ডুবোজাহাজ দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে বিতর্ক
২১ আগস্ট ২০১৩‘সিন্ধুরক্ষক' ডুবোজাহাজ বিপর্যয়ে বাস্তবিকভাবেই অথৈ জলে পড়লো ভারতীয় নৌ-বাহিনী৷ প্রাথমিক রিপোর্টে অবশ্য বলা হয়েছে যে, ডুবোজাহাজটির সামনের দিকে মজুত ছিল টর্পেডো৷ বিস্ফোরণ ঘটেছিল সেখানেই৷ কিন্তু এই ধরণের দুর্ঘটনা, যেখানে ১৮ জন নৌ-সেনার জীবনহানি এবং ব্যয়বহুল ডুবোজাহাজ হারানোর ক্ষতি জড়িত, সেখানে সঠিক কারণ জানা অত্যন্ত জরুরি, বলেছেন নৌ-বাহিনীর প্রাক্তন শীর্ষকর্তারা৷ এক্ষেত্রে স্রেফ অন্তর্ঘাত বলে পার পাওয়া যাবে না৷
জানতে হবে রাশিয়া থেকে ‘সিন্ধুরক্ষক' নামে ডুবোজাহাজটির খোলনলচে বদলে আরো আধুনিক করে সবে আনা হয়েছে, সেখানে কোনো ত্রুটি ছিল কিনা৷ জানতে কী সেই কারণ, যার জন্য হাইড্রোজেনে আগুন লাগে যায় এবং আপৎকালীন অবস্থার মোকাবিলায় সতর্কতামূলক জরুরি ব্যবস্থা ছিল কিনা এবং তার সঠিক প্রয়োগ হয়েছিল কিনা৷ এইসব জানতে অতি উন্নত ফরেনসিক এবং কেমিক্যাল বিশ্লেষণ দরকার৷ কারণ, তদন্তে দেরি হলে অনেক তথ্যপ্রমাণ জলেই নষ্ট হয়ে যাবে৷
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডুবোজাহাজের নীচের দিকে থাকে ব্যাটারি৷ তার ওপরে থাকে আগ্নেয়াস্ত্র৷ চার্জ করার সময় ব্যাটারি থেকে হাইড্রোজেন গ্যাস ‘লিক' করে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে৷ কারণ ২০১০ সালে ত্রুটিপূর্ণ ব্যাটারি ভাল্ভ থেকে হাইড্রোজেন লিক করেই একটি ডিজেল চালিত ডুবোজাহাজে আগুন লেগেছিল৷
ভারত-রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে ‘সিন্ধুরক্ষক' ভারতীয় নৌ-বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ১৯৯৭ সালে৷ তখন খরচ হয়েছিল প্রায় ৪০০ কোটি টাকা৷ অগ্নিকাণ্ডের পর সেটা মেরামতি এবং রণকৌশল ও মারণ ক্ষমতা আরো উন্নত করতে পাঠানো হয় রাশিয়াতে৷ তারজন্যও খরচ হয় কয়েকশো কোটি টাকা৷ কাজেই এই রকম অতি উন্নত একটা ডুবোজাহাজের এই পরিণতি সত্যিই নৌ-বাহিনীর পক্ষে এক বড়সড় ধাক্কা৷ ভারতের জলসীমা সুরক্ষিত রাখতে এবং বঙ্গোপসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব অক্ষুন্ন রাখতে কমপক্ষে ২০টি ডুবোজাহাজ দরকার ভারতের৷ এই মুহূর্তে আছে মাত্র ১৪টি৷
ভারত বিদেশ থেকে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, পরমাণুশক্তি-চালিত সাবমেরিন, আধুনিক দুরপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র এবং অন্যান্য সমর উপকরণ কিনে চলেছে, কিন্তু তার সঠিক ব্যবহারের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের দিকে জোর দেয়া হচ্ছে কী? প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা৷