বাড়িতে টিকাকরণ কি নিয়মবিরুদ্ধ?
৫ আগস্ট ২০২১তাহলে কি বাড়িতে টিকা দিলে কোভিড প্রোটোকল লঙ্ঘিত হবে?
রাজ্যে দেবাঞ্জন দেবের ভুয়ো টিকা শিবিরের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দপ্তরকে। তারপর থেকে কলকাতা পুরসভা সবসময় বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছে। বাড়ি গিয়ে টিকা দেওয়ার ঘোষণায় পুরসভা বলেছে, ৬০ বছরের উপর অশক্ত, শয্যাশায়ী বা ৮০-র বেশি বয়সিদের টিকা বাড়ি গিয়েই দেওয়া হবে। তাদের প্রত্যেককেই ‘স্পেশ্যাল কেস' হিসেবে টিকা দেওয়া হবে। কর্মসূচির নাম ‘ভ্যাকসিনেশন নিয়ার সেন্টার'। এ নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। রাজ্য সরকার বার বার জানিয়েছে, বাড়ি গিয়ে টিকাকরণে তাদের অনুমোদন নেই। যদিও 'টক টু কেএমসি' অনুষ্ঠানে মুখ্য পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বলেন, "এটা দুয়ারে ভ্যাকসিন নয়, এটা অসুস্থ, শয্যাশায়ী, এবং প্রবীণদের জন্য কলকাতা পুরসভার মানবিক প্রয়াস। রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে কথা বলে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
বাড়িতে কীভাবে টিকাকরণ?
টিকাকেন্দ্রে গিয়ে নাম লেখালেই সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে না। পুরসভার কর্মীরা ফোন নম্বর রেখে দেবেন, তারপর নির্দিষ্ট সময়ে ফোন করে তারাই এসে দিয়ে যাবেন টিকা। এমনটাই এই কর্মসূচির নিয়ম। এ ধরনের কর্মসূচিতে অনুমোদন নেই স্বাস্থ্য দপ্তরের। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর বক্তব্য, বাড়িতে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনায় সম্মতি নেই স্বাস্থ্য দপ্তরের। কেন? অধিকর্তার মতে, টিকা দেওয়ার পরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না তা দেখতে হয়। সেজন্য চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর উপস্থিতিতে অন্তত আধ ঘণ্টা টিকাপ্রাপককে পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। এই পরিকাঠামো নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা দেওয়া স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কোনো সংস্থা যদি এই পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করে নিয়ম মেনে টিকা দেয়, তা দিতেই পারে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে অতটা চিন্তিত নন। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "টিকা নিলে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে ঠিকই। তবে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হলে চিন্তার। সেক্ষেত্রে যে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়িতে যাবেন, তাদের হাতে এলার্জি চিকিৎসার উপকরণ থাকা জরুরি। প্রবীণদের টিকা দেওয়ার জন্য এটুকু ঝুঁকি নেওয়া যেতেই পারে।”
এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক মহলের একাংশ মনে করেন, দুয়ারে টিকাকরণ নিয়মবিরুদ্ধ। তাতে কোভিড প্রোটোকল মেনে চলা সম্ভব নাও হতে পারে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, "এটা একটা সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার চেষ্টা। অন্যান্য সুবিধা যেমন দুয়ারে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, সেভাবেই টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরপরে দুয়ারে ডাক্তার, দুয়ারে অপারেশনের কথাও বলা হবে।”
বিতর্কের আবর্তে টিকা
কলকাতা পুরসভার ভবানীপুর এলাকায় গত মাসে হইহই করে চলছিল দুয়ারে ভ্যাকসিন কর্মসূচি। ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটরের উদ্যোগে এই কর্মসূচি চালু হয়েছিল। অনেক প্রবীণ মানুষ টিকা নিয়েছিলেন। এর পরেই স্বাস্থ্য ভবন শো-কজ নোটিস দেয় সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। এ ধরনের কর্মসূচিকে বেআইনি বলে চিহ্নিত করা হয়। কোন যুক্তিতে?
কোভিড বিধি মেনে সিভিসি (কোভিড ভ্যাকসিনেশন সেন্টার) কোড দিয়ে টিকাকরণ করানো হয়নি। তেমনই টিকা নেওয়ার পর প্রাপকের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল কি না, তা দেখার জন্য নজরদারি করার বিষয়টিও অবহেলা করা হয়েছে। যদিও কলকাতার একাধিক পুর প্রতিনিধির বক্তব্য, বিভিন্ন জায়গায় ভোররাত থেকে মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। অনেক অসুস্থ, প্রবীণ মানুষ টিকাকেন্দ্রে এসে লাইন দিতে পারছেন না। তাদের কথা ভেবে পুরসভার কর্মীরা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যেতে চাইছেন।
ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন জেলায় একাধিক পুরসভায় বাড়ি গিয়ে অশক্ত ও প্রবীণদের টিকা দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বাড়ি গিয়ে টিকা দিলে ভুয়ো ভ্যাকসিন চালিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও বাড়বে বলে অনেকের আশঙ্কা। তবে কোভিড প্রোটোকল মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই ডয়চে ভেলেকে বলেন, "অনৈতিক কাজকর্ম রোখার জন্য নজরদারি রাখতে হবে। ভুয়োর ভয়ে প্রবীণদের টিকাকরণ থেকে পিছিয়ে আসা ঠিক হবে না। এক্ষেত্রে গ্রেটার মুম্বই পুরসভার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। তারা আগেই বাড়ি গিয়ে টিকা দিয়েছে।”