1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তিন তালাক নিষিদ্ধে এখনও বাধা

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
৩ জানুয়ারি ২০১৮

নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার মুসলিম নারীদের বিবাহের অধিকার সুরক্ষা বিলটি সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস করালেও বাধা রয়ে গেছে উচ্চকক্ষ রাজ্যসভাতে৷ বুধবার বিরোধী পক্ষ বিলটি সংসদীয় কমিটিতে পাঠাবার দাবি জানায়৷

https://p.dw.com/p/2qIC2
ছবি: Indranil Mukherjee/AFP/Getty Images

সরকার পক্ষ বলেছে তা সম্ভব নয়৷ এই নিয়ে সংসদে তুমুল হৈচৈ৷ উচ্চকক্ষে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই৷ পাশাপাশি মুসলিম মহিলাদের পুরুষসঙ্গী ছাড়াই হজে যাবার অনুমতি দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷

মুসলিম মহিলাদের বিবাহ সুরক্ষা অধিকার বিল ২০১৭ সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস হলেও উচ্চকক্ষ রাজ্যসভাতে আজ (বুধবার) কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলি বিলের সংশোধনী চেয়ে বিলটি সংসদের যৌথ কমিটিতে পাঠাবার দাবি জানায়৷ সরকার পক্ষ তাতে রাজি নয়৷ কারণ হিসেবে বিজেপি সরকারের তরফে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, গত ২২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট তাৎক্ষণিক তিন তালাক অবৈধ এবং অসাংবিধানিক বলে রায় দেন৷ পাঁচ জন বিচারপতির বেঞ্চের দুজন তিন তালাক প্রথাকে অবৈধ না বললেও বলেন অন্যায্য৷ শীর্ষ আদালতের রায়ে বলা হয়, তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথা রদ করার জন্য ছয় মাসের মধ্যে আইন প্রণয়ন করতে হবে সরকারকে৷ সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে ২২ ফেব্রুয়ারি৷ কাজেই বিল পাসে আর দেরি করা সম্ভব নয়, বলেন অর্থমন্ত্রী জেটলি৷ এই নিয়ে সরকার ও বিরোধীদলগুলির মধ্যে শুরু হয় তুমুল হৈ হট্টগোল ও চিৎকার চেঁচামেচি৷ শেষ পর্যন্ত সভার অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়৷

‘সুপ্রিম কোর্ট যেখানে বলেছে, তাত্ক্ষণিক তালাক হবে না, তখন এই বিল আনার দরকারটা কি’

বিলে বলা হয়, তাৎক্ষণিক তিন তালাক জামিন অযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ৷ এজন্য তিন বছর পর্যন্ত জেল এবং জরিমানা হতে পারে৷ স্ত্রীকে খোরপোশ দিতে হবে এবং নাবালক সন্তানরা থাকবে মায়ের হেফাজতে৷

তিন তালাক আইনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মোদী মুসলিম মহিলাদের আত্মসম্মান রক্ষায় আরেকটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ চলতি বছর থেকে মুসলিম মহিলারা পুরুষসঙ্গী ছাড়াই হজ যাত্রায় যেতে পারবেন৷ পুরুষ অভিভাবক বা মেহরাম ছাড়াই ৪৫ বছরের বেশি বয়সের যেসব মুসলিম মহিলা হজ যাত্রায় যেতে চান তাঁদের সবাইকে অনুমতি দেওয়া হবে৷ প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর মাসিক বেতার বার্তা ‘মন কি বাত' অনুষ্ঠানে বলেন, মুসলিম মহিলারা পুরুষসঙ্গী ছাড়া হজ যাত্রায় যেতে পারেন না, এটা কেমন কথা? এই নিষেধাজ্ঞা আর চলতে দেওয়া যায়না৷ এটা মুসলিম মহিলাদের আত্মবিশ্বাসের পরিপন্থি৷ ইসলামি দেশেও এই নিয়ম নেই৷ তাই যেসব মুসলিম মহিলা হজে যেতে ইচ্ছুক তাঁদের সবাইকে বিশেষ শ্রেণিতে ফেলে ছাড়পত্র দেওয়া হবে৷

মুসলিম মহিলারা দীর্ঘদিন ধরে নানা কষ্ট ভোগ করে এসেছেন এটা কারো অজানা নয়৷ এবছর দেশের ১,৩০০ মুসলিম মহিলা বিনা পুরুষসঙ্গীতে হজে যাবার জন্য আবেদন করেছেন৷ চলতি নিয়ম অনুসারে, হজ যাত্রার আবেদনকারীদের বাছাই করার জন্য লটারির ব্যবস্থা আছে৷ কিন্তু পুরুষসঙ্গীবিহীন মুসলিম মহিলাদের ক্ষেত্রে সেটা হবে না৷

