয়ারি ২০২১মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সোমবার নন্দীগ্রামের তেখালির জনসভায় নন্দীগ্রামে থেকে ভোটে দাঁড়ানোর কথা বলে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করলেন নন্দীগ্রাম তথা পূর্ব মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র, দলত্যাগী শুভেন্দু অধিকারীকে৷ বললেন, বিজেপিকে এক ইঞ্চি রাজনৈতিক জমিও বিনা লড়াইয়ে ছাড়বে না তৃণমূল কংগ্রেস৷ বস্তুত গত কয়েক দিনে দলের যে ক'জন সাংসদ, বিধায়ক দলের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে, বুঝিয়ে সবাইকেই নিরস্ত করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব৷
সাংসদ অভিনেত্রী শতাব্দী রায় ফেসবুক লাইভ করে নিজের নতুন সিদ্ধান্ত ঘোষণার কথা জানিয়েছিলেন৷ পরদিনই তার দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল৷ সেখানে অমিত শাহ'র সঙ্গে দেখা করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি শতাব্দী৷ কিন্তু দলের আরেক সাংসদ, মমতার ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জির সঙ্গে বৈঠকের পর শতাব্দী ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে জানান, কাজ করতে গেলে এরকম অভাব অভিযোগ থাকতেই পারে৷
উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের দাপুটে নেতা গৌতম দেব অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন প্রকাশ্যেই৷ সিনিয়র নেতা সুব্রত বক্সির সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর তিনিও ‘ঠান্ডা' হয়েছেন৷ হাওড়ার তৃণমূল সাংসদ, প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার প্রসূন ব্যানার্জি প্রকাশ্যে ‘অভিমান' জানিয়েছিলেন৷ তিনিও এখন শান্ত৷
তবে যারা এর মধ্যেই দল ছেড়ে গেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তৃণমূল৷ মমতা যেমন নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে লড়ার কথা বলে শুভেন্দু অধিকারী ও তার রাজনৈতিক প্রভাবশালী পরিবারকে চ্যালেঞ্জ করলেন, তেমনই প্রাক্তন মন্ত্রী ও মেয়র শোভন চ্যাটার্জির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র, প্রাক্তন সাংসদ কুনাল ঘোষ৷ দলে প্রাপ্য সম্মান না পাওয়ার কথা বলে বিজেপিতে গেছেন শোভন৷ কুনালের কটাক্ষ, যে দল নিজেদের পার্টি অফিসে নারদার ঘুষের টাকা নেওয়ার ভিডিও দেখিয়ে শোভনের গ্রেপ্তারি দাবি করেছিল, সেই দলে যোগ দিয়ে উনি কতটা সম্মান বাড়ালেন? অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ, যিনি মমতার দাক্ষিণ্যেই এর আগে একাধিক সরকারি পদ পেয়েছেন, তিনি সম্প্রতি মুসলিমবিরোধীমন্তব্য করে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি রাজনৈতিক আনুগত্য বদলাবেন৷ তার কারণ হিসেবে রুদ্রনীল বলেছেন, পদ দিলেও তাকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি৷ কুনালের পাল্টা কটাক্ষ, ডিসেম্বরে সরকারি পদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু মনে হয়নি৷ কিন্তু যেই মেয়াদ শেষ হলো, বিবেক জাগ্রত হলো!
যারা দলত্যাগী, তাদের সম্বন্ধে কুনালের মন্তব্য, ‘‘এদের সংখ্যাটা দশমিক শূন্য এক শতাংশও নয়৷ আজকের দিনে মিডিয়ার সূত্রে তারা সামনে আসছে৷ এবার, কাজ করতে গেলে কিছু সমস্যা হয়৷ যে কোনো সংসারে হয়, পরিবারে হয়, সংগঠনেও হয়৷ হতেই পারে৷ কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন, তারা দায়িত্বটা পুরো মেয়াদ ভোগ করার পর এই কথাগুলো বলছেন৷ মানুষ তাদের চিনে নিচ্ছেন৷ এটা দলের যে খুব সংকটের বিষয়, তা আদৌ নয়৷''
এই পুরো মেয়াদ পদে থাকার পর হঠাৎ হৃদয় পরিবর্তন নিয়ে কটাক্ষ, বিদ্রূপ, সমালোচনা সমাজের অন্যান্য স্তরেও হচ্ছে৷ সম্প্রতি এক বিতর্কসভায় অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের রঙ বদল নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন আরেক অভিনেতা সায়নী ঘোষ৷ তিনি তার আপত্তির কারণটা বোঝাতে গিয়ে বললেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সব থেকে বেশি গণতন্ত্রে, বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী৷ এর আগে যারা রাজনীতি করেছে, তারা সেটায় হস্তক্ষেপ করেনি৷ কিন্তু এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, সুবিধাবাদের রাজনীতি তো অবশ্যই চলছে৷ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বদলের একটা পালা চলছে, যাকে আমি বলবো, ‘যেমন খুশি লাফাও প্রতিযোগিতা'! সেই জায়গা থেকে এটা অবশ্যই একটা চিন্তার ব্যাপার৷ কারণ, সুশাসনের সঙ্গে সুপরিবেশও পশ্চিমবঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে৷''
পরিস্থিতি বদলালে দ্রুত দল বদলে ফেলার প্রবণতা নতুন নয়৷ কিন্তু এবার সেই সুবিধাবাদী নীতি প্রকাশ্য বিরোধিতার মুখে পড়ছে৷ যে মেজাজটা ধরা পড়েছে অভিনেতা পরমব্রত চ্যাটার্জির সদ্য প্রকাশিত একটি লেখায়, যেখানে উনি বলছেন, ‘‘বিজেপিতে যেতে হলে গটগট করে যাও, কিন্তু সেটার নৈতিকতা বোঝাতে এসো না!''