নারী গর্ভ ভাড়া লাভজনক শিল্প
২ আগস্ট ২০১৩গর্ভ ভাড়া দেবার লাভজনক বাণিজ্যের বিশাল বাজার যেহেতু ভারতে অনিয়ন্ত্রিত, তাই এতে থাকে নানা অনিয়ম ও অনৈতিক পন্থা, বিশেষ করে গর্ভ ভাড়া দেয়া মায়ের স্বাস্থ্য ও অন্য অধিকার, শিশুর লিঙ্গ নির্বাচন, গর্ভজাত শিশুর স্বাস্থ্য, ভবিষ্যত ও নাগরিকত্ব ইস্যুর নানা অসুবিধা ও জটিলতা৷
এই অনিয়ম দূর করতে ২০০৮ সালের অ্যাসিস্টেট রিপ্রোডাকটিভ টেকনোলজি সংক্ষেপে এআরটি বিলের প্রথম খসড়াটি সংশোধন করা হয় ২০১০ সালে৷ সেটির চূড়ান্ত অনুমোদন আইন মন্ত্রণালয় থেকে না আসায়, বিলটি আরো বিশদে খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করেছে এক বিশেষজ্ঞ কমিটি৷ গর্ভ ভাড়া দেয়া মায়ের এবং তাঁর গর্ভজাত সন্তানের স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যত সুরক্ষিত রাখার সামাজিক তথা আইনি অধিকার সুনিশ্চিত করতে আরো কী কী করণীয় তার সুপারিশ করবে ঐ কমিটি, যার ভিত্তিতে বিলের একটি নতুন খসড়া তৈরি করা হবে৷ এজন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে৷ জানা গেছে, ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ভারতের চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ, পরিকল্পনা কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্বয়ংসেবক সংস্থাগুলি এ সংক্রান্ত নতুন এই বিলের খসড়া চূড়ান্ত করবে৷ এক্ষেত্রে শলা-পরামর্শের মধ্যে সমন্বয়বিধান করবে পরিকল্পনা কমিশন৷
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের পুরানো নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে, গর্ভ ভাড়া দেবার আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষ, অর্থাৎ যিনি শুক্রাণু দেবেন এবং যে মহিলার গর্ভে তা প্রতিস্থাপন করা হবে, তাঁদের মধ্যে চুক্তি থাকবে৷ সেখানে শুধু মহিলার নয়, মহিলার স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের সম্মতি থাকবে হবে৷ গর্ভধারণ থেকে প্রসব পর্যন্ত যাবতীয় খরচ বহন করতে হবে ডোনার বা দাতা ব্যক্তিকে৷ প্রসবের পর সন্তানকে তুলে দিতে হবে সেই দম্পতির হাতে যাঁরা গর্ভ ভাড়া নিয়েছেন৷ এই কাজ বাণিজ্যিকভাবে করা নিষিদ্ধ৷
সন্তান জন্মের আগেই যদি নিঃসন্তান ঐ দম্পতির একজনের মৃত্যু হয় বা তাঁদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় এবং সেক্ষেত্রে যদি কেউ নিতে না চায়, তাহলে সন্তান পালনের আর্থিক সংস্থান রাখা হবে৷ শুধু তাই নয়, গর্ভ ভাড়া দেয়া মায়ের স্বাস্থ্য বিমা করে দিতে হবে৷
গর্ভ ভাড়া নিঃসন্তান দম্পতিদের বড় সান্ত্বনা৷ বিভিন্ন দেশে কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থার সুবিধা আছে৷ কিন্তু ভারতে এর চাহিদা ক্রমশই বাড়ছে৷ কারণ এখানে গরিব মায়েরা কম খরচে সহজলভ্য৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এরজন্য খরচ হয় যেখানে ৪০-৪৫ লাখ টাকা ভারতে সেখানে খরচ হয় ১৫-২০ লাখ টাকা৷ ডাক্তারি খরচ বাদ দিয়ে গর্ভ ভাড়া দেয়া মা বা তাঁর পরিবার পায় তিন থেকে চার লাখ টাকা৷
তবে ভাড়া নেয়া গর্ভজাত সন্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে আইনি জটিলতা এখনো কাটেনি৷ কয়েক বছর আগে এক নিঃসন্তান জার্মান দম্পতিকে এক গুজরাটি মহিলা গর্ভ ভাড়া দিয়েছিলেন৷ যমজ সন্তানের জন্মের পর শিশুর নাগরিকত্ব নিয়ে আইনি জটিলতার নিষ্পত্তি এখনো হয়নি৷ গুজরাট হাইকোর্ট যমজ শিশুকে দেন ভারতীয় নাগরিকত্ব৷ কারণ ভারতে দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন নেই৷ জার্মান দম্পতি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন৷ অবশ্য ঐ যমজ শিশুকে যাতে জার্মানিতে পাঠানো যায়, তার জন্য দু'দেশের সরকার সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে৷