1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চীনের পণ্য বর্জনের হিড়িক

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়
২৮ অক্টোবর ২০১৬

প্রতি বছর দীপাবলীর আগে বাহারি বৈদ্যুতিক বাতিতে ছেয়ে যায় বাজার,যা মূলত আসে চীন থেকে৷ এবার সেই চীনা বাতি বিক্রির হার অনেক কম৷ কারণ ভারতে চীনা পণ্য বয়কটের ডাক, যাতে বেশ রুষ্ট বেইজিং৷

https://p.dw.com/p/2Rown
Bildergalerie Diwali Fest 2014 Indien
ছবি: Reuters/Ahmad Masood

চলতি বছরের শুরু থেকেই ভারতের বাজারে চীনা পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে মেসেজ চালাচালি হচ্ছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ তখন পাকিস্তান আর ভারতের মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়ছে৷ একটি বার্তা বহুল প্রচারিত হলো, যে ভারতে ঢালাও বিক্রি হয় চীনা পণ্য৷ সেই মুনাফা থেকে ভারতের শত্রু পাকিস্তানকে অর্থ দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে, নানাভাবে সাহায্য করে চীন৷ কাজেই সমস্ত চীনা পণ্য বয়কট করুন৷ তা হলে একইসঙ্গে চীন এবং পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেওয়া যাবে৷

এই চীনবিরোধী ‘জিগির' শুধু সেখানেই থেমে রইল না৷ কারণ ততদিনে পরমাণু প্রযুক্তি সরবরাহকারী দেশগুলোর জোটের সদস্য হতে ভারতের উদ্যোগে বাগড়া দিতে শুরু করেছে চীন৷ সেখানেও চীনের বক্তব্য পুরোপুরি পাকিস্তানঘেঁষা৷ বেজিং বলেছিল, ভারত পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র প্রসার রোধ চুক্তিতে সই করেনি, তা সত্ত্বেও যদি ভারত ওই জোটের সদস্যপদ পায়, তাহলে পাকিস্তানকেও সদস্য করতে হবে৷ পাকিস্তানও ওই চুক্তিতে সই করেনি বলে তাদেরকে জোটের বাইরে রাখা হয়েছে৷

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেই সময় অনেক উদ্যোগ নিয়েছিলেন৷ প্রথমে জোটের বাকি দেশগুলো সমর্থন দিয়ে চীনের আপত্তিকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছিলেন, তারপর সরাসরি চীনের সঙ্গে সমঝোতা করারও চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু তারপরও সফল হননি৷ এর পরই ভারতে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ এবং সরকারপন্থি যোগগুরু ও শিল্পোদ্যোগী বাবা রামদেব চীনা পণ্যের বিরুদ্ধে একটা জাতীয়তাবাদী ভাবনা জাগিয়ে তুলতে তৎপর হন৷ বিশেষ করে এই দীপাবলী উৎসবের আগে তারা বারবার চীনা পণ্য বয়কট করার সপক্ষে বিবৃতি দিতে থাকেন৷ তার কারণ, দীপাবলীতে ঘর সাজানোর বাহারি আলো থেকে আতসবাজি, উৎসবের মরশুমে ভারতে এক বড় টাকার ব্যবসা করে চীন৷ সেই পণ্যের বিক্রি যদি কিছু অংশও আটকে দেওয়া যায়, সেটাই ছিল উদ্দেশ্য৷ এর মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে, সীমান্তপার জঙ্গি হামলা এবং পাল্টা সামরিক আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, দেশে একটা যুদ্ধের জিগির উঠেছে৷ এবং হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ফেসবুকে চালু থেকেছে চীনা পণ্য বয়কটের আবেদন৷

ফলে আদতেই বেশ মার খেয়েছে চীনা আলো এবং আতসবাজির বিক্রি৷ অবশ্য সরাসরি চীনা সরবরাহকারীরা এই বয়কটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তা কিন্তু নয়৷ বরং দেশজুড়ে যেসব স্থানীয় ব্যবসাদার প্রতি বছরের মতো এ বছরও উৎসবের আগে প্রচুর পরিমাণে চীনা পণ্য মজুত করেছিলেন, মার খেয়েছেন তাঁরা৷

খোলা বাজারে এইসব ঘরসজ্জার পণ্যের বিক্রি অন্তত ৬০%‌ কমে গেছে৷ উত্তর বঙ্গ এবং উত্তর–পূর্ব ভারত, মূলত যে দুটি জায়গা দিয়ে চীনা পণ্য ভারতে ঢোকে, সেখানে রীতিমতো সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিরোধ হয়েছে চীনা পণ্যের বিরুদ্ধে৷ রাতের অন্ধকারে, চুপিসারে যাতে চীনা পণ্য ঢুকতে না পারে, তার জন্য ব্যবসায়ীদের একাংশ এমনকি রাতপাহারাও দিয়েছেন৷ এর প্রভাব পড়েছে রোজকার বিক্রিবাটাতেও৷ দোকানিরা চীনা পণ্য রাখতে ভয় পেয়েছেন অশান্তির আশঙ্কায়৷ কাজেই কূটনৈতিক চাল হিসেবে চীনা পণ্য বয়কটের ডাক অংশত যে সফল, সেটা সবাই দেখতে পাচ্ছেন৷

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, চীন আদতেই কি কোনো ‘‌উচিত শিক্ষা'‌ পেল?‌ এই বয়কটে কতটা ক্ষতি হলো চীনের?‌

বৃহস্পতিবারই চীন প্রথম এ ব্যাপারে, সরকারিভাবে তাদের মতামত জানিয়েছে৷ না, চীন আদৌ ব্যাপারটাকে গুরুত্বহীন বলে দেখানোর চেষ্টা করেনি, বরং নিজের বিরক্তিই প্রকাশ করেছে৷ বলেছে, চীন গোটা বিশ্বের পয়লা নম্বর ব্যবসায়ী দেশ৷ ‘‌ট্রেডিং নেশন'‌৷ এবং তাদের সারা বছরের ব্যবসার মাত্র ২%‌ রপ্তানি হয় ভারতে৷ কাজেই সেই ২%‌ ব্যবসা কমে গেলে চীনের আদৌ কোনো ক্ষতি হবে কিনা, সেটা ভারত ভেবে দেখুক৷

কিন্তু ভারত বিকল্প ব্যবস্থা না করে যদি চীনা পণ্য বয়কট করে, তা হলে ভারতীয় ব্যবসাদারদেরই ক্ষতি৷ আদতে ঠিক সেটাই কিন্তু ঘটেছে৷ মাথায় হাত দিয়ে বসেছেন সেই সব খুচরো ব্যবসায়ীরা, যাঁরা রাজনীতি, কূটনীতির এত মারপ্যাঁচ বোঝেন না৷ দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবাদের থেকেও যাঁদের কাছে বেশি জরুরি নিজের, পরিবারের, কর্মচারীদের পেট ভরানো৷ তাদের উৎসব যে এবার অনেকটাই নিরানন্দ হলো, তাতে কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই৷

একইসঙ্গে একটা প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছে চীন৷ বলেছে, এই চীনা পণ্য বয়কটের ডাক ভবিষ্যতে চীনা লগ্নিকারদের দু'‌বার ভাবাবে ভারতে শিল্পে বিনিয়োগ করার আগে৷