সিনেমা হলে জাতীয় সংগীত বাধ্যতামূলক!
৪ ডিসেম্বর ২০১৬সিনেমা শুরুর আগে সিনেমা হলগুলিতে জাতীয় সংগীত বাজানো বাধ্যতামূলক করে এক নির্দেশিকা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট৷ নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যতক্ষণ জাতীয় সংগীত বাজবে, ততক্ষণ উপস্থিত সব দর্শককে উঠে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতের প্রতি উপযুক্ত সম্মান দেখাতে হবে৷ এমনকি সে সময় ‘এমার্জেন্সি গেট' ছাড়া বাইরে যাবার বা ঢোকার সব দরজা বন্ধ রাখতে হবে৷ অবশ্য উঠে দাঁড়ানোর এই বাধ্যবাধকতা থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ছাড় দেওয়া হয়েছে৷
এছাড়া জাতীয় সংগীত বাজানোর সময় সিনেমা হলের বড় পর্দায় দেখাতে হবে জাতীয় পতাকা৷ আগামী সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে সব সিনেমা হল এবং মাল্টিপ্লেক্সগুলিতে এই নির্দেশিকা কার্যকর করতে হবে৷ শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশ অবিলম্বে কার্যকর করার জন্য সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মুখ্য সচিবদের বলা হবে৷ ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়াতেও তা প্রকাশ করা হবে৷ তবে আজেবাজে জায়গায় তা ছাপা যাবে না বা দেখানো যাবে না৷ আপত্তিকর কোনো বস্তুর ওপর জাতীয় পতাকা ছাপা যাবে না৷ অর্থাৎ জাতীয় সংগীতের পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে৷
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপক মিশ্র ও অভিতাভ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ মন্তব্য করেন, জাতীয় সংগীতের জন্য প্রত্যেক নাগরিকের মনে একটা গর্ববোধ থাকা উচিত এবং জানা উচিত কীভাবে গানটি গাইতে হবে৷ আসলে আজকের দিনে অনেকেই জানেন না জাতীয় সংগীতের সঠিক গায়নশৈলি৷ কিন্তু এটা তাঁদের শেখা জরুরি, কারণ জাতীয় সংগীতকে শ্রদ্ধা করা বা সম্মান জানানো এক সাংবিধানিক দেশাত্মবোধ৷ প্রত্যেক নাগরিককে বুঝতে হবে এটা তাঁর দেশ, যে দেশের সম্মান রক্ষার জন্য সীমান্তের সেনা প্রহরীরা জীবন দিচ্ছেন৷ তাঁদের জন্যই এ দেশের নাগরিকরা ভোগ করছেন স্বাধীনতা ও স্বাধিকার৷
টেলিভিশন এবং বিজ্ঞাপনী প্রচারে জাতীয় সংগীতের অবমাননা বন্ধ করতে ভোপালের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার শ্যাম নারায়ন চৌসকি শীর্ষ আদালতে আর্জি জানান৷ চৌসকির আইনজীবী বলেন, ১৯৭১ সালের জাতীয় সম্মান রক্ষা আইনের সংস্থান নানাভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে৷ যেমন জাতীয় সংগীত বেসুরোভাবে বিকৃত উচ্চারণে গাওয়া হচ্ছে৷ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে অতিনাটকীয়ভাবে তা উপস্থাপন করা হচ্ছে৷ এমনকি জাতীয় সংগীত চলাকালে অনেককে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেও দেখা গেছে৷ এইসব অবমাননাকর আচরণ বন্ধ করা দরকার৷ বিষয়টির যথার্থতা খতিয়ে দেখে এই নির্দেশিকা জারি করেন শীর্ষ আদালত৷ বিচারপতিরা বলেন, জাতীয় সংগীতের প্রতি সম্মান জানানো বাধ্যতামূলক করা হলে দেশাত্মবোধ ও জাতীয়তাবাদের ধারণা তৈরি হবে৷
উল্লেখ্য, ষাটের দশকে ভারত-চীন যুদ্ধের পর থেকে সিনেমা শুরুর আগে সিনেমা হলগুলিতে জাতীয় সংগীত বাজানো শুরু হয়৷ কিন্তু জাতীয় সংগীত চলাকালীনই দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে ঢুকতেন বা বাইরে যেতেন৷ ফলে একটা বিশৃঙ্খল পরিবেশে জাতীয় সংগীত বাজতো৷ এ কারণে ধীরে ধীরে জাতীয় সংগীত বাজানোর নিয়ম উঠে যায়৷ কিন্তু মহারাষ্ট্র সরকার ২০০৩ সালে আবার সেই নিয়ম চালু করে৷ ওদিকে মাদ্রাজ হাইকোর্ট রায় দেয়, জাতীয় সংগীত চলাকালীন উঠে দাঁড়ানো বাধ্যতামূলক নয়৷ এতে সিনেমা দেখার আনন্দ ক্ষুণ্ণ হয়, ছবি প্রদর্শন ব্যাহত হয়৷ তাই এক মিডিয়ার তরফে এক জনমত সমীক্ষা শুরু করা হলে উঠে আসে বিতর্ক আর মতভেদ৷
কেউ কেউ মনে করেন, জাতীয় সংগীত বাজানো বাধ্যতামূলক, ঠিক আছে৷ কিন্তু উঠে দাঁড়ানোটা বাধ্যতামূলক করা ঠিক নয়৷ আবার কেউ কেউ মনে করেন, এর কোনোটাই বাধ্যতামূলক করা উচিত নয়৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপচারিতায় সেটাই বললেন প্রবীণ সাংবাদিক অমূল্য গাঙ্গুলি৷ তাঁর মতে, দেশাত্মবোধ বা দেশপ্রেম কোনোটাই বাইরে থেকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না৷ এটা আসতে হবে মনের ভেতর থেকে, সরকারের বা বিচারবিভাগের তর্জনি সংকেতে নয়৷ এ ধরনের ইস্যু নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ অভিযোগ করারও কোনো যুক্তি দেখি না৷ স্রেফ শীর্ষ আদালতের সময় নষ্ট করা৷ যার জন্য বড় বড় মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সময় দিতে পারে না৷ সবথেকে বড় কথা, জাতীয় সংগীত বিশেষ বিশেষ উপলক্ষ্যেই শুধু বাজানো উচিত, বলেন প্রবীণ সাংবাদিক অমূল্য গাঙ্গুলি৷
আপনি কী মনে করেন? সিনেমা হলে কি জাতীয় সংগীত বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত? লিখুন নীচের ঘরে৷