ভারত-পাক শান্তি আলোচনা
১৮ আগস্ট ২০১৩আবারো ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক চাপের মুখে৷ শান্তি আলোচনার ওপর সংশয়ের কালো ছায়া৷ তা সত্ত্বেও, ভারত ও পাকিস্তানের উচিত হবে পারস্পরিক স্বার্থে দ্বিপাক্ষিক শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাওয়া৷ হালের অস্ত্রবিরতি রেখা লঙ্ঘন নিয়ে গুলি বিনিময়ে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তাতে কিছু সামরিক বিশেষজ্ঞ এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর কিছু প্রাক্তন কর্মকর্তা মিডিয়ার সামনে যেভাবে বয়ান দিচ্ছেন, সরকার যদি তাতে কান দেন, তাহলে ফল হিতে বিপরীত হতে পারে, এমনটাই ধারণা দুদেশের সুশীল সমাজের৷
ভারত ও পাকিস্তানের পিপলস ফোরামে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কংগ্রেস সাংসদ মনিশঙ্কর আইয়ার মনে করেন, আলোচনা যদি সমাধানের পথ না হয়, তাহলে বিকল্প পথ কি সামরিক অভিযান? হালে নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাঁচজন ভারতীয় জওয়ান প্রাণ হারিয়েছে, পাকিস্তানের তরফেও হতাহত হয়েছে৷ সামরিক বদলা নিতে গেলে সেই সংখ্যাটা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সহজেই অনুমেয়৷
উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, এক সময়ে উভয় দেশের মধ্যে সিয়াচেন এবং কাশ্মীর নিয়ে চুক্তি হতে যাচ্ছিল, কিন্তু সামরিক বাহিনী তাতে নাক গলাতে তা ভেস্তে যায়৷ স্যার ক্রিক ইস্যুর সমাধান না হওয়ায় দুদেশের মৎসজীবীরা একে অপরের জলসীমায় ঢুকে পড়ে না জেনে৷ যেহেতু জলসীমা চিহ্নিত নয়, তাই অনুপ্রবেশের দায়ে তাঁদের জেলে যেতে হয়৷ সিয়াচেনের সামরিকীকরণে সেখানকার পরিবেশ এবং চাষবাদের সর্বনাশ হচ্ছে৷
পাকিস্তানের সাংবাদিক এবং শান্তিবাদী কারামত আলি প্রশ্ন তোলেন, কেন ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও চীন তাদের ঝুলে থাকা সীমান্ত ইস্যুর সন্তোষজনক সমাধান করতে পারছে না? অথচ সাধ্যের বাইরে খরচ করে যাচ্ছে সামরিক খাতে৷ সিয়াচেনের বাসিন্দা মোটুপ চেওয়াং বলেন, সিয়াচেনে সামরিক বাহিনীর উপস্থিতির অভিঘাত কল্পনার বাইরে৷ সিয়াচেন এবং ঐ অঞ্চলের অন্যান্য গ্লেসিয়ার সিন্ধু নদীর জলের উৎস, যার ওপর নির্ভর করে দুদেশের কৃষিকাজ৷
ভারত ও পাকিস্তানে সম্পর্কের উত্থান-পতনের ইতিহাসটা আজও পালটায়নি৷ জঙ্গি হামলা, গুলি বিনিময়, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ সমানে চলছে৷ তবু দুদেশের সরকারকে শান্তির একটা গ্রহণযোগ্য পথ খুঁজে বার করতেই হবে৷ সেটার জমি তৈরির প্রাথমিক কাজ দুদেশের মৌলবাদী শক্তিগুলিকে দমন করা এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা নীতিতে সামরিক কর্তাদের অঙ্গুলি হেলন নিয়ন্ত্রণ করা৷
ভারতের সঙ্গে শান্তি আলোচনা এই অঞ্চলের সুস্থিতির জন্যই শুধু জরুরি নয়, পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যও জরুরি৷ সামরিক বাহিনীকে বাড়তে দিলে কী হয়, সেটা প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ খুব ভালোভাবেই জানেন৷ প্রাক্তন সেনা প্রধান পারভেজ মুশাররফের হাতে গদিচ্যুত হওয়ার কথা নিশ্চয় তিনি ভুলে যাননি৷ তাই নিজেকে এবং পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখতে সামরিক বাহিনীকে তার সীমার মধ্যে রাখতে হবে৷