ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত
১৯ নভেম্বর ২০১৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আগরতলার কাছে আখাউড়ায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে আন্তর্জাতিক স্তরের পূর্ণাঙ্গ চেক-পোস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্ডে৷ তাঁর বক্তব্যে তিনি জানালেন, এটা আনুষ্ঠানিকতার দৃষ্টিতে না দেখে দেখতে হবে দু'দেশের বাণিজ্যিক তথা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পরবর্তী সোপান হিসেবে৷ বলা বাহুল্য, এর মাধ্যমে দু'দেশের সীমান্ত বাণিজ্য বাড়ানোর পথে যুক্ত হলো এক নতুন মাত্রা৷ ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভারত-বাংলাদেশ একে অপরের সঙ্গে যেভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, বিশ্বের ইতিহাসে তা বিরল৷ বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে এবং জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণে ভারত তার সহায়-সম্পদের মধ্যে যতটুকু করা সম্ভব, তা করতে কৃতসংকল্প৷
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর তাঁর বক্তব্যে বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতিতে বাড়ে দেশের সমৃদ্ধি৷ জনগণের কল্যাণে রাখে অবদান৷ আখাউড়া পূর্ণাঙ্গ চেক-পোস্ট সেই অভিষ্ট লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে৷ অদূর ভবিষ্যতে সমগ্র উপমহাদেশ সামিল হবে অভিন্ন অর্থনৈতিক ইউনিয়নে৷ উল্লেখ্য, আখাউড়া স্থলসীমা শুল্ক কেন্দ্র ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার সব থেকে বড় স্থলসীমা বন্দর৷ দু'দেশের মধ্যে বছরে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষের যাতায়াতের ব্যবস্থা করে থাকে৷ গড়ে ২০০ বাংলাদেশি ট্রাক ত্রিপুরায় প্রবেশ করে৷ দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ ভিসা মঞ্জুর করা হয়ে থাকে৷ তবে বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার দরুণ সেটা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৭০ থেকে ১০০-র মধ্যে৷
ত্রিপুরা থেকে পণ্য আমদানি বাড়ানোর কথা বলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৷ ২০১২-১৩ সালের হিসেবে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ত্রিপুরায় রপ্তানি করেছে ২৪৫ কোটি টাকার পণ্য আর আমদানি করেছে তার চেয়ে কম৷ উল্লেখ্য, সর্বভারতীয় ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ঘাটতি বিরাট৷ বাংলাদেশ তার মোট আমদানির ১৫ শতাংশ করে থাকে ভারত থেকে৷ যদিও বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ওপর ভারত সার্ক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির অধীনে বাংলাদেশকে দেয় শুল্ক ছাড়, সেটা ভারতের আমদানির এক শতাংশের কম৷ বেশির ভাগ হয় সীমান্তের চোরাপথে৷
ভারত আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর আরো ১৩টি পূর্ণাঙ্গ চেক-পোস্ট খুলতে চায়৷ তার জন্য পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বরাদ্দ করা হয়েছে ৬৩৫ কোটি টাকা৷ প্রথম পূর্ণাঙ্গ চেক-পোস্ট খোলায় পাকিস্তান সীমান্তে আটারিতে৷ পশ্চিমবঙ্গে পেট্রাপোল, হিলি, চ্যাংড়াবাঁধা, মেঘালয়ে ডওকি, আসামে সুতারকান্দি, মিজোরামে কাওয়ারপুলছয়া, মনিপুরে মিয়ানমার সীমান্তে মোরে৷ এছাড়া বিহারে নেপাল সীমান্তে দুটি এবং উত্তর প্রদেশে দুটি পূর্ণাঙ্গ চেক-পোস্ট খুলবে ভারত৷
ত্রিপুরার শিল্পমন্ত্রী জীতেন্দ্র চৌধুরি বাংলাদেশের সঙ্গে আরো সীমান্ত বাজার খোলার দাবি জানালে সুশীল শিন্ড জানান, ত্রিপুরার দাবি আটটি সীমান্ত হাটের, কিন্তু সবুজ সংকেত দিয়েছে চারটির৷ কসবাতে সীমান্ত হাটের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে ৭৫ কিমি দূরে সাব্রুমের কাজ শুরু হতে চলেছে৷ মেঘালয়ের সীমান্ত হাট ইতিমধ্যেই চালু হয়ে গেছে৷ ত্রিপুরার ভৌগোলিক অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ৷ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রবেশ-দ্বার হয়ে উঠতে পারে৷