ভারত সফরে চীনা প্রধানমন্ত্রী
১৯ মে ২০১৩সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে ভারত ও চীনের কূটনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যে চীনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লি কোচিয়াং তিনদিনের সফরে দিল্লিতে এসে পৌঁছোবেন৷ তাঁর প্রথম বিদেশ সফরে ভারতকেই তিনি বেছে নিয়েছেন৷ এটাকে ভারতকে গুরুত্ব দেবার ইঙ্গিত বলে ধরা হচ্ছে৷ রবিরার সন্ধ্যায় কোচিয়াং এক প্রাইভেট বৈঠকে মিলিত হবেন তাঁর প্রতিপক্ষ মনমোহন সিং-এর সঙ্গে৷ রাতে কোচিয়াং-এর সম্মানে বেসরকারি ভোজ দেবেন ড. সিং৷
সোমবার ২০ মে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনার পর দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শুরু হবে প্রতিনিধিস্তরে বৈঠক৷ যার শীর্ষ বিষয় হবে সীমান্ত ইস্যু, দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা বাণিজ্য এবং ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী সরে যাবার পর দুদেশের ভূমিকা৷ উঠতে পারে দলাই লামার প্রসঙ্গ৷ দিল্লির কূটনৈতিক মহল মনে করছেন সীমান্ত সমস্যা মেটাতে দুপক্ষেরই প্রয়াস দ্বিগুণ করতে হবে৷ সীমান্ত জট কাটাতে ভারতও যে সমান আগ্রহী সেটা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে৷ কারণ দুদেশের কৌশলগত স্বার্থে এর সমাধান জরুরি৷
সোমবার শীর্ষ বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন এবং যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হবে৷ তাতে সীমান্ত সমস্যার বিষয়টির উল্লেখ থাকবে৷ তবে উভয় নেতা এবিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন না৷ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয় একথা৷ উল্লেখ্য, সীমান্ত ইস্যু নিয়ে এর আগে দুদেশের প্রতিনিধিস্তরে ১৫ দফা আলোচনা হয়েছে, তাতে মোটামুটি একটা সমাধানসূত্রে পৌঁছানো গেছে৷ এখন দুদেশের এক গ্রহণযোগ্য কাঠামোর মধ্যে তার খুটিনাটি বিষয় চূড়ান্ত করতে পরবর্তী আলোচনা হবে৷
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্ত প্রশ্নে ভারত কড়া মনোভাব নেবে৷ লাদাখ অঞ্চলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর হবেনা সেবিষয়ে দিল্লি সুস্পষ্ট আশ্বাস চাইবে বেইজিং-এর কাছে৷ ভারতের জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলির চাপ মনে রেখে চীনকে বোঝাতে হবে যে, ভারত এখন আর ১৯৬২ সালের ভারত নেই৷
অন্যদিকে চীনের সেনা যেখানে তাঁবু গেড়েছিল, সেটা ভারতীয় ভূখন্ড বলে মেনে নিতে নারাজ বেইজিং৷ কারণ ঐ এলাকা চিহ্নিত নয়৷ এক কথায় সেটা নো-ম্যানস ল্যান্ড৷ কাজেই অবিলম্বে দুদেশের সীমান্ত চিহ্নিতকরণ জরুরি৷
সীমান্ত ইস্যু যাতে অন্য সব ক্ষেত্রে দুদেশের সহযোগিতায় বাধা না হয়, সেবিষয়ে চীন সজাগ৷ বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়াতে ভারতের তিনটি প্রধান বণিক সঙ্ঘের বৈঠকে বক্তব্য রাখবেন চীনা প্রধানমন্ত্রী৷ যাবেন মুম্বাইতে শিল্প ও বাণিজ্য নেতাদের সঙ্গে মিলিত হতে৷ বক্তব্য রাখবেন চীনের ভারত তথা বিদেশ নীতি নিয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স সংস্থায়৷
মুম্বাইতে তিনি সাক্ষাৎ করবেন দ্বারকানাথ কোটনিশের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে৷ ডা: কোটনিশ ১৯৩৮ সালে চীন-জাপান যুদ্ধে চীনা সেনাদের চিকিৎসায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন৷ দিল্লিতে তিনি দেখা করবেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে৷ বিরোধী নেত্রী সুষমা স্বরাজ এবং কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও দেখা করবেন তাঁর সঙ্গে৷ দিল্লি থেকে চীনা প্রধানমন্ত্রী যাবেন পাকিস্তানে৷ সেখান থেকে জার্মানি ও পরে সুইজারল্যান্ডে৷ পাকিস্তানে নতুন সরকারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ঝালিয়ে নেবেন তিনি৷ যদিও চীনের কাছে পাকিস্তান ‘অল-ওয়েদার বন্ধু৷'