পর্যবেক্ষকদের মতে, উচ্চকক্ষে তিন তালাক বিল নিয়ে বিরোধী দলগুলির ভূমিকা দ্বিচারিতা বলা চলে৷ কারণ সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিরোধীদলগুলি বিলটিকে নীরব সমর্থন জানাবার পর উচ্চকক্ষে হৈচৈ করার কোনো অর্থ হয়না৷ কারণ বিরোধী পক্ষের মতে, বিলটি নিয়ে মুসলিম ল-বোর্ড এবং মুসলিম মহিলা সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি৷ কিন্তু সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিজেপি জোট সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তা পাস করাতে অসুবিধা হয়নি৷ এবার সংসদের উচ্চকক্ষে পাস করাতে পারলেই তা আইনে পরিণত হবে৷ কিন্তু উচ্চকক্ষে বিজেপি সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই৷ তাত্ক্ষণিক তিন তালাক ফৌজদারি অপরাধের তকমা দেওয়া নিয়ে অনেকের আপত্তি৷ বলা হয়, স্বামীকে যদি জেলে পাঠানো হয়, তাহলে খোরপোশ দেবে কে? সরকারের বক্তব্য, পুলিশ জামিন না দিলেও আদালত দিতে পারে৷ খোরপোশের পরিমাণও ঠিক করবেন আদালতই৷

‘মুসলিম মহিলাদের ক্ষমতায়নের একটা বড় দিক এটা’

তিন তালাক শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে বলে যে আইন বিজেপি সরকার আনছেন এবং মুসলিম মহিলারা পুরুষসঙ্গী ছাড়াই হজে যেতে পারবেন, এটা কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে নজরুল হাফিজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, মোদীজী এইসব নিয়ে রাজনীতি কেন করছেন, বোধগম্য হচ্ছেনা৷ এতে মুসলিম মহিলাদের কি কল্যাণ হবে তাও বুঝতে পারছিনা৷ সরকার বিল আনলেন সংসদে৷ তিন তালাকে জেল খাটতে হবে৷ সুপ্রিম কোর্ট যখন বলে দিয়েছে তাত্ক্ষণিক তিন তালাক চলবে না, তখন স্বামীকে তিন বছর জেল খাটতে হবে কীভাবে৷ সুপ্রিম কোর্ট যেখানে বলেছে, তাত্ক্ষণিক তালাক হবে না, তখন এই বিল আনার দরকারটা কি? মোদীজী যদি সত্যিই মুসলিম মহিলাদের কল্যাণ চান তাহলে মুসলিম মহিলাদের জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে সাত শতাংশ রিজার্ভেশন দিচ্ছেন না কেন? ইন্দোনেশিয়ার মত অন্যান্য দেশে ৪৫ শতাংশ রিজার্ভেশন আছে৷ তা নয়, সবটাই রাজনীতি৷ আর মুসলিম মহিলাদের পুরুষসঙ্গী ছাড়াই হজে যাবার সরকারি অনুমতি প্রসঙ্গে নজরুল হাফিজ ডয়চে ভেলেকে বললেন, পুরুষসঙ্গী নেবার কারণ মহিলাদের নিরাপত্তা৷ যাত্রাপথে নানারকম বাধাবিপত্তি আসতে পারে তাই৷ তবে শরিয়ত নিয়মে যেতে নিষেধ করা হয়নি৷ চারজন মুসলিম মহিলা একসঙ্গে যেতে চাইলে আপত্তির কী আছে? দেখুন ২২ লক্ষ মহিলা স্বামী ছাড়া থাকেন৷ তারমধ্যে দুই লাখ মুসলিম৷ ব্যাপারটা তা নয়৷ মোদীজী দেখাতে চাইছেন মুসলিম মহিলাদের জন্য তিনি কত কিছু করছেন৷

‘স্বামী যদি জেলেই গেলো, তাহলে টাকা দেবে কে?’

সমাজকর্মী রবিশংকর ঘোষ ডয়চে ভেলের কাছে এবিষয়ে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করে জানালেন, তিন তালাক প্রথা রদ হওয়া উচিত৷ মুসলিম মহিলাদের ওপর এই প্রথা এক অত্যাচার৷ আমি মনে করি, এটা ফৌজদারি অপরাধই৷ এখানে বৈষম্য অচল৷ একই দেশে আইনের ছাতার নীচে একই আইন হওয়া উচিত৷ কাজেই সরকার যে পদক্ষেপ নিতে চলেছেন তা যথার্থ৷ মুসলিম মহিলাদের ক্ষমতায়নের একটা বড় দিক এটা৷

নারীবাদী শাশ্বতী ঘোষের মতে, তাত্ক্ষণিক তিন তালাককে ক্রিমিনালাইজড করে স্বামীকে তিন বছর জেলে পাঠানো, এটাতে আপত্তি আছে৷ ডয়চে ভেলেকে বললেন, স্বামীকে জেলে পাঠালেও সমাজ তাঁকে তালাক দেওয়া দম্পতিই হিসেবে দেখবে৷ মেয়েটি আবার বিয়ে করতে চাইলে তাঁকে নিকাহ হালালার মধ্য দিয়েই যেতে হবে৷ তাতে মেয়েটির কোনো সুরাহা হচ্ছেনা৷ আর স্বামী যদি জেলেই গেলো, তাহলে টাকা দেবে কে? এইসব কারণে শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিই নয়, অনেক মুসলিম মহিলা সংগঠনও চায়, এই বিল নিয়ে আরও আলোচনার হোক৷