1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভানজে সম্মেলন: হলোকস্টের নীল নকশা

২০ জানুয়ারি ২০১২

ঠিক ৭০ বছর আগে ২০ জানুয়ারি তারিখে বার্লিনের দক্ষিণ উপকণ্ঠের ভানজে এলাকায় ১৫ জন উচ্চপদস্থ নাৎসি কর্মকর্তা বৈঠক করে৷

https://p.dw.com/p/13m73
এই ভবনেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভানজে সম্মেলনছবি: Kampe, GHWK

সেখানেই ইউরোপীয় ইহুদিদের সুপরিকল্পিতভাবে নিধন করার নীল নকশা তৈরি হয়েছিল৷ নাৎসিদের ইহুদি হত্যা অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল ১৯৪২-এর আগেই৷

এই কুখ্যাত ভানজে সম্মেলনের আমন্ত্রণ এসেছিল সেই সময়কার হিটলার রাইশের মুখ্য নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান রাইনহার্ড হাইডরিশের কাছ থেকে৷ উপস্থিত কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিল এসএস বাহিনীর অফিসাররা, মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রসচিবরা এবং নাৎসি প্রশাসনযন্ত্রের শীর্ষ ব্যক্তিরা৷ এদের অর্ধেকের বয়স ছিল ৪০ বছরেরও কম৷ প্রতি দুজনের মধ্যে একজনের ছিল ডক্টরেট উপাধি৷ এবং সকলেই ছিল সাংঘাতিক উচ্চাভিলাষী৷

Auschwitz Soundgalerie Flash-Galerie
রেলপথে আউশভিৎস’এর নিধন শিবিরে নিয়ে আসা হতো ইহুদিদেরছবি: AP

মাত্র ৯০ মিনিট চলেছিল ভানজে বৈঠক৷ এবং তার মধ্যেই ইহুদি প্রশ্নের ‘চূড়ান্ত নিষ্পত্তি'র সার্বিক নেতৃত্ব হাতে নেয় হাইডরিশ৷ ভানজে বৈঠকের প্রটোকল লেখে এসএস বাহিনীর কর্নেল আডল্ফ আইশমান৷ কার্যত হলোকস্ট অর্থাৎ ইহুদি নিধনের এক নির্দেশনামার রূপ নেয় এই নথি৷ ইহুদিদের নির্বিচারে বিতাড়নের কাজ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় আইশমানকে৷

ইতিহাসবিদদের অধিকাংশই অবশ্য এ ব্যাপারে একমত যে এই সম্মেলনের আগেই জার্মানির দখলিত এলাকায় একজন ইহুদিকেও জীবিত না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল নাৎসি নেতৃত্ব মহলে৷ এবং তা কার্যকরও হতে শুরু করেছিল৷ বার্লিন হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ মিশায়েল ভিল্ট বলছেন, ১৯৪১ সালের জুন মাসেই অর্থাৎ ভানজে সম্মেলনের ছয় মাস আগে এসএস বাহিনী সুপরিকল্পিতভাবে ইহুদি নিধনের কাজ শুরু করে দিয়েছিল৷ তখনকার হিটলার-জার্মানির অধিকৃত সোভিয়েত ভূখণ্ডে পাঁচ লক্ষ ইহুদি শিশু, নারী ও পুরুষকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়৷ ইতিহাসবিদ ভিল্ট বলছেন,‘‘নাৎসি সরকার সামরিক দখলদারির মধ্য দিয়ে তার প্রভাববলেয়ে পেয়ে গিয়েছিল লক্ষ লক্ষ ইহুদিকে৷ আর এই ইহুদিদের খতম করার পরিকল্পনা হয়ে উঠেছিল আরো বেশি দানবিক, আরো প্রকাণ্ড৷''

Auschwitz Soundgalerie Flash-Galerie
নাৎসিদের ইহুদি নিধন যজ্ঞের অন্যতম প্রধান শিবির আউশভিৎসছবি: AP

জার্মান ইতিহাসবিদ মিশায়েল ভিল্ট মনে করেন, ভানজে সম্মেলনে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়ার তেমন কিছু আর ছিলনা৷ বরং রাইশ মুখ্য নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান রাইনহার্ড হাইডরিশের লক্ষ্য ছিল ঐ সম্মেলনে উপস্থিত নাৎসি কর্মকর্তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া যে, ‘ইহুদি প্রশ্নের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি'র দায়িত্ব তার দপ্তরের কাঁধেই ন্যস্ত৷ এবং নিধনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই নেয়া হয়েছে৷ এই অমানবিক কর্মকাণ্ডে নিজের নেতৃত্বকে সুনির্দিষ্ট আদল দেয়া এবং অন্যান্য সব মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ও সাহায্য সুনিশ্চিত করতেই সম্মেলন ডাকে হাইডরিশ৷

ভানজে সম্মেলনের ১৫ পৃষ্ঠার প্রটোকলে ইউরোপের ইহুদিদের পুরোপুরি ধ্বংস করার পরিকল্পনার দ্ব্যর্থহীন উল্লেখ আছে৷ বলা হয়েছে, গোটা ইউরোপ মহাদেশের ‘‘পুব থেকে পশ্চিমে চিরুনি অভিযান'' চালানো হবে৷ ‘‘অপসারিত ইহুদিদের'' তোলা হবে ‘‘ট্রানজিট ঘেটোতে''৷ কর্মক্ষম মানুষদের রাস্তা তৈরির কাজ করতে বাধ্য করা হবে, যদিও তাদের বড় অংশ শারীরিক ক্ষয়ের কারণেই দেহ রাখবে বলে এই প্রটোকলে বলা হয়েছে৷

65 Jahre Befreiung Auschwitz
কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের চুল্লিতে পোড়ানো হত ইহুদিদের মৃতদেহছবি: AP

ভানজে সম্মেলন স্মৃতিভবনের পরিচালক নরব্যার্ট কাম্পেও মনে করেন, ইহুদি নিধনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল আগেই৷ হাইডরিশ নিজে ভানজে সম্মেলনের ফল নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট হয়েছিল৷ তার মনে হয়েছিল, অংশগ্রহণকারীরা হয়তো ‘চূড়ান্ত নিষ্পত্তি'র ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করবে, বিরোধিতা করবে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত পূর্ণ সমর্থনই মেলে৷

এভাবেই নৃশংস এক নিধন পরিকল্পনার দরোজা খুলে দেয়া হয় হাটকরে৷ ষাট লক্ষ ইহুদিকে গ্যাসচেম্বারে ঢোকানো হয়, গুলি করা হয়, ফাঁসিতে ঝোলানো হয় অথবা অমানুষিক পরিশ্রম করিয়ে মেরে ফেলা হয়৷ ১৯৪২ এর মে মাসে প্রাগ শহরে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের এক বোমা হামলায় গুরুতর আহত হয় রাইনহার্ড হাইডরিশ৷ এই আঘাতেই কয়েকদিন পর মৃত্যু হয় তার৷

১৯৪২ এর ২০ জানুয়ারি ভানজে সম্মেলন হয়েছিল যে ভিলায় তা এখন এক জাতীয় স্মৃতি ও শিক্ষা ভবন৷

প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান