জাতীয়তাবাদের ঢেউ কাজে লাগাতে চায় বিজেপি
১২ মার্চ ২০১৯গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় ভারতের আধা-সামরিক সদস্যদের নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছিল৷ এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে ঢুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়ে জঙ্গি ঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে মোদীর সরকার৷ সেটিকে ঘিরেই জেগে উঠেছে জাতীয়তাবাদের আবেগ৷ তাই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে জাতীয়তাবাদের এই জোয়ারকে কাজে লাগাতেই প্রচার শুরু করেছে বিজেপি৷
ভারতে গত ১৬ বারের সংসদীয় নির্বাচনে অন্তত আটবার কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি৷ ১৯৮৪ সালে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল কংগ্রেস, তারপর ২০১৪ সালে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে মোদীর হিন্দুত্ববাদি বিজেপি দল৷
১৯৮৪ সালে পাঞ্জাবের শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে কংগ্রেস নেত্রী ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিহত হবার পর গোটা দেশে দেশাত্মবোধের এক জোয়ার এসেছিল৷ সেই জোয়ারে চারশ'রও বেশি আসন নিয়ে কংগ্রেস ফের ক্ষমতায় এসেছিল৷ সীমান্তের ওপার থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং সন্ত্রাসের মোকাবিলা করাই ছিল কংগ্রেসের প্রধান নির্বাচনি ইস্যু৷ কংগ্রেসকে ভোট দেয়া যেন এক দেশাত্মবোধক কাজ, এমনটাই ভোটের প্রচারে তুলে ধরেছিল কংগ্রেস৷
এখন জম্মু-কাশ্মীরের পটচিত্রটা একই৷ বিজেপি কি এই সুবিধা কাজে লাগাতে পারবে? রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক উদয়ন বন্দোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জঙ্গিবাদের বিপরীতে দেখা দিয়েছে একটা জাতীয়তাবাদ৷ একটা বার্তা গেছে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ফলে৷ ভোটে সেটা বাড়তি গুরুত্ব পাবে৷ অবশ্য নির্বাচন কমিশনের আচরণ বিধি অনুসারে নির্বাচনি প্রচারে সেটা তুলে ধরা যাবে না৷ তাই বিজেপির প্রচারে তুলে ধরা হবে ২০১৪ সালে বিজেপি যেসব উন্নয়নের কথা বলেছিল, সেইসব৷ গত পাঁচ বছরে মোদীর বিজেপি সরকার কি করেছে, সম্ভবত তারই ফিরিস্তি থাকবে৷ তবে মূল ইস্যু সেটা হবে না৷ মূল ইস্যু হবে রাজ্যভিত্তিক৷ যেমন, উত্তরপ্রদেশে প্রশাসনিক ইস্যু, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে হয়ত সেটা হবে না৷ ওড়িশায় হবে অন্য ইস্যু৷ দক্ষিণী রাজ্যগুলিতে আলাদা ইস্যু৷ মুশকিল হচ্ছে বিরোধী জোট সুসংহতভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না৷''
নির্বাচনি প্রচার সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উদয়ন বন্দোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কংগ্রেসের বাড়তি কোনো ইস্যু নেই৷ যেসব ইস্যুকে ভিত্তি করে দাঁড়িয়েছিল, যেমন, কৃষক আন্দোলন, বেরোজগারি, মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে আর এগিয়ে যেতে পারছে না কংগ্রেস৷ জঙ্গি বিরোধী জাতীয়তাবাদ এমন একটা জায়গায় রয়েছে, যেটাকে নাড়ানোর সাধ্য নেই কংগ্রেসের৷ অতি সম্প্রতি পাঁচটি রাজ্য বিধানসভার ভোট হয়ে গেল৷ কংগ্রেস রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে ক্ষমতা দখল করেছে ঠিকই, কিন্তু পুলওয়ামার ঘটনার পরে পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে ঐ তিনটি রাজ্যের সংসদীয় ভোটে বিজেপি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে৷''
ভোটের সময়সূচিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার খুশি নয় কেন? রমজান মাসে ভোটপর্ব চলবে তাতেও আপত্তি কেন? উত্তরে অধ্যাপক বন্দোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সাত দফা ভোট হচ্ছে৷ প্রচুর কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে৷ ফলে তৃণমূল কংগ্রেসের ওপর একটা মানসিক চাপ থাকবে৷ দ্বিতীয়ত, তৃণমূলের মধ্যে একটা ডামাডোল তৈরি হয়েছে৷ এ বেরিয়ে যাচ্ছে, ও বেরিয়ে যাচ্ছে৷ জনসমর্থনও পড়তির দিকে৷ ফলে সেটা তৃণমূলের চিন্তার কারণ৷ আর রমজান মাসে ভোটের আপত্তি ধোপে টেকে না একেবারেই৷ রমজান মাসে এর আগেও বহুবার হয়েছে৷ মুসলিম ভোট ব্যাংকের দিকে তাকিয়েই এসব কথা বলছে তৃণমূল৷ রমজান মাসে মুসলিমরা কি কাজ করেন না? সব কাজই করেন৷ বাড়িতে বসে থাকেন না৷ এটা মুসলিমদের একটা বাত্সরিক রীতি, যা তাঁরা পালন করেন৷ কাজেই ভোট দিতে অসুবিধা হবে কেন?''
এক জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, পাকিস্তানে ঢুকে ভারতের বিমান অভিযানে জঙ্গি ঘাঁটিগুলি গুড়িয়ে দিয়ে মোদী যে পরাক্রম দেখিয়েছেন, তাতে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েছে৷ ৫১ হাজার ভোটারের মতামত যাচাই করে দেখা গেছে, মোট ৫৪৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি একা পেতে পারে ২২০টি আসন এবং বিজেপি জোট পেতে পারে ২৬৪টি আসন৷ পাশাপাশি কংগ্রেসের ইউপিএ জোট পেতে পারে কমবেশি ১৪১টি আসন৷ কাজেই সরকার গঠনে আঞ্চলিক দলগুলির গুরুত্ব বাড়বে সন্দেহ নেই৷